• NEWS PORTAL

  • মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

ঢাকায় তিয়েনআনমেনের ঢেঁকুর  

মোস্তফা কামাল

প্রকাশিত: ১২:৪৯, ২ আগস্ট ২০২৪

ফন্ট সাইজ
ঢাকায় তিয়েনআনমেনের ঢেঁকুর  

কোটা আন্দোলন ক্রমেই আর কোটায় থাকেনি। কোটা পেরিয়ে তা কতো কৌটা ও কোঠায় ঢুকে গেছে কম-বেশি জানেন-বোঝেন অনেকেই। বিশেষ করে এ প্রজন্ম একটু বেশিই বোঝে। জ্যানারেশন গ্যাপটা যারা বোঝেন না, তাদের কথা ভিন্ন। প্রজন্মের কাছে এখন চিত্র আর ব্যাঙ্গচিত্রের তেমন তফাৎ নেই। হাসি আর কান্নায়ও তাই। কোনটা হাসি, কোনটা কান্না, তা তাৎক্ষণিক ধরে ফেলে তারা। দালাল চিহ্নিত করতে পারে আরো দ্রুত। 

শুরুতে এবারের আন্দোলনের ধরনটা ছিল একদম আলাদা। শিক্ষার্থীরা সরকার ফেলে দিতে আসেনি, সরকারি চুরি-ডাকাতি বন্ধ করতে ফোর্স করেনি। তাদের রিজার্ভ ফোর্স নেই। ক্ষমতা দখলের এজেন্ডাও নেই। এর সুফল হিসেবে জমেছে আন্দোলনটা। আগের কোনো আন্দোলনে সন্তানদের নিয়ে মায়েদের মিছিলে যাওয়ার দৃষ্টান্ত নেই। হকার তার জুস এবং পানি আন্দোলনকারীদের মধ্যে বিনে পয়সায় বিলিয়ে দিয়েছে। ৬-৭ বছরের বাচ্চা পানি এনে আন্দোলনকারীদের তৃষ্ণা মিটিয়েছে। ক’জন দেখেছেন কোনো নারী ছাদের সাটারিংয়ের বাঁশ খুলে নিরস্ত্র প্রতিরোধকারীদের দিয়ে দিচ্ছে? ছাত্রী বোনেরা পুলিশের গাড়ি থেকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করতে আসা ভাইকে টেনে মুক্ত করে নিয়েছে। 
এভাবে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ কোনো-না-কোনোভাবে আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়েছে। যে মিছিলে যাচ্ছে না সেও কবিতা-গান লিখে পোস্ট করছে, ছবি আঁকছে, গ্রাফিতি আঁকছে, নিহতদের নিয়ে রিল বানাচ্ছে। হল খালি করার পরে ছাত্র-ছাত্রীদের সসম্মানে নিজেদের বাসায় আশ্রয় নেবার আহ্বানের দৃষ্টান্ত পর্যন্ত দেখা গেছে। মিথ্যা মামলার আসামিদের জন্য বিনা পয়সায় লড়ার জন্য আইনজীবীদের ঘোষণাও আগে কখনো দেখা যায়নি। আন্দোলনটির এ নমুনায় কারো কারো মধ্যে চীনের তিয়েনআনমেন ট্র্যাজেডি ভাবনা চেপেছে। 

এক-দুই প্রজন্মের আগের প্রজন্মের চীনের তিয়েনআনমেন ট্রাজেডি মনে থাকার কথা। কমিউনিস্ট পার্টি শাসিত গণপ্রজাতন্ত্রী চীনে রাজনীতি ও অর্থনীতিতে সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে আন্দোলন শুরু হয় আশির দশকে। আন্দোলনের কেন্দ্রস্থল ছিল রাজধানী বেইজিংয়ের তিয়েনআনমেন স্কয়ার। বিক্ষোভকারীদের দমন করতে ১৯৮৯ সালের ৩ জুন রাতে ব্যাপক অভিযান শুরু করে চীনের সরকার। সেনাবাহিনী ভারী অস্ত্র আর ট্যাংক নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে আন্দোলনকারীদের ওপর। হতাহত হয় বিপুলসংখ্যক আন্দোলনকারী। ওই আন্দোলনের প্রেক্ষিত ছিল রাজনৈতিক এবং ঘোর কূটনৈতিক। 

পুঁজিবাদের নেতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করে ১৯৮০'র দশকে চীন অনেক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। বেসরকারি কোম্পানি এবং বিদেশী বিনিয়োগকারীদের অনুমোদন দিতে শুরু করে ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি। চীনকে আরো উন্নতির শিখরে নিতে উতলা হয়ে উঠেছিলেন আধুনিক চিন্তাধারার নেতা ডেং শিয়াওপিং। এই উন্নয়নের সাথে সাথে দুর্নীতিও বাড়ছিল, সেই সঙ্গে আধুনিকতার কারণে রাজনৈতিক উদারতার আশা আকাঙ্ক্ষাও তৈরি হয় মানুষের মনে। চীনের কম্যুনিস্ট পার্টির মধ্যেও বিভেদ দেখা দেয়। একটি পক্ষ চাইছিল দ্রুত পরিবর্তন, অপরপক্ষ চাইছিল কমিউনিস্ট পার্টির ধ্যান ধারণা অনুযায়ী যাতে বরাবরের মতোই রাষ্ট্রের কঠোর নিয়ন্ত্রণ সকল ক্ষেত্রে বজায় থাকে। ওই অবস্থায়ই আশির দশকের মাঝামাঝিতে শুরু হয় ছাত্র বিক্ষোভ। আরো বেশি রাজনৈতিক স্বাধীনতার দাবিতে ১৯৮৯ সালের বসন্তে বিক্ষোভ আরো জোরালো হয়ে ওঠে। সেটি আরো জোরালো হয় হু ইয়াওবাংয়ের মৃত্যুতে। রাজনৈতিক বিরোধীরা দু'বছর আগে যাকে দলের শীর্ষ পর্যায়ের পদ থেকে তাকে নীচে নামিয়ে দেন। হু'র শেষকৃত্যানুষ্ঠানে হাজার হাজার মানুষ একত্রিত হন। এপ্রিল মাসের ওই অনুষ্ঠানে তারা জড়ো হয়ে বাকস্বাধীনতা এবং কম সেন্সরশিপের দাবি জানাতে থাকেন। 

এর পরের কয়েক সপ্তাহে বিক্ষোভকারীরা জড় হতে থাকে আধুনিক চীনের প্রতিষ্ঠাতা মাও সেতুংয়ের সমাধিস্থলের তিয়েনআনমেন স্কোয়ারে। সেই সংখ্যা একপর্যায়ে দশ লাখে পৌঁছে যায়। এক পর্যায়ে মে মাসের শেষ দুই সপ্তাহে বেইজিংয়ে মার্শাল ল' জারি করা হয়। ১৯৮৯ সালের ৩রা ও ৪ঠা জুনে তিয়েনআনমেন স্কোয়ারের দিকে এগোতে শুরু করে সৈনিকরা। ওই এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিতে সমানে গুলি চালানো হয়। সেইসঙ্গে চলে গণগ্রেফতার। ওই বিক্ষোভে কতজনের মৃত্যু হয়, তা আজও প্রশ্নবিদ্ধ। ১৯৮৯ সালে জুনের শেষ নাগাদ, চীন সরকার বেসামরিক ব্যক্তি এবং নিরাপত্তা কর্মী মিলিয়ে বিক্ষোভে দুইশ’জন নিহতের কথা স্বীকার করে। কিন্তু, প্রকৃত সংখ্যা কয়েক হাজার বলে প্রচারিত। ২০১৭ সালে ব্রিটিশ কূটনৈতিকের একটি বার্তা প্রকাশ করা হলে জানা যায়, সে সময় চীনে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত স্যার অ্যালান ডোনাল্ড যে বার্তা পাঠিয়েছিলেন, সেখানে ১০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। 

ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনাবলী নিয়ে বক্তব্য বা পোস্ট ইন্টারনেট থেকে সরিয়ে ফেলা হয়, যা দেশটির সরকার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। চীনের সঙ্গে গভীর বন্ধুত্ব রক্ষা করে চলা বাংলাদেশ সরকার চীনা বুদ্ধি দিয়ে চলমান ছাত্র আন্দোলন দমানোর চেষ্টা করেছে কিনা তা নিয়ে কানাঘুষা আছে। চীন আর বাংলাদেশ এক নয়। বাস্তবতা অনেক ভিন্ন। আবার কিছু মিলও আছে। চীন ক্রমশ সামনে এগোচ্ছে। অর্থবিত্তে বলিয়ান হচ্ছে। কিন্তু, কোটা আন্দোলনের মাঝে এরইমধ্যে অনেক বিষয়াদি যোগ হয়ে গেলেও বাংলাদেশে কোনো সেক্টরে কি নূন্যতম ঝাকুনিও পড়েছে? দুঃশাসন, লুটপাট-দুর্নীতি, উন্নয়নের নামে ভিখিরিদের ওপর পর্যন্ত খাজনা-ভ্যাট চাপিয়ে দেওয়া কি বন্ধ হয়েছে? কালোবাজারি, সিন্ডিকেটে লাগাম পড়েছে? নমুনাও আছে? টাকা পাচার কমেছে? ব্যাংক লুটেরারা দমেছে? অথবা, দমার আলামত আছে? 

লেখক: সাংবাদিক-কলামিস্ট; ডেপুটি হেড অব নিউজ, বাংলাভিশন 

বিভি/পিএইচ

মন্তব্য করুন:

সর্বাধিক পঠিত
Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2