সাকিবের সাক্ষাৎকারের রিভিউ!

সাকিব আল হাসান (ফাইল ছবি)
পুরো সাক্ষাৎকারটি দেখলাম। প্রতিটি শব্দ খেয়াল করে শুনলাম। দেখে-শুনে কিছু কথা বলার খুব তাড়না জেগেছে। আর তা হলো—এ মানুষটি কতোটা প্রফেশনাল চিন্তাভাবনা করেন। কতোটা স্পষ্ট ভাষায় সত্যতা মুখের উপর বলে দিতে পারেন। দলের স্বার্থে সবকিছু নিজেও করতে পারেন, অন্যকেও করাতে উদগ্রীব। নেতা তো এমনই হতে হয়। নেতার মধ্যে সাহস থাকবে, নেতার মধ্যে দুরদর্শিতা থাকবে, নেতার মধ্যে সবার থেকে সেরাটা বের করিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা থাকবে। সাকিব তার সবটুকুই! মাঝে মাঝে মনে হয়— আমাদের কপাল ভালো যে, আমরা তাঁর পরিপক্ব মেধার ক্রিকেটার পেয়েছি।
লাস্ট কয়েকদিন কতো সমালোচনার তিরে তাকে বিদ্ধ করার চেষ্টা করা হলো, আর উনি তাদের সহজসরল বলে সম্মোধন করে গেলেন স্বভাবসিদ্ধ মুচকি হেসে। এর ফাঁকে আরেকটা কথা বলে নিই। তার হাসিতে কিন্তু নয়ন জুড়ায়, তারপর দিলও!
সাক্ষাতকারটি যদি পুরোটা দেখেন, তবে আপনারও বোধগম্য হবে যে— সাকিব কিছু লুকোয়নি। যেটা ফিল করেছেন সেটা মুখের উপর বলে দিয়েছেন। কখনও তা আপনার মিষ্টি লেগেছে, কখনও বা বড্ড তেঁতো। তবে সত্যি। তিনি তামিমের বিষয়গুলো নিয়েও যেটা ফিল করে সেটা বলেছেন, বড়ো খান নাফিজ ইকবাল কে নিয়ে যেটা ফিল করেন সেটাই বলেছেন। দিজ ইজ সাকিং!
সাকিব কথা বলেছেন ক্যাপ্টেন্সি নিয়েও। ক্যারিয়ারের অন্তিম সময়ে এসে সে ক্যাপ্টেন্সি নিতে চাইবে না, এটাই সাকিবীয় ভাবনা হবে— সাকিব ভক্তরা তা খুব ভালো করেই জানেন। বিসিবি বস একপ্রকার জোর করেই সাকিব কে ক্যাপ্টেন্সি দিয়েছে। টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে শুরু করে সকল খেলোয়াড় পর্যন্ত বিশ্বাআ করে যে, সাকিব ক্যাপ্টেন হলে ভালো হবে। একটা মানুষের নিবেদন কতোটা হলে এমন বিশ্বাসের বৃক্ষ অন্তরে রোপিত হতে পারে, তা একটু নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ভাবুন তো! অতঃপর সাকিব ক্যাপ্টেন্সি নিয়েছেন।
গত ১৭ তারিখে সাকিব ক্যাপ্টেন্সি ছেড়েই দিয়েছিলেন। সাকিব কে যদি আর জোর না করা হতো তাহলে সাকিব ক্যাপ্টেন থাকতেন না, তাহলে তামিমের দলে না থাকা নিয়ে সাকিবের দিকে আঙুল তোলা হয় কী বুঝে, তা তো মোটেও বুঝে আসে না। এটা তো পাটিগণিতের চেয়েও সহজ মনে হয়। অথচ— কেউ কেউ তা পদার্থ-রসায়ন বানিয়ে ফেলেছে।
খুব আগ্রহ আর মনোযোগে সাক্ষাৎকারটি দেখছিলাম। ভেতরে খা খা করে উঠলো যখনই তার অবসরের প্রসঙ্গ চলে আসলো। আগেই জানা ছিলো— তিনি আর দেড়-দুই বছর ক্রিকেট খেলবেন। কিন্তু তাঁর মুখ থেকে শোনার পর ভেতরটা মুচড়ে উঠেছে। শুধু তাই নয়— মন বলছে ২৫ সাল যেনো সহজে না আসে!
সাকিব বাস্তববাদী মানুষ, সে যখন বলেছেন তখন এ কথার নড়চড় হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই কম। আমরাও বাস্তবতা মেনে নিবো। তবে ঐ যে— আপনাকে ভালোবাসি। ভালোবাসার মাধ্যমটা যেহুতু ক্রিকেট, তাই ক্রিকেটে তাঁর প্রস্থানের কথা শুনে অশ্রুসিক্ত হওয়াটাও ভালোবাসার পরিচয় বহন করে।
তামিম ইকবাল যেমন বলেছেন, আপনারা আমাকে ভুলে যাইয়েন না। আমিও তাঁর সুরে সুর মিলিয়ে বলতে চাই— আপনারও সাকিব কে ভুল বুইঝেন না। যদিও মানুষটাকে যারা সতিই চিনেছে, জেনেছে, কাছ থেকে দেখেছে তাঁরা অন্তত তাঁকে ভুল বুঝতে পারবে না। কারণ, তিনি কীভাবে চিন্তা করেন, সেগুলো তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষীরা জানেন। এ কারণেই সাকিব কোনো এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন ' আমার ভক্তরা পৃথিবীর সেরা ভক্ত'! প্রিয় সাকিব আমরাও জানি, আপনি খেলোয়াড় হিসেবেও যেমন সেরা, মানুষ হিসেবেও আপনি অসাধারণ!
লেখক: আফরান শান্ত, কন্টেন্ট ক্রিয়েটর
(বাংলাভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, বাংলাভিশন কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার বাংলাভিশন নিবে না।)
বিভি/এজেড
মন্তব্য করুন: