• NEWS PORTAL

  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

সমুদ্র দিবসে সরকারি টাকায় সামুদ্রিক প্রাণী হত্যার আয়োজন!

আগামীকাল বিশ্ব সমুদ্র দিবস

প্রকাশিত: ২২:৫৭, ৭ জুন ২০২২

আপডেট: ২৩:০১, ৭ জুন ২০২২

ফন্ট সাইজ
সমুদ্র দিবসে সরকারি টাকায় সামুদ্রিক প্রাণী হত্যার আয়োজন!

আগামীকাল বিশ্ব সমুদ্র দিবস। দেশে প্রথমবারের মতো যৌথভাবে এই দিবস পালন করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সেইফ, নৌ পরিবহন অধিদফতর ও বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট।

জানা গেছে, কোটি টাকার বাজেটে নেওয়া এই  আয়োজনে অংশ নিতে সমুদ্র পরিবেশ ও অর্থনীতি সংশ্লিষ্টদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য ভাড়া করা হয়েছে ফাইভ স্টার হোটেল। যার ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সেইফ নামে একটি ইভেন্ট মেনেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানকে।

দিবসটি উপলক্ষে কক্সবাজার সৈকতের লাবনী পয়েন্টে বুধবার সকাল পৌনে আটটা থেকে শুরু হবে ‘বঙ্গবন্ধু বঙ্গোপসাগর উৎসব ২০২২’। দিনভর বিভিন্ন আয়োজনের মধ্যে থাকবে সৈকত পরিচ্ছন্নতা অভিযান, নীল অর্থনীতি নিয়ে সেমিনার, সৈকত ভলিবল ও সার্ফিং। কিন্তু অন্য আয়োজনগুলোকে স্বাগত জানালেও বিচে ভলিবল খেলা নিয়ে সমূদ্র বিশেষজ্ঞ, সামুদ্রিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র সংরক্ষণকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলো বিরূপ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছেন।

এই বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওশেনোগ্রাফি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. কেএম আজম চৌধুরী বলেন, ‘বিচ ভলিবল ট্যুরিজমের জন্য ভালো হতে পারে কিন্তু সমূদ্র দিবসে এই ধরনের কর্মসূচি বড় বেমানান। বিচ ভলিবলের মাধ্যমে কাকড়া এবং খালি চোখে না দেখা বালির নিচে অনেক প্রাণী মারা যাবে। এ ধরনের অনুষ্ঠান কোনোভাবেই সমর্থন করা যায় না।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ওশেনোগ্রাফি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ মোসলেম উদ্দীন মুন্না বলেন, সমুদ্র দিবসে আয়োজন হওয়া উচিত সমূদ্র রক্ষার এবং এর টেকসই ব্যবহারের পথ দেখানোর। কিন্তু বিচ ভলিবলের মাধ্যমে হৈ হুল্লোড় করে  সামূদ্রিক পরিবেশ নষ্ট করা–খুব দুঃখজনক কাজ। এ ধরনের কর্মসূচি কোনোভাবে কাম্য নয়।  

সামুদ্রিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র সংরক্ষণকারী সংগঠন সেভ আওয়ার সি’র পরিচালক (ওশান এক্সপ্লোরার) এসএম আতিকুর রহমান বলেন, ‘সমূদ্র দিবস উপলক্ষে নতুন জেনারেশনকে সমূদ্র সুরক্ষা এবং এর টেকসই ব্যবহারের দীক্ষা দেওয়া জরুরি। যাতে তারা সমূদ্রের বাস্তব শিক্ষা এবং প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সমূদ্র সম্পদকে কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে। আমাদের পুরোনো ধ্যান ধারনার সমূদ্র জীববৈচিত্র ধ্বংসের উৎসব থেকে বিরত থাকতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘প্রোগ্রামের চিত্রে ডলফিনের ছবি দেওয়া হয়েছে। প্রোগ্রামের লোকদেরকে ডলফিন দেখানোর জন্য নিয়ে যাওয়া একটি বড় বিনোদন হতে পারতো। তাছাড়া এই দিবসে জেলের জীবন বৃত্তান্ত নিয়ে তথ্য চিত্র নির্মাণ, উপকূলে ম্যানগ্রোভের চারা রোপন এবং সাগর দূষণের উৎসের খোঁজে একটা কর্মসূচি দেওয়া যেত।

বিচ ভলিবল না হয়ে স্কুবা অথবা স্নোরকলিং কর্মসূচি অথবা  ওশানোগ্রাফি ছাত্র/ছাত্রীদের নাবিক প্রশিক্ষণের মতো কর্মসূচি হাতে নিলে ছাত্র/ছাত্রীরা তাদের গবেষণা কর্মে কাজে লাগাতে পারতো বলে মনে করেন সামূদ্রিক প্রতিবেশ সংরক্ষণে কাজ করা এই পরিবেশবাদী।

প্রোগ্রামের নিমন্ত্রণ কার্ডে দেওয়া ফোন নাম্বারে কল করলে রিসিভ করেন  সেইফ বাংলাদেশের প্রতিনিধি মশিউর খন্দকার। তিনি সংগঠনটির মিডিয়া কো-অর্ডিনেটরের সঙ্গে কথা বলার জন্য মোবাইল ধরিয়ে দেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বাংলাভিশনকে বলেন, সমূদ্র সংরক্ষণের বিষয়ে জনগণকে অনেক বেশি সম্পৃক্ত করতে বিচে ভলিবল খেলার আয়োজন করা হয়েছে। বিচে এমনিতেই প্রতিদিন ভলিবল খেলা হয়। তখনও তো  ক্ষতি হয়। তবে আমরা পরিবেশের কথা বিবেচনা করেই খেলবো যাতে কোনো ক্ষতি না হয়।

বিচে ভলিবল খেলায় পরিবেশ অধিদফতরের দেওয়া নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কেন এই আয়োজন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পরিবেশকে সঙ্গে নিয়েই এই আয়োজন। আপনারা আসুন, দেখুন। যদি কোনো প্রাণী মারা যায়, তখন আমাদের বলবেন । আগামীবার থেকে এমন আয়োজন করবো না।’

এ বিষয়ে জানতে বাংলাদেশ ওশনোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দরকে একাধিকবার ফোন করে পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য, কক্সবাজার সমূদ্র সৈকত পরিবেশ মন্ত্রণালয় ইসিএ (ইকোলোজিক্যাললি ক্রিটিকাল এরিয়া) এলাকা ঘোষণা করেছে। ইসিএ এলাকায় পর্যটকদের নানা কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ছোট ছোট প্রাণীদের স্বার্থে সেখানে ভলিবল বা ফুটবল খেলায়ও রয়েছে নিষেধাজ্ঞা।

বিভি/এনএ

মন্তব্য করুন: