• NEWS PORTAL

  • বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫

Drama: Jamai Bou Chor
Drama: Jamai Bou Chor

এডাল্ট হরতাল: বেতালে হাসিনা-মোদি-আসাদ-পুতিন

মোস্তফা কামাল

প্রকাশিত: ১৩:৩৩, ১৭ জানুয়ারি ২০২৫

আপডেট: ১৫:২৪, ১৭ জানুয়ারি ২০২৫

ফন্ট সাইজ
এডাল্ট হরতাল: বেতালে হাসিনা-মোদি-আসাদ-পুতিন

সত্য-মিথ্যা নিস্পত্তির অবস্থা নেই। শেখ হাসিনা আসলে ১৮ জানুয়ারি থেকে হরতাল ডাকার নির্দেশ দিয়েছেন কি  না? তার দল বা পরিবার থেকে এখন পর্যন্ত কিছু জানানো হয়নি। তবে, অডিওতে তার কণ্ঠ পরিষ্কার। ভাষা-শব্দের স্টাইলও তারই। স্যোশাল মিডিয়ায় এটি ব্যাপক প্রচার পেয়েছে। ১৮ জানুয়ারি আমলে নিলে তা হয় শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টায়, শেষ হবে শেষ রাতে তাহাজ্জতের পর ফজরের ওয়াক্তে। এ ধরনের ১৮ প্লাস এডাল্ট, অদৃশ্য বা ভৌতিক হরতাল কে মানলো, আর কে মানলো না তাতে তার কিছু যায় আসে না। যদিও কখনো বিরোধীদলে গেলেও হরতাল ডাকবেন না বলে একটা ঘোষণা ছিল তার। তিনি তো বিরোধী দলে নন। সরকারেই আছেন। তিনিই প্রধানমন্ত্রী। চট করে চলে আসবেন যে কোনো সময়। যেমন বাশার আল আসাদেরও পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষরের কোনো কাগজ আজতক কেউ দেখাতে পারেনি।
 
অবশ্য আসাদের সে ধরনের কোনো মন্তব্য বা দাবি নেই। যেকোনো সময়ে আশ্রিত দেশ রাশিয়া থেকে চট করে সিরিয়া ঢুকে পড়ার কোনো বার্তা নেই। রাশিয়ায় এখন হিজরতে আছেন বলে দাবিও নেই। শেখ হাসিনার বিষয়টি ভিন্ন। একাশিতে ভারত থেকেই তিনি বাংলাদেশে ফিরেছিলেন। চব্বিশে ভারতেই পালিয়েছেন। যেখান থেকে আগমন। সেখানেই নির্গমন। এরইমধ্যে পরিষ্কার ৭১, ৭৫, ২৪-এর মতো আগামীতেও শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগের ভরসা ভারতই। নরেন্দ্র মোদী, অজিত দোভালদের কাছে তার ইউটিলিটি আগের মতো থাক বা না থাক এরইমাঝে ভারতের সাবেক মন্ত্রী, প্রবীণ কংগ্রেস নেতা মণি শঙ্কর আয়ার বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমৃত্যু দিল্লিতে থাকার ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানিয়েছেন মোদী সরকারকে।  

তিনি খোলামেলাই বলেছেন, শেখ হাসিনা দীর্ঘদিন ধরে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার ছিলেন। এখন যেন বেইনসাফি-মোনাফেকি না করে এর প্রতিদান দেয়া হয়। কংগ্রেস নেতার এই বক্তব্য বেশ গুরুত্বের সাথে প্রচার করেছে ভারতের সংবাদমাধ্যমগুলো। এর বহু আগেই শেখ হাসিনাও প্রকাশ্যে বলেছেন, তিনি ভারতের জন্য যা করেছেন তা দেশটির আজীবন মনে রাখতে হবে। এদিকে, বাংলাদেশ সরকার শেখ হাসিনা বিষয়ে এখন আর না পারতে কোনো প্রতিক্রিয়া দেয় না। আবার জনগণের মধ্যেও ভারত প্রশ্নে তেজোদ্দীপ্ত ভাব। সীমান্তের কয়েক জায়গায় ভারতের কাঁটাতারের বেড়া রুখে দিয়েছে স্থানীয়রা। আর পিঠ দেখানো নয়, বুক টান করে দাঁড়িয়েছে সীমান্তরক্ষী বিজিবি। সীমান্ত এলাকায় বিজিবির সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়েছে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকার মানুষ। 

তাহাজ্জতি হরতাল আর পরহেজগারি আন্দোলন কোনোটার অবস্থাই আপাতত শেখ হাসিনার নেই। পারিবারিকভাবেও বিপর্যয় ভর করেছে। যাযাবর-পরিযায়ী পরিবারের মতো দশা। একজন রাজনীতিক অন্যের দেওয়া ফ্ল্যাটে থাকেন, তার বোন থাকেন আরেকজনের উপহার দেওয়া ফ্ল্যাটে, মাথা কেন ভাইয়ের বন্ধুর ছেলের দেওয়া ফ্ল্যাটে, আর খালা থাকেন বিদেশি সরকারের দেওয়া সেফ হাউসে। তাদের ঢাকাই পতন এখন লন্ডন মাড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দিকেও ছুটছে। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে ইউরোপে টিউলিপ ফোটার মৌসুমের আগে এবার জানুয়ারিতেই টিউলিপ ফুটে-ফেটে একাকার। অথচ টিউলিপ আর পলিউট কতো ব্যবধান। ২০ জানুয়ারি ট্রাম্পের অভিষেক নিয়েও ছিল অনেক আশাবাদ। ট্রাম্পের সাথে শেখ হাসিনার সম্পর্কের গভীরতা নিয়ে অনেক কথার প্রচলন আছে। তাই দলের আশাবাদী মহলের বেশ নজর যুক্তরাষ্ট্রের দিকে। 
ট্রাম্পকে আপার ছেলের উকিল বাপ বলে প্রচারও আছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ট্রাম্প প্রশাসনের নেক নজরে পড়ার আশা ছিল তাদের। খুব বুদ্ধি করেই এর আগে, ট্রাম্পের ছবি বুকে নিয়ে নেতা-কর্মীদের রাস্তায় নেমে গণ্ডগোল পাকানোর নির্দেশনা দিয়েছিলেন। সেটি বুমেরাং হয়েছে। উল্টো এখন ট্রাম্পের শপথ ও প্রার্থনার দাওয়াত পেয়েছেন বিএনপি নেতারা। এখন অপেক্ষা নতুন সিকোয়েন্সের। 

শেখ হাসিনার আশ্রয়দাতা ভারতও এখন তাকে নিয়ে স্বস্তিতে নেই। কূটনৈতিক মহল থেকে নানা বাজে কথা শুনতে হচ্ছে। তারওপর স্বয়ং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিই নতুন করে পড়েছেন পুরনো যন্ত্রণায়। তার শ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি নিয়ে বিতর্ক বেশ পুরোনো। এমনকি মোদির বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রি নিয়ে তথ্য জানতে চাওয়ার কারণে ২০২৩ সালে দিল্লির তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে জরিমানাও করা হয়েছিল। মোদির ডিগ্রি বিতর্কে আরটিআইয়ের প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশনের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেওয়া হয় ডিগ্রি সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ্যে আনার জন্য। আরটিআই কর্মীর আবেদনের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাবর্ষে পাস করা সব শিক্ষার্থীর তথ্য প্রকাশ করতে বলে কমিশন। ওই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে দিল্লি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এবার এই বিতর্ক নিয়ে মুখ খুলেছে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়টি বলছে, শুধু কারও কৌতুহল মেটানো তথ্য জানার অধিকার বিষয়ক আইন-আরটিআই আইনের লক্ষ্য হতে পারে না। এ নিয়ে ভারতজুড়ে মোদীকে নিয়ে নানান মশকরা। বাংলাদেশে যেমনটি হয়েছিল শেখ হাসিনার অসংখ্য পিএইচডি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র দাবি করা নিয়ে। 

শেখ হাসিনার মতো নিজ দেশ ছেড়ে প্রাণে বাঁচার সাম্প্রতিক আরেক উদাহরণ সিরিয়ার ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ। রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে আশ্রয় নেওয়া আসাদকে বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য সানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মস্কোর এক নির্জন অ্যাপার্টমেন্টে বসবাসরত আসাদ হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন তিনি চিকিৎসা সহায়তা চান। এর প্রায় সাথে সাথেই তার ব্যাপক কাশি শুরু হয় এবং তার নিঃশ্বাস প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার অবস্থা সৃষ্টি হয়। অবস্থার অবনতি হতে থাকলে দ্রুত ওই অ্যাপার্টমেন্টেই চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। আসাদের শরীরে বিষক্রিয়ার বিষয়টি মেডিকেল পরীক্ষায় নিশ্চিত হয়েছে বলে দাবি করেছে জেনারেল এসভিআর। তবে এই দাবির পেছনে সরাসরি কোনো উৎস বা সূত্র উল্লেখ করা হয়নি। তবে চাউর হয়েছে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের ষড়যন্ত্রের কথা। এর আগে, তুরস্কের গণমাধ্যমে তাদের সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সঙ্গে স্ত্রী আসমা বিবাহবিচ্ছেদ চান বলে খবর প্রচার হয়। জয়কালে ক্ষয় নাই, আর নিদানকালে উপায় নাই অবস্থা যাকে বলে। হাসিনা, আসাদ, পুতিন আর মোদীতে অবস্থা হুবহু না হলেও বিশ্বের একত্ববাদীদের কারো অবস্থাই স্বস্তিদায়ক নেই। কেউ গেছেন, কারো যাই-যাই দশা। টিকে থাকলেও আছেন জোড়াতলিতে এবং বড় ঝুঁকিতে।  

লেখক: সাংবাদিক-কলামিস্ট; ডেপুটি হেড অব নিউজ, বাংলাভিশন 

বিভি/টিটি

মন্তব্য করুন:

Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2