বেতনের টাকায় করেন রাজনীতি
ফেসবুকে প্রশংসায় ভাসছে বিএনপি নেতার সততার পোস্ট

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাসছে বিএনপি নেতার সততার পোস্ট। যে পোস্টে তিনি নিজেকে সৎ দাবি করে নিজ দলের মঙ্গল কামনা করেছেন। কমেন্টেও দেখা মিলেছে ইতিবাচক সারা। যে পোস্টে তিনি বলতে চেয়েছেন- ‘বিএনপিকে কেউ চাঁদাবাজের দল বললে অন্তরে অনেক কষ্ট লাগে।’ তিনি আরও বলেছেন- ‘আমিও চাঁদাবাজমুক্ত আমার প্রাণের সংগঠন জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি চাই।’
যখন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ সিনিয়র নেতারা বারবার দলের নিয়ম মেনে চলার কথা বলছেন নেতাকর্মীদের। যেতে বলছেন জনগণের কাছে, শুনতে বলছেন তাদের দুঃখ-কষ্টের কথা। ঠিক সেই সময় এমন পোষ্ট দলের জন্য অবশ্যই মঙ্গলকর, বলছেন অন্যরা।
এদিকে, কিছু বিতর্কিত নেতাদের কারণে দলের বদনাম হচ্ছে। মারামারি, চাঁদাবাজির মত ঘটনায় দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে বহিষ্কারও হচ্ছেন অনেক নেতাকর্মী। দলের সুনাম ধরে রাখতে তাদেরও ছাড় দিচ্ছেন না হাইকমান্ড। ঠিক এমন সময় ঢাকা মহানগর উত্তরের তুরাগ থানাধীন ৫২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির কারা নির্যাতিত ও আয়নাঘর থেকে ফেরত আসা নেতা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দল ও নিজের সততার কথা তুলে ধরে একটি পোস্ট করেছেন। সততার এমন সাহসিকতার পোস্টের কমেন্ট বক্সেও প্রশংসায় ভাসছে সেই নেতা ও তার দল বিএনপি। একই সাথে কমেন্টে বলা হচ্ছে, এমন নেতাকর্মী থাকলে দলের সম্মান বৃদ্ধি পাবে, বাড়বে জনপ্রিয়তা। সেই ফেসবুক পোস্ট পাঠকদের উদ্দেশ্যে হুবুহু তুলে ধরা হল।
“বিএনপি’কে কেউ চাঁদাবাজের দল বললে অন্তরে অনেক কষ্ট লাগে।আমি এখনো আমার অফিসের চাকরির বেতনের টাকা দিয়ে দলীয় প্রোগ্রাম করি। আমার দ্বারায় কেউ জুলুমের শিকার হয়েছে বা কারো কাছে থেকে চাঁদাবাজি করেছি এমন কোন তথ্য আর প্রমাণ থাকলে তা সোশ্যাল মিডিয়ায় দিয়ে সহযোগিতা করবেন। আমিও চাঁদাবাজ মুক্ত আমার প্রানের সংগঠন জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি চাই।
মো. আবু বক্কর সিদ্দিক- সাধারণ সম্পাদক,৫২ নং ওয়ার্ড বিএনপি তুরাগ থানা, ঢাকা মহানগর উত্তর।”
এদিকে, বিভিন্ন প্রোগ্রামে দলের হাইকমান্ডের নেতারা বলছেন, বিএনপিতে কোনো চাঁদাবাজ বা সন্ত্রাসীদের জায়গা নেই। এদের বিরুদ্ধে দলীয় ও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যাদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসের অভিযোগ রয়েছে, তাদের বিষয়ে তদন্ত চলছে। কেউ প্রমাণিত হলে সাংগঠনিক ও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা যারা গত ১৫ বছর মাঠে-ঘাটে আন্দোলন করেছি, তারা সবাই ঐক্যবদ্ধ।
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, ‘কিছু দুষ্ট লোক আছে, যাদের জন্য আমাদের দল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যারা চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসী, তারা বিএনপির লোক না। যারা বাংলাদেশের ক্ষতি করে, তারা বিএনপির লোক না। এদের ধরবেন আর আইনের আওতায় সোপর্দ করবেন।’
এমন সৎ সাহসি পোস্ট দেওয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে ৫২নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. আবু বক্কর সিদ্দিক বাংলাভিশনকে বলেন, ‘গুম ঘর থেকে আল্লাহ জীবিত ফিরে এনেছে। নির্যাতনের মাত্রা দেখে মনে হতো মরে যাওয়া ভালো। নতুন জীবন দিয়েছে আল্লাহ। এতো কষ্ট করেছি শুধু দলকে ভালোবাসি বলে। আর ৫ আগস্টের পর কিছু অসৎ নেতাকর্মীর কারণে দলের বদনাম হলে তা মেনে নিতে কষ্ট হয়। তাদের জন্য দলের চেয়ারম্যানকে কথা শুনতে হয় এটা মেনে নিতে পারি না। একটি চক্র যখন বিএনপিকে চাঁদাবাজ ট্যাগ দেওয়ার চেষ্টা করছে তখন বুঝাতে চেয়েছি, বিএনপিতে সৎ রাজনীতি করে এমন নেতাকর্মীর সংখ্যাই বেশি।’
তিনি আরও বলেন, ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশের প্রস্তুতি ঘিরে ৫ অক্টোবর ডিবির মতিঝিল টিম আমাকে উত্তরা থেকে তুলে নিয়ে যায়। গাড়িতে তুলেই পাশবিক নির্যাতন করেন। গুম ছিলাম এক সপ্তাহ। এরপর জামিনে বের হই ২৬ অক্টোবর। দুইদিন পালিয়ে থেকে অংশগ্রহণ করি সমাবেশে। জেল ও খেটেছি এর আগে।
সর্বশেষ বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘জিয়ার আদর্শ বুকে লালন করে বিএনপির রাজনীতিতে এসেছি। আপোষহীন নেত্রী বেগম জিয়ার সততাকে লালন করি। আমাদের আগামীর রাষ্ট্রনায়ক তারেক রহমান স্যারের দিক নির্দেশনা পালন করলে কেউ চাঁদাবাজিতে জড়াবেন না।’
এদিকে, উত্তরের কয়েকটি থানা ও ওয়ার্ডের নেতাকর্মীদের নিয়ে এক প্রোগ্রামে ঢাকা মহানগর উত্তরের যুগ্ম আহ্বায়ক এস এম জাহাঙ্গীর বলেন, ‘দলে যখন চাঁদাবাজি করার চেষ্টায় ব্যস্ত কিছু নেতাকর্মীরা তখন সিদ্দিকের মত নেতারা সততার পরিচয় দেন, তাও ফেসবুকে। এটা আমাদের দলের জন্য সত্যিই গর্বের। এমন সৎ সাহস সবার থাকে না। সব নেতাকর্মী আগামীতে নিজেদের এমন সততার পরিচয় দিবেন এটাই আশা করি।’
বিভি/ইএ/পিএইচ
মন্তব্য করুন: