বইমেলায় চাই মত ও চিন্তা চর্চার অবাধ চারণক্ষেত্র

বিতর্কিত ও বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত এক লেখিকার বই রাখায় বাংলা একাডেমির অমর একুশে বইমেলায় একটি প্রকাশনীর স্টলে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
১০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় একদল লোক স্টলটিতে গিয়ে প্রকাশককে ঘিরে ধরে স্লোগান দিতে থাকলে পিরিস্থিতি সামাল দিতে সেই প্রকাশক শতাব্দী ভবকে বইমেলায় পুলিশের নিয়ন্ত্রণ কক্ষে নিয়ে যায়।
পরে পুলিশের নিয়ন্ত্রণকক্ষও ঘিরে রাখে উত্তেজিত জনতা। উত্তেজিত জনতার দাবি, এই প্রকাশক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কটাক্ষ করে ইসলামপন্থিদের ‘জঙ্গি’ বলে গালাগাল করেছেন এবং মেলায় এসে ‘জয় বাংলা-জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিয়ে সাধারণ-জনতার ওপর হামলা করেছেন। ঘটনার পর থেকে বাংলা একাডেমি বন্ধ না করলেও স্টলটি বন্ধ রাখা হয়েছে।
উত্তেজিত জনতার মধ্যে একজন বলেন, প্রকাশক ফেইসবুকে পোস্ট লিখে মুসলমানদের জঙ্গি বলছে। তিনি মেলায় এসেও স্লোগান দিয়ে উত্তেজনা তৈরি করেছেন। পরে আমরা তাকে ঘিরে ধরলে পুলিশ তাকে কন্ট্রোল রুমে নিয়ে যায়। এ বিষয়ে উভয়পক্ষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানানো অব্যাহত আছে। অব্যশ্য প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকেও এ উত্তেজনাকর পরিস্থিতির নিন্দা জানানো হয়েছে।
মূলত বইমেলা হওয়া দরকার বিতর্কিত ও অসামাজিক হলেও সকল মতকে সহ্য করা ও সকল মতের অবাধ বিচরণকেন্দ্র। অসংখ্য মত ও পথের ভিড়ে সেখানে মানুষ তার নিজের জন্য উপযুক্ত চিন্তাধারাকে সেখান থেকে কুড়িয়ে নেবে। তবে কোন ব্যক্তি বা শান্তিপ্রিয় গোষ্ঠির ওপর হামলা কিংবা উগ্রবাদী আচরণের প্রতিবাদের ক্ষেত্রে কোন অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি হলে সেটি স্বতন্ত্র ব্যাপার। কিছুদিন আগে কলকাতা বইমেলায় বাংলাদেশ থেকে কোন স্টল দেয়ার সুযোগ না দিয়ে এক জগণ্য সাম্প্রদায়িক ও উগ্রবাদী মানসিকতার প্রমাণ দিয়েছে ভারত। কিন্তু আমরা যেহেতু অসাম্প্রদায়িকতা ও সম্প্রীতির লালন করে তাই আমাদের সহ্য ক্ষমতা একটু বেশি হওয়া বাঞ্ছনীয়।
বইমেলা ও সংস্কৃতিকেন্দ্রগুলো হওয়া দরকার আদর্শ ও ইতিবাচকতা ছড়িয়ে দেয়ার প্রদর্শনী কেন্দ্র। তাই সেখানে নেতিবাচকতাকেও ইতিবাচকতা দিয়ে দমন করা উচিত। আমাদের ওপর প্রতিবেশী রাষ্ট্র কিংবা অন্য কোথাও থেকে সন্ত্রাসী আক্রমণ ও নেতিবাচক আদর্শের ভাইরাস ধেয়ে এলেও আমরা ইতিবাচক সক্রিয়তা দিয়ে আমাদের উৎকৃষ্ট আদর্শের মহানুভবতা ছড়িয়ে দিতে চাই।
রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের কারণে আমাদের বইমেলায় কিছু স্টল প্রতিস্থাপনের বস্তবতা দেখা গেলেও আয়োজকদের পক্ষ থেকে থাকা চাই সকল দল, মত, ধর্ম, বর্ণ ও শ্রেণী নির্বিশেষে সকলের স্টল বসানোর অবাধ স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা প্রদানের নিরপেক্ষতা। তবে কোন ব্যক্তি-গোষ্ঠি কিংবা প্রতিষ্ঠান যদি তাদের অপরাধবোধের কারণে স্টল না নিয়ে থাকেন সেটি ভিন্ন ব্যাপার।
লেখক: গণমাধ্যম কর্মী ও মুখপাত্র, মুক্ত গণমাধ্যম মঞ্চ
বিভি/এজেড
মন্তব্য করুন: