• NEWS PORTAL

  • রবিবার, ২৩ মার্চ ২০২৫

রাজনীতিতে পলিটিক্স: টিকটকে ঠিকঠাক

মোস্তফা কামাল

প্রকাশিত: ০৮:৩২, ৫ জুলাই ২০২৪

ফন্ট সাইজ
রাজনীতিতে পলিটিক্স: টিকটকে ঠিকঠাক

রাজনীতিতে আর রাজনীতি নেই, রাজনীতির মধ্যে পলিটিক্স ঢুকে পড়েছে- এভাবেই বর্তমান তথা চলমান রাজনীতির স্বরূপ তুলে ধরেছিলেন বাম ঘরানার প্রবীণ নেতা মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম।  তার এ মূল্যায়ণ দিনকে দিন বাস্তবের চেয়েও বাস্তব হয়ে উঠেছে। রাজনীতি একটা ছোট্ট শব্দ। এর ইংরেজি তরজমা পলিটিক্স। সেখানে এখন নানা পলিউশন। রাজনীতির নামে যা হচ্ছে বা চলছে একে রাজনীতি বলা কতোটা সমীচিন সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। 

প্রাচীন রাজতন্ত্রের দিক থেকে রাজনীতি মানে রাজার নীতি। অর্থাৎ যে নীতির ভিত্তিতে রাজা তার রাজ্য  পরিচালনা করেন। আর বাংলা ব্যাকরণে রাজনীতি হচ্ছে নীতির রাজা। দেশে এখন তা হলে কোনটা চলছে? রাজার নীতি না নীতির রাজা-যে কারোই তা বোধগম্য। পলিটিক্স শব্দটি তিনটি গ্রিক শব্দ থেকে এসেছে। এগুলো হলো- পোলিস, পলিটি ও পলিসিয়া। প্রাচীন গ্রিসে রাজনীতি বলতে নগররাষ্ট্র, তার শাসনব্যবস্থার বস্তুগত ও দর্শনগত দিকগুলোর অধ্যয়ন বোঝাত। বিদ্রুপার্থে কেউ কেউ রাজনীতির অন্য অর্থও করেন। তারা বলেন, ন্যায়-নীতিবিবর্জিত উপায়ে ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের অনন্য উপায় রাজনীতি। সময়ের ব্যবধানে দেশ-কাল স্থান ভেদে এর ব্যাপ্তিতে পরিবর্তন এসেছে।

গত ক’দিন রাজনীতির ময়দান ফাঁকা। এমপি আনার খুন, বেনজীর-মতিউর, ছাগল, বাছুর, রাসেল ভাইপার ইত্যাদির পর এখন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের ধর্মঘট, শিক্ষার্থীদের কোটাবিরোধী আন্দোলনসহ নানা ইস্যুর যে চক্কর চলছে এগুলো কোন নীতিভুক্ত? আবার এগুলোই রাজনীতি। এগুলোর রন্দ্রে রন্দ্রে রাজনীতির অনেক উপাদান।  অথচ রাজনীতিবিজ্ঞানের জনক হিসেবে পরিচিত অ্যারিস্টটল ‘পলিটিকস’ অর্থাৎ রাজনীতিকে সত্য, সুন্দর ও নৈতিকতার বিষয় বলে বর্ণনা করেছেন। অবশ্য পরে প্রাচ্যের কৌটিল্য এবং পাশ্চাত্যের ম্যাকিয়াভেলি রাজনীতি থেকে নীতিনৈতিকতাকে বিসর্জন দেন। রাষ্ট্রক্ষমতার জন্য সব ধরনের ধূর্ততা, হিংস্রতা, অপকৌশল ও বিশ্বাসঘাতকতাকে তারা যুক্তিযুক্ত বলে মতামত দেন। নির্দিধায় বলা যায় কৌটিল্য—ম্যাকিয়াভেলি বর্ণিত রাজনীতির রসায়নের রিহার্সাল-ই এখন চলছে। অর্থাৎ ক্ষমতাকে জনস্বার্থে পরিচালনার রীতি-নীতি-চাতুরির এ  রাজনীতির নামে যে যা পারছেন করছেন। পরস্পরবিরোধী অপপ্রচার- বিদ্বেষ ছড়ানোও একটি রাজনীতি। স্মার্টনেসও বটে। 

হাজারো পলিটিক্স-মিশ্রিত কৌশলে কে কাকে কিভাবে ঠকিয়ে, এটা সেটা রটিয়ে জিতবে সেটাও রাজনীতি। এ অভিযাত্রায় ক্ষমতাসীনদের সাথে টেক্কা দিতে গত ৩ জুলাই রাতে টিকটকে অ্যাকাউন্ট খুলেছে রাজনীতিতে নাস্তানাবুদ বিএনপি। তরুণদের কাছে দলের বার্তা তথা দলীয় ও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পৌঁছে দিতে এ পদক্ষেপ দলটির। বিএনপির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এ সংক্রান্ত একটি পোস্টও দেওয়া হয়। সেখানে বলা হয়, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির টিকটক অ্যাকাউন্টে ফলো দিয়ে সঙ্গে থাকুন। বিএনপির এই টিকটক অ্যাকাউন্টটি দলের তথ্য ও প্রযুক্তি দপ্তর পরিচালনা করবে। এ টিকটক কাজে এক বছর আগে গত বছরের ২ জুন থেকে ঠিকঠাকে আগোয়ান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। টিকটক অ্যাকাউন্ট খোলার পরদিন ৪ জুলাই রাতে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এ সংক্রান্ত আরেকটি পোস্ট দেওয়া হয়। তাতে বলা হয়, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির অনলাইন প্লাটফর্ম সমূহের বিষয়ে প্রকাশিত কিছু বিভ্রান্তিকর খবরের পরিপ্রেক্ষিতে সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে- দলের ওয়েবসাইট, ফেসবুক, এক্স (সাবেক টুইটার), ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব চ্যানেল, টিকটক, টেলিগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ এবং লিংকডইন প্রোফাইলসমূহ সংগঠনের তথ্য ও প্রযুক্তি দপ্তর হতে তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক এবং সহ-সম্পাদকদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়। এগুলোর ওয়েব এড্রেসও দেয়া হয়। এসব টুকিটাকি কাজও আওয়ামী লীগ আরো আগেই সেরে রেখেছে। বিএনপি সেই বিবেচনায় আওয়ামী লীগের কাছে শিশু শ্রেণিভুক্ত। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, টুইটারের পর আওয়ামী লীগ টিকটক অ্যাকাউন্ট খুলেছে গত বছরের ২ জুন। দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে পোস্ট দিয়ে তা জানানো হয়েছিল। সেইসঙ্গে আহ্বান জানানো হয় অ্যাকাউন্টটি অনুসরণের। 

ডিজিটাল কর্মকাণ্ডে বিএনপিকে টালমাটাল করার তেমন বাকি রাখেনি আওয়ামী লীগ। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনকে ঘিরে ফেসবুক-টিকটকসহ যোগাযোগমাধ্যমে বেশি আক্রমণের শিকার হয়েছেন বিএনপির নারী রাজনীতিকেরা। কানাডাভিত্তিক প্রযুক্তি অধিকারবিষয়ক আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউট এ নিয়ে একটি গবেষণা করেছে। রিপোর্টও দিয়েছে । গত ১১ জুন প্রকাশিত তাদের রিপোর্টটির শিরোনাম ছিল ‘ফ্রম হোমোফোবিয়া টু অ্যাসল্ট: দ্য জেন্ডারড ল্যান্ডসকেপ অব বাংলাদেশ’স পলিটিক্যাল ডিসইনফরমেশন’। এর বাংলা দাঁড়ায়- ‘বিদ্বেষমূলক প্রচারণা থেকে আক্রমণ: বাংলাদেশের রাজনৈতিক অপতথ্যের লিঙ্গভিত্তিক চিত্র’। গবেষণায় ২০২২ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে গত ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ফেসবুক পেজ ও গ্রুপের পাবলিক পোস্ট ও এগুলোর প্রতিক্রিয়া সংগ্রহ করা হয়। যেসব কনটেন্ট ভুল বা বানোয়াট, সেগুলো ভুল বা ভুয়া তথ্য এবং যেগুলো বিকৃত করা হয়েছে, সেসব অপতথ্যের হিসাবও দেখা হয়েছে।

কিছু কনটেন্টে অন্তরঙ্গ ছবির অপব্যবহার, ডক্সিং (কারও পোস্ট করা ব্যক্তিগত তথ্য ভুয়া আইডি তৈরিসহ হীন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা), ট্রলিং, সম্মতি ছাড়া ডিপফেক ছবি তৈরি, উৎপাত, যৌন হয়রানির মাধ্যমে আক্রমণ করা হয়েছে। এই আক্রমণের শিকার হওয়ার ক্ষেত্রে শীর্ষে থাকা বিএনপির নারীদের মধ্যে রয়েছেন শামা ওবায়েদ, রুমিন ফারহানা, নিপুন রায় চৌধুরী, সুলতানা আহমেদ। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মেয়ে জাইমা, প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর মেয়ে জাফিয়াকেও ছাড় দেয়া হয়নি। এর বিপরীতে  শিকার হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বঙ্গবন্ধুর ছোট কন্যা, শেখ রেহানা, আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য সংগীতশিল্পী মমতাজ, আওয়ামী লীগ থেকে বহিস্কৃত হেলেনা জাহাঙ্গীরসহ কয়েকজন।

বিশ্বজুড়েই এখন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স-কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার হিড়িক। এর আক্রান্তরা ডিজিটালকে অভিশাপ দেন। আবার প্রতিপক্ষ আক্রান্ত হলে তৃপ্তি বোধ করেন।  নিজের লাভ এবং অন্যের সর্বনাশের এ মানসিকতায়  একটি কনটেন্ট পোস্ট করার সেকেন্ডের মধ্যেই কিছু গ্রুপ ও পেজ তা শেয়ার করেছে। ভুয়া অভিযোগগুলো প্রতিষ্ঠিত করতে তারা আবার সেগুলো আপলোড করেন। সাম্প্রতিক এক হিসাব বলছে, বাংলাদেশের ১০ কোটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর একটা বড় অংশ সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে। সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করে ফেসবুক। এরপরে রয়েছে টিকটক ও ইউটিউব। দুই প্রধান দলের এই বিশাল ব্যবহারকারীর কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা তাদের ডিজিটাল বান্ধবের নমুনা। রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের বার্তা প্রচারে পেজ, গ্রুপ ও ভেরিফায়েড প্রোফাইলের জটিল এক ওয়েব ব্যবহার করে। প্রাথমিকভাবে দলের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ঘিরে কমিউনিটি তৈরি ও সংগঠিত করতে গ্রুপগুলো ব্যবহৃত হয়। একই সময় তারা অন্যান্য গ্রুপ, পেজ, প্রোফাইলে কনটেন্ট ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ করে। দুই দলের ক্ষেত্রে ছবি সবচেয়ে সাধারণ পোস্ট। এরপর আছে ফেসবুকে সরাসরি আপলোড করা ভিডিও। প্রযুক্তির সঙ্গে এই মিতালী হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু, সত্যকে মিথ্যা, মিথ্যাকে সত্য অথবা একদম আজগুবি রচনার এ স্মার্টনেস সামনে কোন পর্যায়ে যাবে- কে জানে?

লেখক: সাংবাদিক-কলামিস্ট; ডেপুটি হেড অব নিউজ, বাংলাভিশন 

বিভি/এমএফআর

মন্তব্য করুন:

আজকের সময়সূচী (২৩ মার্চ ২০২৫)

সেহরি:

০৬:০০

ইফতার:

০৬:১১

Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2