• NEWS PORTAL

  • শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

শাওন-সাবাদের খাটা খাটুনি

মোস্তফা কামাল

প্রকাশিত: ১২:০৫, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

আপডেট: ১২:১৮, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ফন্ট সাইজ
শাওন-সাবাদের খাটা খাটুনি

দেশ ছেড়ে পালানো শেখ হাসিনা অনুতপ্ত হবেন, ইনিয়ে-বিনিয়ে হলেও ভুল স্বীকার করবেন বা সহচর-সহকর্মীদের দোষী করে নিজের ব্যর্থতার কথা জানাবেন- এমন ভাবনায় তাড়িত একটি মহল আছে। তারা ভাবাবেগে আক্রান্ত। শেখ হাসিনা তেমন কিছু করবেন না, সেই বার্তা তিনি বারংবারই দিচ্ছেন। চট করে না হোক হুট করে হলেও অনেক কিছু করার অভিলাশ তিনি লালন করেন।

এই মিশন নিয়ে তিনি দিল্লি গেছেন। সেখান থেকে ৮১ সালে বাংলাদেশে এসেছিলেন, আবার দিল্লি ফিরে গেছেন চব্বিশে। এটি তার রাজনীতি। মিশনের বাকি কাজ তিনি ওখানে বসেই করবেন। বুধবার সেটির এক ঝলক দেখিয়েছেন মাত্র। রাজনীতির বিশ্লেষকরা যে যেভাবেই দেখেন শেখ হাসিনা এ জায়গায় স্বচ্ছতায় পরিপূর্ণ। ক্ষমতাকালে তিনি যা যা করতে চেয়েছেন প্রায় সবই করেছেন। ক্ষমতা পেলে পিতৃহত্যার প্রতিশোধ, ১৫ আগস্টের ফ্রন্টলাইনারদের হত্যা, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে বাড়িছাড়া করাসহ তার কিছু ঘোষণা ছিল প্রকাশ্যেই। এগুলো তিনি দৃঢ়তার সাথে করেছেন। এখন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতেও তার অনেক কিছু করার ইচ্ছা। সেগুলো বাস্তবায়ন করে ছাড়ার ইচ্ছা তিনি লালন করেন। এখন কে শেখ হাসিনার মিশন উদযাপন করবেন না বরবাদ করবেন- এটা যার যার বিষয়।

ভাবাবেগে একটু ইস্তফা দিয়ে চোখ-কান খোলা রাখলে কারোরই বুঝতে অসুবিধা হবে না যে, দেশে যারা উত্তেজনার আগুন জ্বালিয়ে রাখছে তাদের সামান্য কয়েকজন ছাড়া বাদবাকি সবাই দেশে নেই। গ্রেফতারের আগ পর্যন্ত অভিনেত্রী শাওন- সাবারা দেশে থেকেও অতি সাহসী হয়ে উঠেছিলেন। পাকড়াও হতে সময় লাগেনি। দেশ-বিদেশে সেই সাহসীদের তালিকার ১৬ নম্বরে মেহের আফরোজ শাওনের নাম। আর ১৫ নম্বরে সোহানা সাবা।

স্যোশাল মিডিয়া মাড়িয়ে মূল ধারার গণমাধ্যমেও বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থা থেকে প্রাপ্ত তালিকাটি ঘুরছে। এর সারমর্ম হচ্ছে, গত ১৫ জানুয়ারি কলকাতার হোটেল পার্কে বাংলাদেশ ভারত চেম্বার এন্ড কমার্স এর সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার কান্ট্রি হেড অমিত কুমারের ব্যবস্থাপনায় ভারতের চিত্রপরিচালক পিযুষ কান্তি ভট্টাচার্যের আশ্রয়ে থেকে একটি মিটিং করেন। মিটিং- এ সশরীরে এবং ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন আসাদুজ্জামান খান কামাল, অসীম কুমার উকিল, তার স্ত্রী অপু উকিল, ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, ভোলার সাবেক এমপি নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন, ছাত্রলীগের সাবেক নেতা গোলাম রাব্বানী, লন্ডন প্রবাসী সিদ্দিকী নাজমুল আলম, আল নাহিয়ান জয়, লেখক ভট্টাচার্য, সাদ্দাম হোসেন, শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান, হাজারীবাগ আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মৃত তোরাব আলীর ছেলে লেদার লিটন, বাংলাদেশ ভারত চেম্বার এন্ড কমার্সের সুব্রত সুমন। শেখ হাসিনার ড্রাইভারের ছেলে রুবেল, আলো আসবে গ্রুপের অ্যাডমিন, চিত্রনায়িকা সোহানা সাবা, প্রয়াত লেখক হুমায়ূন আহমেদের দ্বিতীয় স্ত্রী আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি তহুরা আলীর মেয়ে মেহের আফরোজ শাওন। তাদের লক্ষ্য বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করে পুনরায় ক্ষমতা দখল।

সেই লক্ষ্যের অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন ভাগে ভাগ হয়ে ঢাকাসহ গোটা বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার মিশন তাদের। সিদ্ধান্ত হয় জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাসিমকে দেওয়া হয় আন্দোলন ও ধ্বংসাত্মক কাজের সমন্বয়কের দায়িত্ব। গণভবন কোয়ার্টার, আদাবর, প্রশাসনের কর্মকর্তা, পুলিশ ও সেনা কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগের দায়িত্ব শেখ হাসিনার ড্রাইভারের ছেলে ছাত্রলীগ নেতা রুবেলের। লেদার লিটন সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে নেপাল ভ্রমণে গিয়ে সেখান থেকে কলকাতা গিয়ে বৈঠকে অংশ নেন। তাকে দেশে এসে হাজারীবাগ, ধানমন্ডিসহ ঢাকার বিভিন্ন স্থানে নাশকতার দায়িত্ব দেওয়া হয়। ৩৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও মোহাম্মদপুরের যুবলীগ নেতা নানকের কথিত ছেলে তারেকুজ্জামান রাজিব এবং সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের ভাতিজা আসিফকে দেয়া হয় মোহাম্মদপুর ও আশপাশ এলাকায় গণ্ডগোল পাকানোর দায়িত্ব। সাবেক এমপি যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিলের দায়িত্ব পুরান ঢাকা, চানখারপুল, উত্তরাসহ গোটা ঢাকার। ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটকে তার লোকজনকে দিয়ে মগবাজার, গুলিস্তান, তেজগাঁও, বাড্ডা ও বনশ্রী এলাকায় নাশকতা ঘটানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়। সাবেক এমপি ওয়াকিল উদ্দিনের লোকজনকে বাড্ডা, ভাটারা এলাকা। এছাড়া গাজি মেসবাউল হোসেন সাচ্চুর দায়িত্ব বনানী, মিরপুর এলাকা। আর আলো আসবে গ্রুপের অ্যাডমিন চিত্রনায়িকা সোহানা সাবার দায়িত্ব ভারতীয় কূটনৈতিক ও বিভিন্ন লোকজনের সাথে যোগাযোগ রক্ষা। মেহের আফরোজ শাওন এর সমন্বয়ক।

তাদের সবার কাজ গা-গতরে। আর শেখ হাসিনার দায়িত্ব মুখ চালানো। এর অংশ হিসেবে তিনি আবার মুখ খুলেছেন সেদিন। এ নিয়ে ভারতীয় পত্রিকাগুলোর পরিবেশিত সংবাদ বেশ ইন্টারেস্টিং। আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রতিবেদনের একজায়গায় ‘দিল্লি বিরোধী স্লোগান’ উপ-শিরোনাম দিয়ে লেখা হয়: ‘হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই ভারত এবং বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের আকাশে কালো মেঘ জমতে শুরু করে। এমন পরিস্থিতি দু’দেশের মানুষ আগে কখনও দেখেননি।হাসিনা বাংলাদেশ ছাড়ার পরে দিল্লি বিরোধী স্লোগান দেখা গিয়েছে সে দেশে। এবার ফের সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটল হাসিনা বাংলাদেশ ত্যাগের ছ’মাসের মাথায়। আবার উঠল দিল্লি বিরোধী স্লোগান। ৩২ ধানমন্ডির বাড়িটিকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করার পর সেটিই যেন হয়ে ওঠে বিক্ষুদ্ধদের বিজয়ের উল্লাস মঞ্চ। মাইকিং করে চলতে থাকে হাসিনা এবং দিল্লি বিরোধী স্লোগান! একবার দু’বার নয়, ঘন ঘন উঠতে থাকে ‘দিল্লি না ঢাকা…’ স্লোগান।’

শেখ হাসিনার ৪০ মিনিটের বক্তব্য শোনার ধৈর্য অনেকেরই ছিল না বা নেই। পুরোটাতেই স্বভাবসুলভ কুকথা। তারও পর একবিন্দু অনুশোচনাও নেই। আছে বরাবরের মতো দম্ভ মিথ্যা আর উসকানি। শাওন, সাবা, মমতাজরা সেই ছকে পড়েন। পড়তে থাকেন। কিছু নগদ ইনাম, মোহ-মোজ মাস্তি তাদের কাছে অনেক কিছু।

লেখক: সাংবাদিক-কলামিস্ট; ডেপুটি হেড অব নিউজ, বাংলাভিশন

বিভি/এআই

মন্তব্য করুন: