• NEWS PORTAL

  • মঙ্গলবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৪

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

আল্টিমেটাম রাজনীতির আল্টিমেট ফল কী?

মোহাম্মদ অলিদ বিন সিদ্দিকী তালুকদার

প্রকাশিত: ২৩:১৩, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩

ফন্ট সাইজ
আল্টিমেটাম রাজনীতির আল্টিমেট ফল কী?

হাতে সময় খুব কম। জানুয়ারিতে নির্বাচন। হিসাবে বাকি আছে বড় জোর ৯০ দিন। সময় পেছনের দিকে নিয়ে এসে গণনা করলে সাপ্তাহিক এবং সরকারি ছুটি বাদ দিলে হাতে সময় আরো কম।  ৬০-৬৫ দিন হতে পারে। তা সরকারি দল-বিরোধী দল উভয়ের জন্যই। দু'পক্ষের মুখোমুখি অবস্থানে এ সময় দ্রুত ফুরিয়ে যাবে।  এর মাঝেই ভর করেছে আল্টিমেটামের রাজনীতি। 

সোজা কথায় কাজ না হলে সরকারকে চরম পরিণতির হুঁশিয়ারি দিয়েছে বিএনপি। তারা খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার অনুমতির দাবিকে সামনে নিয়ে এসেছে। দিয়েছে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম। আর সরকারি দল থেকে বিএনপিকে দেয়া হয়েছে ৩৬ দিনের আল্টিমেটাম। বিএনপির দেয়া ৪৮ ঘন্টা এরই মধ্যে শেষ হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগের দেয়া ৩৬ দিনের কয়েকদিনও চলে গেছে।

দুই পক্ষ কেন এভাবে ৪৮ ঘন্টা ও ৩৬ দিন বেছে নিল, তা এখনো রহস্যাবৃত। এই রহস্য ভেদ হতে হতে কী ঘটে যায়, তাও বলা যায় না। সামনে কী অপেক্ষা করছে নানা শঙ্কা অনেকের। কারণ বাংলাদেশে আল্টিমেটাম-ডেলাইন পলিটিক্সের তিক্ত জের অনেকের মনে আছে। তারওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্যান্ডোরা-বাক্সে আর কী আছে তা নিয়ে দুশ্চিন্তা ভর করেছে। 

নির্বাচন আদৌ হবে কিনা এ প্রশ্নও দেখা দিয়েছে। সরকারের একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা স্বপ্নই থেকে যাওয়ার কিছু আলামত এরই মধ্যে দেখা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ, অবাধ,  সুষ্ঠু নির্বাচন থেকে একচুলও সরছে না। এ লক্ষেই বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধাদানকারীদের প্রতি তাদের ভিসা নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নের ঘোষণা।

নিষেধাজ্ঞার আওতাধীন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, সরকারদলীয় ও বিরোধীদলীয় নেতাকর্মী ও তাদের  রিবারের সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হতে শুরু করেছেন।  র মাঝে আবার নির্বাচন পর্যক্ষেণে ইউরোপীয় ইউনিয়ন-ইইউ প্রতিনিধি দলের না আসার ঘোষণা। 

বাংলাদেশের প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে ইইউ কমিশনের প্রতিনিধি দলের প্রধান জোসেপ বোরেল চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচনের সময় প্রয়োজনীয় শর্তগুলো পূরণ করা হবে কি না, তা এ মুহূর্তে যথেষ্ট স্পষ্ট নয়। গত জুলাইতে ঢাকা সফর করে যাওয়া ইইউর প্রাক্-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলের সুপারিশের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত। এমন সিদ্ধান্তের পেছনে নির্বাচন পর্যবেক্ষণে ২০২৩-২৪ সালের জন্য ইইউর বাজেটের স্বল্পতার কথাও বলা হয়েছে। এমন সিদ্ধান্ত সত্ত্বেও ইইউ বর্তমানে এই নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সঙ্গে থাকার ব্যাপারে অন্যান্য বিকল্প খতিয়ে দেখছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। 

চিঠিতে ইইউর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে নির্বাচন যাতে অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক হয়, তা নিশ্চিত করতে তারা সব ধরনের প্রচেষ্টাকে উৎসাহিত করছে। এর মধ্য দিয়ে নির্বাচন বিষয়ে বার্তাটি শুভ ঠেকছে না। সেইসঙ্গে নির্বাচন প্রশ্নে দুদলের পরস্পরকে ডেমকেয়ার ভাব। কেউ বা কোনো দল নির্বাচনে না এলে নির্বাচন থেমে থাকবে না বলে জানান দিচ্ছে সরকার। বিএনপি বলছে, একতরফা নির্বাচন করিয়ে নেয়ার দিন শেষ। সে ধরনের তফসিল ঘোষণা দেয়া মাত্রই তারা ভিন্ন রূপে নামবে। কী হতে পারে তাদের সেই রূপটি? 

আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পরস্পরকে পাল্টাপাল্টি আল্টিমেটাম দিলেও কোন দলই পরস্পরের বিরুদ্ধে এমন কর্মসূচিকে মুখে অন্তত গুরুত্ব দিচ্ছে না। দু’দলই বলছে যে, এ ধরনের কর্মসূচিতে বিচলিত নন তারা। নির্বাচনের আগে আগে কিছু পাল্টাপাল্টি অভিযোগ বা হুমকি-ধমকি আসা স্বাভাবিক। কিন্তু, ক্ষণ-দিনের আল্টিমেটামের অভিজ্ঞতা এ দেশে বেশ তিক্ত। নব্বইর দশকে গণতান্ত্রিক শাসনে ফেরার পর থেকেই এ ধরণের "আল্টিমেটামের রাজনীতি" বাংলাদেশে চলে আসছে। শক্তিমান দুটি রাজনৈতিক দল দীর্ঘদিন ধরে আল্টিমেটামের এই সংস্কৃতি বজায় রেখে চলছে। যা তাদের রাজনীতির বল ঘোরানোর স্পিন করার মতো। 

বল ঘোরানোর রাজনীতিটা দুই দলই করে আসছে। তবে, বরাবর বিরোধী দল আল্টিমেটাম দিয়ে আসলেও সরকারি দলের আল্টিমেটাম দেয়ার ঘটনা এটাই প্রথম। বিএনপি এতো দিন বলেছে যে, এই সরকারের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। এখন আওয়ামী লীগ আল্টিমেটাম দিলেও নির্বাচন কীভাবে হবে, বিএনপির দাবি মেনে নিয়ে বিকল্প উপায়ে নির্বাচন হবে কি না সে বিষয়ে কোন তথ্য জানানো হয়নি। বিএনপির দিক থেকেও আল্টিমেটাম নিয়ে কিছু সংকীর্নতা বা রহস্য রয়েছে। 

গত রবিবার নয়াপল্টনের সমাবেশে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটামটি ঘোষণা করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি এ আল্টিমেটাম দেয়ার আগের রাতে বেগম খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। কাজেই এর মধ্যে একটা হিসাব বা রহস্য না থেকে পারে না। গত ৪ সেপ্টেম্বর সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়ার দণ্ডাদেশ স্থায়ীভাবে স্থগিতের দাবিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর একটি আবেদনপত্র পাঠান খালেদা জিয়ার ভাই শামিম ইস্কান্দার। 

সম্প্রতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়ে কোন আবেদন পাননি বলে সাংবাদিকদের জানানোর পর বাধে বিপত্তি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মিথ্যাচার করছেন অভিযোগ তুলে ওই আবেদনপত্রটির কপি বিএনপির পক্ষ থেকে প্রকাশ করা হয়। পরিবারের পক্ষ থেকে করা আবেদনটিতে বলা হয়, খালেদা জিয়ার জীবন রক্ষার জন্য এবং তার শারীরিক সক্ষমতা ফিরিয়ে আনার জন্য জরুরী ভিত্তিতে উন্নতমানের ফিজিওথেরাপিসহ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে দেশের বাইরে চিকিৎসা গ্রহণ করা প্রয়োজন। এমন অবস্থায় সব শর্ত শিথিল করে তাকে স্থায়ীভাবে মুক্তি এবং বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দেয়ার জন্য দাবি জানানো হয় ওই আবেদনে। 

নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানো যাবে কিনা তা নিয়ে বিভিন্ন সময় সরকারের পক্ষ থেকে নানা ধরণের মন্তব্য আসছে। আইনমন্ত্রী-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রায় প্রতিদিনই এ নিয়ে কিছু না কিছু বলছেন। আদালতে যাওয়ার রাস্তাও দেখিয়ে দিচ্ছেন তারা। এখানেও আলিটমেটাম টাইপের আরেক রাজনীতি। বেগম খালেদা জিয়ার বর্তমান বন্দিত্ব বা মুক্ত দশা আদালতের ব্যাপার নয়। আদালত তাকে মুক্তি দেয়নি। তাকে মুক্তি দেয়া হয়েছে নির্বাহী আদেশে। এর পেছনেও রাজনীতি, অতিরাজনীতি এমন কি বিদেশি সঙযোগের কথাবার্তা রয়েছে। যা বিএনপির আল্টিমেটামের সঙ্গেও প্রাসঙ্গিক। তা যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতে চলমান একদফার আন্দোলনকে আরও জোরদারের সিদ্ধান্তের সঙ্গেও সম্পর্কিত। দাবি আদায়ে ভিসা নিষেধাজ্ঞাকে এক ধরনের সুযোগ হিসেবে দেখছে দলটি।

বিএনপি নেতারা মনে করছেন, ভিসা নিষেধাজ্ঞার ফলে সরকার দেশে-বিদেশে ব্যাপক চাপে পড়েছে। এই চাপ কাজে লাগিয়ে তারা দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অসুস্থতা ও মুক্তি ইস্যুকেও জোরালোভাবে সম্পৃক্ত করতে যাচ্ছেন। তা একদফার আন্দোলনের বাঁক বদলেও দিতে পারে। খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার বিষয়ে সরকারের সঙ্গে বিএনপির ভেতরে ভেতরে এক ধরনের আলোচনার গুঞ্জনও আছে। এটিকে ফলপ্রসূ করার কৌশল হিসেবে বিএনপি আল্টিমেটাম দিয়ে থাকতে পারে। সরকারও সেই সুযোগ নিচ্ছে। বোঝাপড়ার মধ্য দিয়ে আইনের মধ্যে থেকে খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর উপায় খুঁজছে। আবার ক্ষমতায় থেকেও আল্টিমেটাম দেয়ার রেকর্ড গড়ছে। 

লেখক: ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, সাপ্তাহিক বাংলাপোস্ট 

(বাংলাভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, বাংলাভিশন কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার বাংলাভিশন নিবে না।)

বিভি/এজেড

মন্তব্য করুন:

সর্বাধিক পঠিত
Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2