সাংবাদিকতা পেশার মর্যাদা রক্ষার দায়িত্ব সাংবাদিকদেরই
অন্যায়কে শোধরাতে হয় ন্যায় দিয়ে

সংগৃহীত ছবি
“ড.ইউনূসের জন্য বিবৃতি নতুন কিছু না, টাকা দিলেই হয়ে যায়',‘টাকা দিলে নোবেল পুরস্কার পাওয়া যায়”। এই দুটি আলাদা বক্তব্য দু’জন সাংবাদিকের। তারা শুধু সাংবাদিক নন, সম্পাদক পদ মর্যাদার অধিকারী। তবে দু’জনের বক্তব্যে দারুণ মিল আছে। দু’জনেই রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে বলেছেন এসব কথা । তাই তাদের বক্তব্য নিয়ে আলোচনা হওয়া স্বাভাবিক। এ নিয়ে রয়েছে নানা মুনির নানামত।
বর্তমান বিশ্বে ড.ইউনূসের চাইতে ধনী লোক আছেন অযুত-নিযুত। তারা টাকা নিয়ে নোবেল পুরস্কার কিংবা তাদের পক্ষে বিবৃতির জন্য প্রচেষ্টা করছেন কিনা? এমন খবর আমাদের জানা নেই। নোবেল পুরস্কার নিয়ে এমন খবর কোথাও প্রচার হয়েছে তাও শুনিনি। ফলে মনে হয়-দেশের সাংবাদিকরা কাউকে খুশি করার জন্য এমন বক্তব্য দিচ্ছেন। কাউকে খুশি করার আগে মানুষ নিজেই খুশি হতে চায়।
অনেকে মনে করেন, এমন সুযোগ থাকলে সম্পাদকদ্বয় নিজেরাই টাকা নিয়ে হাজির হতেন, নোবেল পুরস্কার কিংবা নিজের পক্ষে বিবৃতি আদায়ের জন্য। তারাও ভাল করে জানেন তা সম্ভব নয়, তাই বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর প্রচেষ্টা। পছন্দের মানুষকে খুশি করতে চাইছেন । অনেকে এসব বক্তব্য দায়িত্বজ্ঞানহীন মনে করলেও তাদের তা মনে হয় না। আশার কথা, এর বিপরীতে মর্যাদাবান সাংবাদিকও আছেন অনেকে। যারা সাংবাদিকতা পেশাকে সমৃদ্ধ করছেন নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও। তবে ভাল-মন্দ বিচারের মালিক জনগণ। আখেরে তারাই বড় পর্যবেক্ষক-সাংবাদিক। তাদের যোগে সংবাদ মাধ্যম পরিণত হয় গণমাধ্যমে।
দেশে ভালো কথা বলার লোকের অভাব নেই। অভাব শুধু সেই কথামতো কাজ করার। নাগরিকদের কেউ পোষমানা সাংবাদিক চায় না। সাংবাদিকদের কোনো পক্ষ নাই। অনেকে অন্যায় করেন। আবার বুক ফুলিয়ে চলেন। তারা এটাও জানেন না, অন্যায় করে লজ্জিত না হওয়াটাও অন্যায়। সবাই যদি বিচারের ভার নিজের হাতে তুলে নেন। তাহলে সমাজ আবার বর্বর যুগে ফিরে যাবে। তাই আইন-আদালতের দরকার হয়েছে মানুষকে সভ্য করে তোলার জন্য । এর ভাল-মন্দ রচিত হয় দেশ ভেদে ব্যবহারের উপর ।
ব্যাক্তি হিসেবে একজনের সাথে মিথ্যা বললে সেটি না হয় খাটে। আর যখন আপনি সাংবাদিক হিসেবে গণমাধ্যমে একটি বিষয় তুলে ধরছেন, সেটি যদি মিথ্যা হয় কোটি কোটি মানুষের সামনে নিজে হেয় হচ্ছেন। তার নিশ্চিত ফল ভোগ করতে হবে মিথ্যাবাদীকে। সেটি আজ হোক কিংবা কাল। পরকাল আপনি বিশ্বাস করুন বা নাই করুন সেখানে অপেক্ষা করছে নিশ্চিত শাস্তি । সাথে কলংকিত করছেন গণমাধ্যমকে। অন্যায়কে অন্যায় দিয়ে নয়, শোধরাতে হয় ন্যায় দিয়ে।
ভূত যেমন জলাশয়ের কাছে থেকে রাত-বিরাতে কোনো পথচারীকে একা পেলে পথ ভুলিয়ে অন্য পথে নিয়ে যায়, একইভাবে কিছু মানুষ নিজেদের গোষ্ঠীস্বার্থ রক্ষার্থে পাঠককে বিভ্রান্ত করে,পথ ভুলিয়ে প্রায়ই অন্য পথে নিয়ে যায়। তাদের কারণেই দেশ ইমেজ সংকটে পড়ে। সংবাদপ্রবাহের স্বাভাবিক গতিপথ যখন রুদ্ধ হয়ে যায়, তখন অস্বাভাবিক পথ কিংবা গুজব অত্যন্ত শক্তিশালী হয়ে পড়ে। যা কারো কাম্য নয়। দেশ-জাতির জন্যও মঙ্গলজনক নয়। আজ আমরা ন্যায়-অন্যায় ভাবছিনা বলে আর্থিক উন্নতির পরও শান্তি-স্বস্থিতে আছি কয়জন? সেটি নিয়ে ভাববার সময় নেই অনেকের।
লেখক : চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান, বাংলাভিশন
মন্তব্য করুন: