• NEWS PORTAL

  • রবিবার, ১৯ মে ২০২৪

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

অনাদরে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স

প্রকাশিত: ১৬:৩৬, ৮ জুন ২০২২

আপডেট: ১৮:২৯, ৮ জুন ২০২২

ফন্ট সাইজ
অনাদরে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার-এর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীনে একটি সেবামূলক সংস্থা। যা জনগনের সেবায় ২৪/৭ নিয়োজিত থাকে। যেকোন দুর্ঘটনায় সবার আগে সেবা দানে বদ্ধপরিকর এই সংগঠনের কর্মচারীরা নিদারুন অবহেলায় অনাদারে দিননিপাত করে।

যারা সম্মুখ যোদ্ধা। প্রতিনিয়ত নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে কি পায় তারা? নামমূল্যে বেতন, অল্পপরিমানে রেশন এইতো !

যে ঝুঁকি তারা গ্রহণ করে নিজের জীবন অন্যের তরে বিলিয়ে দেয় সেই হিসাবে কি এতেই যথেষ্ঠ? অথচ অন্য সব বাহিনীর সদস্যরা তাঁদের ঝুঁকি হিসেবে সুযোগ সুবিধা অনেক বেশি পায়, সেই হিসাবে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের মূল্যয়ণ খুবই নগন্য ।

আজ যারা মারা গেল বা যারা আহত হলো তারা কি পাবে? তাদের পরিবার কি পাবে? ১/২/৫ লক্ষ টাকা আর কিছুই না। যারা আহত তাদের চিকিৎসা ৩ থেকে ৬ মাস সংশ্লিষ্ট বিভাগ খোঁজ রাখবে তারপরে সবাই ভুলে যাবে। তাঁরা আবারো ঝাঁপিয়ে পড়বে অন্য কোন আগুনে বা কাউকে উদ্ধার করতে, আবারো শহীদ হবে।

যারা এই মহৎ পেশায় জড়িত সরকারের উচিত সর্বপ্রথম উন্নত প্রযুক্তি ও অধিক পরিমানে প্রশিক্ষণের আয়োজন করা। লাইফ সেফটি সাজ সরঞ্জাম ক্রয় করা। এছাড়া তাদের শতভাগ ঝুঁকি ভাতা বৃদ্ধি করা।  ১০০% স্বাস্থ্য বীমার আওতায় সকল ফায়ার ফাইটারকে নিয়ে আসা। এই যোদ্ধাদের জন্য ১০০% নূন্যতম ০১ কোটি টাকার জীবন বীমা করা । যাতে তার পরিবার অন্তত জীবনধারণ করতে পারে ।

উপজেলায় যিনি একটি স্টেশনের দায়িত্বে থাকেন তিনি স্টেশনের প্রশাসন ও অপারেশনাল প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। একটি ২য় শ্রেনীর স্টেশনে প্রায় ৩০ জন লোকবল এবং কোটি টাকার অর্থমূল্যের সম্পদ থাকে। স্টেশন অফিসার এই লোকবল এবং সম্পদের রক্ষাবেক্ষণ কর্মকর্তা হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

একজন স্টেশন অফিসার বাংলাদেশ জাতীয় বেতন স্কেলের ১২ তম গ্রেডের কর্মকর্তা। যেখানে একটি উপজেলার সকল অফিস প্রধান এবং তার নিন্ম কর্মকর্তা সকলেই ৯ম বা তদুর্ধ কর্মকর্তা। এমনকি একটি থানায় ৩ জন অফিসার্স ইনচার্জ থাকে যারা প্রথম শ্রেনীর কর্মকর্তা। এছাড়া উপজেলার অন্যান্য দপ্তর প্রধান সকলেই প্রথম শ্রেনীর কর্মকর্তা। যার ফলশ্রুতিতে বিভিন্ন সভা সেমিনার ও অন্যান্য অনুষ্ঠানে একজন স্টেশন অফিসারকে বিড়ম্বনার মুখে পড়তে হয়। অথচ গুরুত্ব বিবেচনায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অন্য কোন দপ্তরের চেয়ে কম নয় বরং অনেক বেশি।

এছাড়া একজন স্টেশন অফিসার ২৪/৭ ঘন্টা তার ডিউটি ও সরকারী কাজে নিয়োজিত থাকে । সে স্টেশন ত্যাগ করতে পারেন না। অন্যান্য সরকারী কোন কর্মকর্তাকে ২৪/৭ ঘন্টা তার কর্মক্ষেত্রে উপস্থিত থাকতে হয় না। এর জন্য একজন স্টেশন অফিসারকে বাধ্যতামূলক কোয়ার্টার নিয়ে স্টেশনে উপস্থিত থাকতে হয়। যার ফলে বাসাভাড়া কর্তন করে একজন স্টেশন অফিসার বেতন পায় সাকুল্যে ১৩,৫০০ টাকা যা স্টেশনের সকল কর্মচারীর চেয়ে কম, পক্ষান্তরে একই স্টেশনে কর্মরত আউটসোর্সিং পরিচ্ছন্নতা কর্মী/বাবুর্চি বেতন পায় ১৬,০০০ টাকা। অথচ স্টেশনের যাবতীয় খরচ নির্বাহ করা লাগে স্টেশন অফিসারের পকেট থেকে। এবং স্টেশনের জন্য কোন বরাদ্দ স্টেশন অফিসার পায় না।

স্টেশন অফিসার পদটি ১২ তম গ্রেডের দ্বিতীয় শ্রেনীর গেজেটেড পদ। স্টেশন অফিসারের পরবর্তী পদোন্নতিকৃত পদ ওয়্যারহাউজ ইন্সপেক্টর/ সিনিয়র স্টেশন অফিসার। এই পদে পদোন্নতি পেতে একজন স্টেশন অফিসারের ৭/৮ বছর সময় লাগে। এবং এই পদটিও দ্বিতীয় শ্রেনীর গেজেটেড পদ। যার বেতন স্কেল ১১ তম গ্রেডের। ওয়ার হাউজ ইন্সপেক্টর একটি সরকারী রাজস্ব আদায়ের একটি পদ যেখানে ফায়ার লাইসেন্স এর মাধ্যমে মাসুল নির্ধারণ করা হয় এবং সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান করা হয়। বাংলাদেশ সরকারে কোন সংস্থার ইন্সপেক্টর পদটি ২য় শ্রেনীর নয়। অথচ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এর ইন্সপেক্টর পদটি ২য় শ্রেনীর হওয়াতে সরকারী বিভিন্ন কার‌্যক্রম সম্পাদনে বাধার মুখোমুখি হতে হয়।

ওয়্যারহাউজ ইন্সপেক্টর/সিনিয়র স্টেশন অফিসার এর পরবর্তী পদোন্নতিকৃত পদ হল উপ সহকারী পরিচালক। ‍যিনি একজন জেলা প্রধান হিসাবে কর্মরত। দুঃখজনক হলেও এই পদটি ও ২য় শ্রেনীর ১০ম গ্রেডের পদ। একজন কর্মকর্তাকে উপ সহকারী পরিচালক পদে পদোন্নতি পেতে ১৭/১৮ বছর সময় লাগে তারপরেও সে দ্বিতীয় শ্রেনীর কর্মকর্তা হিসাবে বিবেচিত হয়। যা সরকারী অন্য কোন সংস্থায় বিদ্যমান নেই। এমনকি সচিবালয়ে অফিস সহকারী (১৬ তম গ্রেড) থেকে মাত্র ০৫ বছর চাকুরী করে প্রসাশনিক কর্মকর্তা হলেও ফায়ার সার্ভিস এর কর্মকর্তারা ২২/২৪ বছর ধরে ২য় শ্রেনীর কর্মকর্তা হিসাবে থাকে যা অত্যন্ত অমানবিক এবং ন্যায়সংঙ্গত নয়। 

এছাড়া উপ-সহকারী পরিচালক একজন জেলা প্রধান কর্মকর্তা হওয়ায় তাকে জেলার সকল সভা সেমিনার ও অন্যান্য প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করতে হয় যেখানে অন্যান্য দপ্তরের জেলা প্রধানগণ প্রায় সকলেই ৪র্থ/৫ম গ্রেডের কর্মকর্তা। যার ফলে অত্যন্ত লজ্জাস্কর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। এর ফলশ্রুতিতে উক্ত কর্মকর্তা হিন্যমন্যতায় ভুগে।

জনগনের জান মাল নিরাপত্তায় নিয়োজিত এই বাহিনী অত্যন্ত অবহেলিত নির‌্যাতিত ও বঞ্চিত। একজন অফিসার-এর যদি অন্যান্য অফিসারের সংগে বেতন স্কেলের এত পার্থক্য থাকে তবে সে হিনমন্যতায় ভোগে এবং যা তার কর্মে প্রভাব ফেলে ।

এরচেয়েও খারাপ অবস্থা ফায়ার ফাইটারদের। তারা যে চাকরি করছেন তা দিয়ে না পারেন নিজেকে সমৃদ্ধ করতে। না পারেন পরিবারের সদস্যদের খুশি করতে। 

একজন সৈনিক একটি বাহিনীর প্রাণ। সকল বাহিনীর সৈনিক পায় তার প্রাপ্য সর্বোত্তম। অল্প কিছুদিন পূর্বেও তাদের ছিল অন্য বাহিনীর সাথে বেতন স্কেলেও বৈষম্য। বর্তমান সরকার কমিয়ে এনেছেন। কিন্তু তা কি তাদের জন্য যথেষ্ট? 

বিশ্বের অন্যান্য সকল দেশে ফায়ারফাইটারদের বেতন সর্বোচ্চ। অথচ বাংলাদেশে তা সর্বনিম্ন। অথচ কর্তৃপক্ষের আদেশে দেশকে ভালোবেসে তাঁরা কেবল নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়ে যায়। তাদের নেই কোন প্রমোশন, নেই কোন আলাদা সুবিধা। অন্য সকল সৈনিক যেখানে যোগ্যতা সাপেক্ষে ১ম বা ২য় শ্রেনীর কর্মকর্তা হয়ে চাকুরী জীবন শেষ করেন। ফায়ারফাইটাররা যোগ্যতা সত্বেও ১টি প্রমোশন পেতে ১৮ থেকে ২০ বছর অতিক্রান্ত করতে হয়। ফায়ারফাইটাররা তাদের জীবন অতিক্রান্ত করে পরিবার ছাড়া, তাদের নেই কোন ছুটির নীতিমালা। নেই কোন আধুনিক সুযোগ সুবিধা, নেই কোন প্রনোদনা। 

করোনা কালীন সময়ে সকলেই প্রণোদনা পেলেও ২৪ ঘন্টা ডিউটি করা এই বাহিনী পায়নি কোন আর্থিক সুবিধা। অথচ এরাই দেশের আনসাং হিরো। যাদের কথা কেউ বলে না। সকলেই ব্যাস্ত নিজের  আখের গোছানো কাজে।

 

মন্তব্য করুন:

সর্বাধিক পঠিত
Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2