• NEWS PORTAL

  • শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

এই দিনে চিরবিদায় নেন ‘বাউল সম্রাট’ শাহ আবদুল করিম

প্রকাশিত: ১৬:৫১, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ফন্ট সাইজ
এই দিনে চিরবিদায় নেন ‘বাউল সম্রাট’ শাহ আবদুল করিম

কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী, সুরকার, গীতিকার ও সঙ্গীত শিক্ষক ‘বাউল সম্রাট’ উস্তাদ শাহ আবদুল করিম। তিনি বাউল সঙ্গীতকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। কর্মজীবনে তিনি ৫০০’র সংগীত রচনা করেছেন। সঙ্গীতে অসামান্য অবদানের জন্য ২০০১ সালে তিনি ‘একুশে পদক’ পুরস্কারে ভূষিত হন। এই দিনে (১২ সেপ্টেম্বর) মৃত্যুবরণ করেন শাহ আবদুল করিম।

শাহ আবদুল করিম ইব্রাহিম আলী ও নাইওরজানের ঘরে ১৯১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বর্তমান বাংলাদেশের সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি খুব ছোটবেলায় তার গুরু বাউল শাহ ইব্রাহিম মাস্তান বকশ থেকে সঙ্গীতের প্রাথমিক শিক্ষা নেন। তিনি আফতাব-উন-নেসা কে বিয়ে করেন, যাকে তিনি ‘সরলা’ নামে ডাকতেন।

প্রখ্যাত বাউলসম্রাট ফকির লালন শাহ, পাঞ্জু শাহ এবং দুদ্দু শাহ দর্শন থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে তিনি গান লেখেন। যদিও দারিদ্র তাকে বাধ্য করে কৃষিকাজে তার শ্রম ব্যয় করতে কিন্তু কোন কিছু তাকে গান সৃষ্টি করা থেকে বিরত রাখতে পারেনি। তিনি বাউলগানের দীক্ষা লাভ করেছেন সাধক রশীদ উদ্দীন, শাহ ইব্রাহীম মাস্তান বকশ এর কাছ থেকে। তিনি শরীয়তী, মারফতি, দেহতত্ত্ব, গণসংগীতসহ বাউল গান এবং গানের অন্যান্য শাখার চর্চাও করেছেন।

স্বশিক্ষিত বাউল শাহ আব্দুল করিম এ পর্যন্ত প্রায় পাঁচ শতাধিক গান লিখেছেন এবং সুরারোপ করেছেন। বাংলা একাডেমীর উদ্যোগে তার ১০টি গান ইংরেজিতে অনূদিত হয়েছে। কিশোর বয়স থেকে গান লিখলেও কয়েক বছর আগেও এসব গান শুধুমাত্র ভাটি অঞ্চলের মানুষের কাছেই জনপ্রিয় ছিল। তার মৃত্যুর কয়েক বছর আগে বেশ কয়েকজন শিল্পী বাউল শাহ আব্দুল করিমের গানগুলো নতুন করে গেয়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করলে তিনি দেশব্যাপী পরিচিতি লাভ করেন। ২০০৬ সালে সাউন্ড মেশিন নামের একটি অডিও প্রকাশনা সংস্থা তার সম্মানে জীবন্ত কিংবদন্তিঃ বাউল শাহ আবদুল করিম নামে বিভিন্ন শিল্পীর গাওয়া তার জনপ্রিয় ১২ টি গানের একটি অ্যালবাম প্রকাশ করে। এই অ্যালবামের বিক্রি থেকে পাওয়া অর্থ তার বার্ধক্যজনিত রোগের চিকি‍ৎসার জন্য তার পরিবারের কাছে তুলে দেয়া হয়। ২০০৭ সালে বাউলের জীবদ্দশায় শাহ আবদুল করিমের জীবন ও কর্মভিত্তিক একটি বই প্রথমবারের মতো প্রকাশিত হয়, ‘শাহ আবদুল করিম সংবর্ধন-গ্রন্থ’ (উৎস প্রকাশন) নামের এই বইটি সম্পাদনা করেন লোকসংস্কৃতি গবেষক ও প্রাবন্ধিক সুমনকুমার দাশ। শিল্পীর চাওয়া অনুযায়ী ২০০৯ সালের ২২ মে সিলেট বিভাগীয় কমিশনার ও খান বাহাদুর এহিয়া ওয়াকফ এস্টেটের মোতাওয়াল্লি ড. জাফর আহমেদ খানের উদ্যোগে বাউল আব্দুল করিমের সমগ্র সৃষ্টিকর্ম নিয়ে গ্রন্থ 'শাহ আবদুল করিম রচনাসমগ্র' প্রকাশিত হয়।

শাহ আবদুল করিমের জনপ্রিয় গানের তালিকায় রয়েছে- বন্দে মায়া লাগাইছে, পিরিতি শিখাইছে, আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম, গাড়ি চলে না, রঙ এর দুনিয়া তরে চায় না, ঝিলমিল ঝিলমিল করেরে ময়ুরপংখী নাও, আমি কূলহারা কলঙ্কিনী, কেমনে ভুলিবো আমি বাঁচি না তারে ছাড়া, কেন পিরিতি বাড়াইলারে বন্ধু, মন মজালে ওরে বাউলা গান, আমার মাটির পিনজিরাই সোনার ময়নারে ইত্যাদি।

তার রচিত বইয়ের তালিকায় রয়েছে- আফতাব সঙ্গীত (১৩৫৫ বাংলা; আনুমানিক ১৯৪৮), গণ সঙ্গীত (১৯৫৭), কালনীর ঢেউ (১৩৮৮ বঙ্গাব্দের আশ্বিন; ১৯৮১ সালের সেপ্টেম্বর), ধলমেলা (১৩৯৬ বঙ্গাব্দের ১ ফাল্গুন; ১৯৯০ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি), ভাটির চিঠি (১১ বৈশাখ ১৪০৫; ২৪ এপ্রিল ১৯৯৮), কালনীর কূলে (নভেম্বর ২০০১), শাহ আব্দুল করিম রচনাসমগ্র (সংকলন ও গ্রন্থন: শুভেন্দু ইমাম, ২২ মে ২০০৯)।

বাউল শাহ আব্দুল করিম ২০০১ সালে একুশে পদক লাভ করেন। তিনি আরও যে সকল পদকে ভূষিত হয়েছেন সেগুলো হলো- কথা সাহিত্যিক আবদুর রউফ চৌধুরি পদক (২০০০), রাগীব-রাবেয়া সাহিত্য পুরস্কার (২০০০), লেবাক এ্যাওয়ার্ড (২০০৩), মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার আজীবন সম্মাননা (২০০৪), সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস আজীবন সম্মাননা (২০০৫), বাংলাদেশ জাতিসংঘ সমিতি সম্মাননা (২০০৬), খান বাহাদুর এহিয়া পদক (২০০৮), বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী সম্মাননা (২০০৮), হাতিল এ্যাওয়ার্ড (২০০৯), এনসিসি ব্যাংক এনএ সম্মাননা (২০০৯)।

২০০৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর সকাল ৭টা ৫৮ মিনিটে সিলেটের একটি ক্লিনিকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিম। 

বিভি/পিএইচ

মন্তব্য করুন: