• NEWS PORTAL

  • শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

রিয়ামুক্ত ইবাদত রোজা : রমজানে ইবাদতের বাহক আল কোরআন

নাসির উদ্দিন

প্রকাশিত: ১২:২২, ৮ মার্চ ২০২৫

ফন্ট সাইজ
রিয়ামুক্ত ইবাদত রোজা : রমজানে ইবাদতের বাহক আল কোরআন

রোজা ‘রিয়া’মুক্ত ইবাদত। অন্য ইবাদতের মধ্যে লোক দেখানো রিয়া থাকতে পারে। নামাজ পড়ছেন আপনি, অন্যরা দেখছে। দান-সদকাও অন্যরা দেখছে। কিন্তু, রোজা দেখার সুযোগ নেই। আপনি রোজা রেখেছেন, সেটা আপনিই জানেন। আল্লাহপাক লোক দেখানো বিষয় পছন্দ করেন না। তাই, রিয়ামুক্ত ইবাদত কবুল হয় বেশি। সেই কারণে রাতের নামাজকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে রিয়ামুক্ত হওয়ার কারণে। কেউ দেখছে না, আপনি একাকী নামাজ পড়ে আল্লাহর দরবারে কাকুতি-মিনতি করছেন। দিনের ইবাদত সিয়াম, রাতের ইবাদত কিয়াম। সেই কারণে রোজাদাররা বিশেষ মর্যাদা পাবেন কেয়ামতের দিন। 

পবিত্র কোরআনের সুরা বাকারাহ’র ১৮৩নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘ইয়া আইয়ুহাল্লাযীনা আমানূ কুতিবা আলাইকুমুছ ছিয়ামু কামা কুতিবা আলাল্লাযীনা মিন ক্বাবলিকুম লা আল্লাকুম তাত্তাকূন’। অর্থ- হে ঈমানদারগণ, যারা ঈমান এনেছ, তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হলো, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যেন তোমরা মুত্তাকী হতে পারো।  

আল্লাহ এক মাস রোজা ফরজ করেছেন। এর কারণ, রমজানে ইবাদতের মাধ্যমে যেন আমরা আল্লাহর রহমত, মাগফেরাত এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাই। তাই রমজানের প্রথম ১০ দিন রহমতের, মাঝের ১০ দিন ক্ষমার এবং শেষের ১০ দিন হলো জাহান্নাম থেকে মুক্তির। পুরো মাসজুড়ে রহমত, মাগফেরাত ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি থাকলেও ১০ দিন ভাগ করে আল্লাহ বিশেষ মর্যাদা দিয়েছেন।

ইফতারের সময় এবং কোরআন খতমের পর দোয়া কবুল হয়। তাই রাসূল (সা.) বলেন, রোজাদারের জন্য দুটি সুসংবাদ, দুটি খুশি রয়েছে। একটি খুশি হলো, সে যখন ইফতার করবে, প্রফুল্লচিত্তে আল্লাহপাকের হুকুম আদায় করবে, সে সময় দোয়া আল্লাহর দরবারে কবুল হয়। আল্লাহপাক যেন আমাদের গুণাহগুলো ক্ষমা করে দেন। কারণ, গুণাহ ক্ষমা হলে দুনিয়া এবং পরকালে আল্লাহপাক প্রশান্তি দেবেন। আমাদের আত্মা শান্তি পাবে। গুণাহর কারণে আমাদের ওপর বিপদ আসে। গুণাহর ক্ষমা পেলে অনেক সমস্যার সমাধান পাবেন। তাই, রাসূল (সা.) ইফতারের সময় দোয়া করতেন। হে, প্রশস্ত দয়াময় প্রভু, আপনি আমাকে ক্ষমা করুন। 

রোজাদারদের জন্য আলাদা খুশির খবর হলো, যখন হাশর হবে তখন আলাদা খাবারের ব্যবস্থা করবেন আল্লাহ। দস্তরখানা বিছিয়ে সেখানে কিছু মানুষ আহার গ্রহণ করবে। একে অপরকে জিজ্ঞেস করবে এরা কারা? তারা হলো দুনিয়ার মধ্যে রোজাদার। আল্লাহপাকের ভয়ে রোজা রাখার পুরস্কার এটি। 

রমজান পবিত্র কোরআনের মাস। বেশি বেশি কোরআন তেলওয়াত করবেন এবং তেলওয়াত শুনবেন। কারণ, কোরআন তেলওয়াত করলে কিংবা শুনলে আল্লাহপাক ঈমান বাড়ার পুরস্কার দেন। কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘মুমিনদের সামনে যখন কোরআন তেলওয়াত হয় তখন তাদের ঈমান বেড়ে যায়। আল্লাহ তাদের ঈমানকে বাড়িয়ে দেন।’ তাই, কোরআন শুনলে ঈমান আলোকিত হবে, আমলের আগ্রহ সৃষ্টি হবে। দুর্বল ঈমানের কারণে অনেকের আমলে আগ্রহ নেই। তাই, ঈমান বাড়াতে হলে অধিকহারে কোরআন তেলওয়াত করতে হবে, বিশেষ করে এই রমজান মাসে। কারণ, এই মাসে ৭০ গুণ বেশি সওয়াব পাবেন অন্য মাসের তুলনায়। কোরআন তেলওয়াত শুনলেও আপনার ভুলত্রুটি শুদ্ধ হবে। তাই, সাহাবায়ে কেরাম রমজান মাসে বেশি বেশি কোরআন তেলওয়াত করতেন। এই কোরআন পড়ে তারা ঈমান বাড়িয়েছেন। আবার রমজানে অপরাধে গুনাহও ৭০ গুণ বেশি।

আল কোরআন কেয়ামত পর্যন্ত অক্ষত। এখানে কোন ধরণের পরিবর্তন, সংশোধন, সংযোজনের সুযোগ নেই। কোরআনের কোন একটি আয়াত কেয়ামত পর্যন্ত পরিবর্তনযোগ্য নয়। কেয়ামত পর্যন্ত কোরআন হেফাজতের দায়িত্ব আল্লাহপাক নিজেই নিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, ‘আমি কোরআনকে অবতীর্ণ করলাম, এই কোরআনকে আমি হেফাজত করবো।’ আল্লাহপাক কোরআন মুখস্থ করাকে সহজ করে দিয়েছেন।পৃথিবীতে আক্ষরিক অর্থে কোন কিতাব মুখস্থ করানো হয় তা দেখবেন না, একমাত্র কোরআন ছাড়া। আল্লাহপাক এই কোরআন মুখস্থ করাকে সহজ করে দিয়েছেন নসিহত হাসিল করার জন্য।

আল্লাহপাক নবীকে অনেক মুজেজা দান করেছেন। সব মুজেজার মধ্যে সেরা মুজেজা হলো কোরআনের মুজেজা। কারণ, অন্যান্য মুজেজা ছিল সাময়িক। রাসূল (সা.) চাঁদকে দুই টুকরো করেছেন। দেখার পর শেষ। রাসূল (সা.) আঙ্গুল দিয়ে পানি বের করেছেন। সমস্যা সমাধানের পর শেষ। রাসূল (সা.) দুধে থু থু নিক্ষেপ করার পর একজনের দুধ হাজারজন পান করেছেন। এসব সাময়িক সময়ের জন্য অলৌকিক ঘটনা হলেও কেয়ামত পর্যন্ত চ্যালেঞ্জ কোরআন। 

আল্লাহপাক কোরআনের শুরুতে বলেছেন, এই কোরআনের মধ্যে যদি কোন সন্দেহ থাকে একটি ছোট সূরার মতো সূরা আন, ছোট্ট সূরা রচনা কর। তোমাদের সন্দেহ হলে কোরআনের মতো একটি কোরআন রচনা কর। আল্লাহ ছাড়া পৃথিবীর সকল থেকে সহযোগিতা নাও। এবং তা পারেনি মক্কার কাফেরগণ। তারপর বলেন, কোরআন বাদ দাও। তাহলে, একটি সূরা রচনা করে দেখাও, তাও পারেনি। পরিশেষে আল্লাহপাক এই বলে সুযোগ দেন যে, তাহলে তোমরা একটি আয়াত রচনা কর। কিন্তু, তারা পারেনি। শেষে আল্লাহপাক বলেন, কোরআনের মোকাবেলা তোমরা কেয়ামত পর্যন্ত করতে পারবে না। তাহলে, তোমরা জাহান্নাম থেকে বাঁচ। জাহান্নামকে তোমরা ভয় কর। যেই জাহান্নাম কাফিরদের জন্য আল্লাহ তৈরি করেছেন। 

কোরআন দেখতে ছোট হলেও লাখ লাখ পৃষ্ঠা লেখা হলেও এর অর্থ শেষ হবে না। এর শব্দ কম, অর্থ বেশি। এটাই হলো আল্লাহপাকের কালামের মুজেজা। পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি মুদ্রিত কিতাব হলো কোরআন। অন্যান্য আসমানি কিতাব বিকৃত হয়ে গেছে, কোরআন বিকৃত হওয়ার সুযোগ নেই। কেয়ামত পর্যন্ত এই কোরআন মানুষের জীবন বিধান। 

রাসূল (সা.) জীবনের শেষ পর্যায়ে বলেছেন, তোমরা যাতে পথভ্রষ্ট না হও, দুটি বিষয় রেখে গেলাম। একটি হলো আল্লাহপাকের কোরআন, অপরটি হলো আল্লাহর রাসূল (সা.) এর হাদীস। তাই, কোরআন এবং সুন্নাহ মতো যা, তা হলো দ্বীন। আর, কোরআন এবং সুন্নাহর বাইরে যা আসবে তা কুসংস্কার, পাপ অথবা বিদয়াত ভ্রান্তপথ। রাসূল (সা.) এক সময় বৃত্ত অংকন করেন এবং চারপাশে তিনি আঁকা-বাঁকা রেখা টানেন। তা দেখিয়ে সাহাবায়ে কেরামদের বলেন, মাঝখানের যে পথ সেটা হলো কোরআন এবং সুন্নাহর পথ। এটাই হলো সিরাতুম মুস্তাকিম। আশপাশের বক্রাকার রেখা হলো ভ্রান্তপথ। তোমরা কোরআন এবং সুন্নাহর পথ গ্রহণ কর। 

আল্লাহ কোরআনকে রমজানের ইবাদতের বাহক বানিয়েছেন। মানুষ নামাজ ছাড়া যেমনি রমজানে কোরআন তেলওয়াত করবে, তেমনি তারাবির মধ্যেও কোরআন তেলওয়াত করবে। ঠিক তেমনি তাহাজ্জুদের মধ্যেও কোরআন তেলওয়াত করবে। সাহাবায়ে কেরাম রমজানের রাতে দীর্ঘ সময় ধরে ইবাদত করতেন। 

বিশুদ্ধভাবে কোরআন তেলওয়াত করা ফরজ। পুরো কোরআন মুখস্থ করা মোস্তাহাব। যতটুকু পড়লে আমাদের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সহীহ হবে ততটুকু শুদ্ধভাবে পড়তে হবে। কমপক্ষে এতটুকু আপনাকে মুখস্থ করতে হবে, যাতে শুদ্ধভাবে নামাজ পড়তে পারেন। ২০ থেকে ৩০টি সূরা বিশুদ্ধভাবে পড়ে নিতে হবে। মুখস্থ করেছেন ঠিক, কিন্তু ‍বিশুদ্ধভাবে পড়তে পারেন না। তাহলে আপনার নামাজ হবে না, রহমতও আসবে না। বরং, বিশুদ্ধভাবে কোরআন না পড়ে, ভুল পড়লে আপনার ওপর রহমত নয় অভিশাপ আসবে। তাই, বিশুদ্ধ তেলওয়াতকারীর মাধ্যমে ব্যক্তিগতভাবে হলেও কোরআন পড়া শুদ্ধ করে নেওয়া ফরজ। 

আল্লাহর কাছে বলতে পারবেন না নামাজে কোরআন তেলওয়াত না জেনে ভুল করেছি। এভাবে ওযর করলে হবে না। কারণ, শিশুকালে মা-বাবা অবহেলা করলেও বালক হওয়ার পর দায়িত্ব আপনার। আল্লাহ বলবেন, মা-বাবাকে শাস্তি দিলাম না শেখানোর জন্য। বালক হওয়ার পরে নিজ দায়িত্বে কোরআন শিখা তোমার উপর ফরজ ছিল। কমপক্ষে ১১টি সূরা হলেও বিশুদ্ধভাবে তেলওয়াত করতে হবে। বয়স ১০০ হলেও কোন ওযর কাজে আসবে না। নামাজে কোরআন দেখে পড়ারও কোন সুযোগ নেই।

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী

 

(বাংলাভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, বাংলাভিশন কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার বাংলাভিশন নিবে না।)

বিভি/পিএইচ

মন্তব্য করুন: