• NEWS PORTAL

  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

বিমানের ভুতুড়ে কাণ্ড!

জসিম মল্লিক

প্রকাশিত: ১৫:২৭, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২

আপডেট: ১৬:২৯, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২

ফন্ট সাইজ
বিমানের ভুতুড়ে কাণ্ড!

বিমান বহরে এখন ড্রিমলাইনার সহ বোয়িং ৭৭৭ যুক্ত হয়েছে কিন্তু দুর্নীতি দুর হয়নি

আশির দশকে বিমান নিয়ে সাংবাদিক কাজী জাওয়াদ সাপ্তাহিক বিচিত্রায় কভার স্টোরি করে হৈ চৈ ফেলে দিয়েছিলেন। প্রচ্ছদে ছিল কাঁটা চামচ দিয়ে বিমান খাওয়ার দৃশ্য। প্রচ্ছদ এঁকেছিলেন বিখ্যাত কার্টুনিষ্ট নজরল। তখনই জেনেছিলাম বিমানের দূর্নীতি সম্পর্কে। তারপর বুড়িগঙ্গা দিয়ে অনেক জল গাড়িয়েছে। কিন্তু সেই অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। বিমান বহরে এখন ড্রিমলাইনার সহ বোয়িং ৭৭৭ যুক্ত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এটা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু বিমানের তোঘলকি কান্ড মোটেও বন্ধ করা যায়নি। গত ২৬ মার্চ বিমান টরন্টো এসেছিল পরীক্ষামূলক ফ্লাইট নিয়ে। যদিও কোটি কোটি টাকা খরচ করে সেই পিকনিক ফ্লাইট অপ্রয়োজিনীয় ছিল তবুও এই উদ্যোগের প্রশংসা করে লিখেছিলাম। সম্ভবত বর্তমানে বিমানের দীর্ঘতম রুট হচ্ছে  ঢাকা- টরন্টো- ঢাকা ফ্লাইট। টরন্টো থেকে যাওয়ার সময় ননটস্টপ ১৬ ঘন্টা, আসার সময় প্রায় একুশ ঘন্টা। এক ঘন্টার শর্ট বিরতি আছে ইস্তানবুলে। 

কয়েকদিন আগে বিমানের ক্যাপ্টেন নিয়োগ সংক্রান্ত প্রথম আলোতে একটি মতামত পড়ে পিলে চমকে গেছে! খবরটি ভয়াবহ রকম আতঙ্কের!! খবরটি হচ্ছে- এ বছর ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ বিমান বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজ চালানোর জন্য নতুন ১৪ জন চালক নিয়োগ দিয়েছে। এর মধ্যে ৮ জন ক্যাপ্টেন (পাইলট) আর ৬ জন ফার্স্ট অফিসার (এফও) বা কো-পাইলট। কেউ এই উড়োজাহাজের ক্যাপ্টেন অথবা এফও হতে চাইলে যে জিনিস লাগবেই, তা হলো তাঁর কমপক্ষে তিন শ ঘণ্টা ওড়ার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে সে কথা উল্লেখও ছিল। কিন্তু বিমান যে আটজন ক্যাপ্টেনকে নিয়োগ দিয়েছে, তাঁদের মধ্যে মাত্র দুজনের এই অভিজ্ঞতা আছে। বাকি ছয়জনের তা নেই। এই ক্যাপ্টেনদের মধ্যে একজন আবার গত পাঁচ বছর কোনো উড়োজাহাজ চালানইনি। 

নিয়োগ পাওয়া ক্যাপ্টেনদের একজন একসময় চালাতেন এয়ারবাস।  লম্বা প্রশিক্ষণ ছাড়া  এয়ারবাস চালানো কোনো পাইলট কোনো অবস্থাতেই বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজ চালাতে পারেন না। ক্যাপ্টেনদের মধ্যে মাত্র দু ‘জনের উড্ডয়ন অভিজ্ঞতা আছে। কিন্তু যে ছয়জন এফও বা কো-পাইলটকে নিয়োগ করা হয়েছে, তাঁদের একজনেরও তা নেই। নিয়োগ পাওয়া কো-পাইলটদের একজন এয়ারক্রাফট ট্রান্সপোর্ট পাইলট লাইসেন্স পরীক্ষায় দুটি বিষয়ে ডাহা ফেল করেছেন। নিয়োগ পাওয়া ছয়জন এফওর মধ্যে একজনকে ইতিপূর্বে দুটি বেসরকারি এয়ারলাইনস থেকে ‘ইন এফিশিয়েন্সি’ এবং ‘স্কিলের অভাব’-এর কারণে, বরখাস্ত করা হয়েছিল। কিন্তু সেই বরখাস্ত হওয়া ব্যক্তির কো-পাইলটের চাকরিটা পেতে বেগ পেতে হয়নি। কারণ, যে কমিটি তাঁদের নিয়োগ করেছে, সেই রিক্রুটমেন্ট কমিটির সদস্য ছিলেন তাঁর স্বামী।

নিয়োগ পাওয়া ওই ১৪ জনের সবার সঙ্গে ৫ বছরের চুক্তি করা হয়েছে। অথচ বিমান বাংলাদেশ-এর নিয়ম অনুযায়ী এক বছরের বেশি মেয়াদে প্রাথমিক চুক্তি করা যায় না। বাংলাদেশ এয়ারলাইনস পাইলট অ্যাসোসিয়েশন (বাপা) গত ২৮ আগস্ট বিমানের এমডি এবং সিইওকে লেখা একটি চিঠিতে বলেছে, বিমান বাংলাদেশ-এর ভেতরেই ৩০ জন পাইলট আছেন, যাঁরা পদোন্নতি পেয়ে এই পদে আসতে পারেন। কিন্তু শুধু এই নতুন ১৪ জনকে নিয়োগ দেওয়ার জন্য তাঁদের পদোন্নতি আটকে রাখা হয়েছে।

নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় একজন মন্ত্রী বলেছিলেন, ‘রাস্তায় গাড়ি চালানোর জন্য লেখাপড়া জানার দরকার নাই। গরু ছাগল চিনতে পারলেই গাড়ি চালানো যায়’। এখন যদি বিমানের কেউ বলে বসেন, ‘আকাশে শান্তির নীড়, সেখানে গরু ছাগলও নাই, সেখানে মুড়ির টিনের ড্রাইভারও প্লেন চালাতে পারে। কেউ একজন একবার বলেছিলেন, ‘ইউ আর দ্য ফাস্ট ক্লাস প্যাসেঞ্জার, আই অ্যাম দ্য থার্ড; বাট রিমেমবার, দ্য প্লেন ইজ ক্র্যাশিং’।  ফ্লাইটে উঠে মাঝ আকাশে যদি শোনেন যিনি  এই প্লেন চালাচ্ছেন, সে আদতে পাইলট না। সে নাকি আগে নীলক্ষেত টু খিলক্ষেত মুড়ির টিন চালাত। কী জানি কী কায়দা করে সে পাইলট হয়েছে এবং সে এখন এই প্লেন চালাচ্ছে। তার সঙ্গে ককপিটে যে কো-পাইলট আছেন, সে নাকি নছিমনের হেলপার ছিল তখন কেমন লাগবে একবার ভাবুন! 

টরন্টো ৯ সেপ্টেম্বর ২০২২

মন্তব্য করুন: