এনসিপির ব্যর্থতার কারণ তাদের নেতৃত্বের বালকসুলভ আচরণ

ইমামুল হক শামীম
এনসিপি ব্যর্থ হবে এটা অনুমেয় ছিল। হয়েছেও তাই। এটা নিয়ে ভবিষ্যতে হয়তো বিস্তর আলোচনা হবে। তবে মোটাদাগে এনসিপির ব্যর্থতার প্রথম কারণ, তাদের নেতৃত্বের বালকসুলভ আচরণ। যদিও এটাই বাস্তব। কারণ এরা সবাই বালক। নবীন-প্রবীনের অভিজ্ঞতার যে মিথস্ক্রিয়া তার সংমিশ্রণ ঘটাতে ব্যর্থ হয়েছে দলটি।
দ্বিতীয়তঃ একটি জনঅভ্যুত্থানকে নিজেদের একক কৃতিত্ব হিসাবে জাহির করতে চাওয়া। আর এ কারণে একে একে গণ-অভ্যুত্থানের বড় শরীকগুলোর তাদের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া। এমনকি আন্দোলনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়া প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদেরও অবজ্ঞা করেছে তারা।
তৃতীয়তঃ একটি স্বতঃস্ফূর্ত গণ-অভ্যুত্থানেরর মাস্টারমাইন্ড প্রতিষ্ঠিত করতে যাওয়া।
চতুর্থতঃ দলীয় আদর্শ নির্ধারণ করতে না পারা। একটুখানি ব্যাখ্যা করে বলি। বর্তমান বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলগুলো মোটামুটি যে কয়টি আদর্শের ওপর রাজনীতি করে এর অন্যতম বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও ধর্ম নিরপেক্ষতা, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী মধ্যমপন্থার উদার গণতান্ত্রিক, ধর্মভিত্তিক ডানপন্থার রাজনীতি ও বামপন্থী রাজনীতি। রাজনীতির মোটামুটি সবকটি আদর্শই বাংলাদেশে বিরাজমান। সেখানে তরুনদের দলটি সঠিক আদর্শ নির্ধারণ করতে পারেনি। তারা ডানের বামে, বামের ডানে দিয়ে কী বুঝতে চেয়েছিল তা আমার মতো সাধারণ আম পাবলিকের মাথার ওপর দিয়ে গেছে। এক্ষেত্রে তাদের উচিত ছিল যে দুর্নীতি বৈষম্য সৃষ্টির জন্য দায়ী এটিকে আদর্শের মধ্যে স্থান দেয়া। হতে পারতো দুর্নীতি ও বৈষম্যমুক্ত সাম্যের বাংলাদেশ ও সবক্ষেত্রে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা। তা না করে তারা জনমনে এমন একটা ধারণা প্রতিষ্ঠা করে ফেললো যে তারা নিজেরাই দুর্নীতিতে নিমজ্জিত এবং অগণতান্ত্রিক।
পঞ্চমত: অন্তর্বর্তী সরকারকে নানান বিষয়ে প্রভাবিত করার চেষ্টা করা।
ষষ্ঠতঃ নিজ দলের নেতাদের মধ্যে কো-অর্ডিনেশন এর অভাব। যার কারণে দলটির নেতারা সমন্বিত কোন রাজনৈতিক বয়ান জনগনকে দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
সপ্তমতঃ তাদের রাজনৈতিক দল করাই উচিত হয়নি। তাদের উচিত হতো রাজনৈতিক মুরব্বিদের ছায়াতলে থেকে রাজনীতির পাঠ নেয়া। সেই সাথে ছাত্র হিসাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে নিজেদের ধীরে ধীরে জাতীয় পর্যায়ের রাজনীতিক হিসাবে প্রতিষ্ঠা করা।
এনিওয়ে, প্রজন্মের অন্যতম হিরোজ এই ছাত্র নেতৃত্ব ব্যর্থ হলেও দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়লে নিশ্চয়ই আবার তারা দেশের জন্য অকাতরে রক্ত দিতে পিছপা হবে না। কারণ এরা যে মশালটা জ্বালিয়ে দিয়েছে এটার পরিধি অনেক বড় অনেক বিস্তৃত।
লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
(বাংলাভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, বাংলাভিশন কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার বাংলাভিশন নিবে না।)
বিভি/এজেড
মন্তব্য করুন: