• NEWS PORTAL

  • বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫

Drama: Jamai Bou Chor
Drama: Jamai Bou Chor

বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে ঢাকা: হারিয়ে গেছে ৬০ শতাংশ জলাধার, তাপ বেড়েছে ৫ ডিগ্রি

প্রকাশিত: ২০:১৩, ২৭ জুলাই ২০২৫

আপডেট: ২০:১৪, ২৭ জুলাই ২০২৫

ফন্ট সাইজ
বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে ঢাকা: হারিয়ে গেছে ৬০ শতাংশ জলাধার, তাপ বেড়েছে ৫ ডিগ্রি

১৯৮০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত গত ৪৪ বছরে ঢাকার ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা বেড়েছে ৭ গুণ, ভূমির তাপমাত্রা বেড়েছে ৩ থেকে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং হারিয়ে গেছে প্রায় ৬০ শতাংশ জলাধার। গত ৪৪ বছরের স্যাটেলাইট চিত্র ও নগরের ভূমির তাপমাত্রা বিশ্লেষণ ঢাকার পরিবেশগত অবক্ষয়ের এই চিত্র তুলে ধরেছে চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ। অব্যবস্থাপনা এবং অনিয়ন্ত্রিত নগরায়নই এই সংকটের মূল কারণ বলে এই গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

রবিবার (২৭ জুলাই) ঢাকাস্থ হলিডে ইনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ‘প্রকৃতিবিহীন ঢাকা? প্রাকৃতিক অধিকারভিত্তিক টেকসই নগর ভাবনার পুনর্বিচার’  শীর্ষক এই গবেষণা তথ্য প্রকাশ করা হয়। চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ-এর প্রধান নির্বাহী এম. জাকির হোসেন খানের নেতৃত্বে এই গবেষণায় কাজ করেছেন সাবরিন সুলতানা ও মো. ফুয়াদ হাসান।

গবেষণা প্রতিবেদনে ঢাকার বৃক্ষ আচ্ছাদিত অঞ্চলের বিষয়ে জানানো হয়, ১৯৮০ সাল থেকে ঢাকার অর্ধেক গাছ বিলুপ্ত হয়েছে-  সবুজ আচ্ছাদন কমে এসেছে ২১.৬% থেকে মাত্র ১১.৬%-এ। বর্তমানে  ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় (ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ) জনপ্রতি সবুজ জায়গার পরিমাণ মাত্র ৩.৪৪ বর্গমিটার। যেখানে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে আছে ৪.২৩ বর্গমিটার এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে এটি ২.৩৩ বর্গমিটার।  শহরের বেশিরভাগ এলাকাই মাথাপিছু ৯ বর্গমিটার সবুজ জায়গার আন্তর্জাতিক মান অর্জনে ব্যর্থ। 'ট্রি-ডেজার্ট' অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত: আদাবর, রামপুরা, কাফরুল, বংশাল ও ওয়ারী- যেখানে এখন গাছ প্রায় নেই বললেই চলে।

এতে জলাধার সংকটের চিত্র তুলে ধরে বলা হয়, ১৯৮০ থেকে এ পর্যন্ত ঢাকার ৬০% জলাধার বিলুপ্ত হয়েছে- সর্বমোট জলাধার এখন শহরের মাত্র ৪.৮% এলাকাজুড়ে। ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় (ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ) জনপ্রতি জলাধারের পরিমাণ মাত্র ১.৪৩ বর্গমিটার। যেখানে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে আছে ১.৭৯ বর্গমিটার এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে এটি ০.৯৭ বর্গমিটার। প্রায় জলশূন্য এলাকা: সূত্রাপুর, মিরপুর, গেন্ডারিয়া, কাফরুল। ৫০ টির মধ্যে কেবল ৬টি থানা ন্যূনতম জলাধার মান পূরণ করতে পারছে।

গবেষণাটিতে তীব্র তাপদাহের হুমকি তুলে ধরে বলা হয়, শহরের ভূ-তাপমাত্রা (LST) বেড়েছে ৩–৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বর্তমানে ঢাকার কোন এলাকাই ৩০°C-এর নিচে নেই। গরমের হটস্পট: শ্যামপুর, হাজারীবাগ, তেজগাঁও, রামপুরা ও দারুসসালাম- সব এলাকায় ৩২°C-এর ওপরে তাপমাত্রা। আগে ঠান্ডা থাকা এলাকাগুলোর অবস্থাও এখন বিপজ্জনক- ঢাকায় আর কোনো জলবায়ু আশ্রয়স্থল অবশিষ্ট নেই।

অপরিকল্পিত নগরায়নের চিত্র তুলে ধরে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এই সময়ে ঢাকার ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা বেড়েছে সাত গুণ, যা এখন শহরের অর্ধেকের বেশি জায়গা দখল করে নিয়েছে। ৮৫% বা তার বেশি গঠিত অঞ্চল: আদাবর, বংশাল, সূত্রাপুর, ওয়ারী, কলাবাগান, ধানমণ্ডি, শ্যামপুর, কোতয়ালী, চকবাজার, পল্টন, মিরপুর, রামপুরা। ৫০টি থানার মধ্যে ৩৭টি ইতোমধ্যেই নিরাপদ নির্মাণ সীমা অতিক্রম করেছে।

এ ছাড়া উত্তরখান ও তুরাগ শহরের প্রান্তিক অঞ্চল হওয়ায় এখনও কিছুটা সবুজ অঞ্চল ও জলাধার ধরে রেখেছে। তবে ওয়ারী, বংশাল, কোতোয়ালীসহ ঘনবসতিপূর্ণ কেন্দ্রীয় এলাকাগুলো প্রায় সম্পূর্ণ প্রকৃতি-বিচ্ছিন্ন বলেও প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়।

গবেষণার বিষয়ে চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের প্রধান নির্বাহী এম. জাকির হোসেন খান বলেন, “২০৩৫ সালের মধ্যে ঢাকায় ২.৫ কোটি মানুষ বসবাস করবে। বর্তমানে গাছপালার হার ১১.৬%, জলাধার ১-২%, আর তাপমাত্রা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে এবং  ঢাকার  প্রকৃতির ধ্বংসের মুখোমুখি।সিঙ্গাপুর ও সিওলের মতো নগরীগুলো গাছপালার পরিমাণ ৩০-৪৭% বজায় রাখে। এমনকি দিল্লি ও জাকার্তা-ও ঢাকার চেয়ে এগিয়ে। শুধু করাচি ঢাকার নিচে- আর আমরাও সে পথেই এগিয়ে চলেছি।"

তিনি আরও বলেন, "ঢাকাকে করাচির পরিণতি থেকে রক্ষা করতে হলে, সিঙ্গাপুরের মতো প্রকৃতি-ভিত্তিক মডেল গ্রহণ করতে হবে, তবে সেটি স্থানীয় জ্ঞান ও সাম্যতার ভিত্তিতে। প্রকৃতিকে ফিরে পাওয়ার লড়াই এখন শুধুই ‘সবুজ সাজসজ্জা’ নয়, এটি একটি মৌলিক কাঠামোগত পরিবর্তন- যেখানে প্রকৃতির অধিকারই শহর টিকে থাকার মূল ভিত্তি হতে হবে। রাষ্ট্র ও জনগণকে প্রকৃতির অভিভাবক হতে হবে, কর্তৃত্ববাদী নয়।”

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. রিফ্ফাত মাহমুদ বলেন, "ফ্লাইওভারগুলোকে উল্লম্ব বাগানে রূপান্তরিত করা, যুবসমাজকে পরিবেশ শিক্ষার মাধ্যমে সম্পৃক্ত করা, এবং সম্প্রদায়ভিত্তিক স্টিওয়ার্ডশিপ মডেলগুলি বাস্তবায়ন করা ঢাকা শহরে একটি টেকসই নগর পরিবেশ তৈরির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এই উদ্যোগগুলি শুধু সবুজ এলাকা বৃদ্ধি করে না, বরং প্রকৃতির প্রতি সমষ্টিগত দায়িত্ববোধের উৎসাহ প্রদান করে, যা দীর্ঘমেয়াদী পরিবেশগত স্থিতিস্থাপকতা তৈরি করতে সহায়ক।"

বিভি/কেএস/টিটি

মন্তব্য করুন: