ছাত্ররাজনীতি কি উচ্চশিক্ষার অন্তরায়?

ছাত্ররাজনীতি উচ্চশিক্ষার অন্তরায়— এ কথাটি ঢালাওভাবে না বলা গেলেও, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিগত কয়েক দশকে ছাত্ররাজনীতির যে সংস্কৃতি আমরা দেখেছি, তা আমাদেরকে হতাশ করেছে। উপমহাদেশের প্রেক্ষাপটে ছাত্ররাজনীতির একটি ঐতিহাসিক চরিত্র রয়েছে। তবে দেশ স্বাধীনের পর থেকে ছাত্ররাজনীতি অনেকটাই তার কক্ষপথ থেকে বিচ্যুত হয়ে যায়। রাজনৈতিক দলগুলোর স্বার্থ হাসিলের একটি হাতিয়ার হিসেবেই বেশিরভাগক্ষেত্রে ছাত্র সংগঠনগুলোকে ব্যবহার করা হয়েছে।
আমাদেরকে বুঝতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতির লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য কি? ছাত্ররাজনীতির সীমা-পরিসীমা আসলে কতদূর পর্যন্ত বিস্তৃত—সেটিও আমাদের বিবেচনা করতে হবে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার পর একজন শিক্ষার্থী যদি ভবিষ্যতে রাজনীতিবিদ হতে চান, সেক্ষেত্রে উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক সংস্কৃতি তাকে তার লক্ষ্যে অধিষ্ঠিত হতে সহযোগিতা করবে। তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আমরা দেখেছি, ক্যাম্পাসগুলোতে সুস্থ ধারার রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে উঠেনি; বরং বছরের পর বছর ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল কিংবা বিরোধী রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তিই করে গেছে ছাত্রসংগঠনগুলো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক চর্চার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ— ছাত্র সংসদ। পাকিস্তান আমলেও ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়মিত পরিসরেই হয়েছে। তবে দেশ স্বাধীনের পর বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজে ছাত্র সংসদ ধারাবাহিকভাবে অকার্যকর করে রাখা হয়। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনগুলো ছাত্র সংসদ না থাকার সুযোগ নিয়ে ক্যাম্পাসগুলোতে বছরের পর বছর পেশিশক্তি দেখিয়েছে। সর্বশেষ কোটা সংস্কার আন্দোলনেও সাধারণ ছাত্রদের বিপক্ষে গিয়ে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ নেয় বর্তমানে সবচেয়ে সমলোচিত ছাত্র সংগঠন—ছাত্রলীগ।
যুগের পর যুগ সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে নিগৃহীত হয়েছে। অনেক শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন ব্যাহত হয়েছে। ফলশ্রুতিতে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে দাবি আসছে—ক্যাম্পাসগুলোতে দলীয় ছাত্ররাজনীতি যেন নিষিদ্ধ হয়।
তবে ছাত্র সংসদ নিয়ে শিক্ষার্থীদের আপত্তি নেই। যদি ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্র সংসদের চর্চা শুরু হয়, সেক্ষেত্রে একটি সুস্থ রাজনৈতিক ধারা ক্যাম্পাসে ফিরে আসবে। ডাকসু, রাকসু, জাকসু কিংবা চাকসুর মতো ছাত্র সংসদগুলো যদি ক্যাম্পাসগুলোতে ফিরে আসে, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উপর পর্যাপ্ত চাপ সৃষ্টি করা যাবে—যা শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে ভূমিকা রাখবে। দলীয় ছাত্ররাজনীতির ফলে ক্যাম্পাসগুলোতে শিক্ষার পরিবেশ যে নষ্ট হয়েছে—সেটা বলতে কোনো দ্বিধা নেই। তবে সময় এসেছে কাঠামোগত সংস্কারের মাধ্যমে
ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির লক্ষ্য-উদ্দেশ্য-সীমা নির্ধারণ করা। আশা করা যায়, এ সংস্কারটি হলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কার্যত অর্থেই জাতীয় নেতৃত্ব তৈরির সূতিকাগার হিসেবে গড়ে উঠবে।
লেখক: শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
বিভি/এজেড
মন্তব্য করুন: