এবি পার্টির আয়োজনে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চিত্র প্রদর্শনী উদ্বোধন

ছবি: জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চিত্র প্রদর্শনী উদ্বোধন
জুলাইয়ের নির্মমতা পৃথিবীর যেকোনো দুঃশাসনের ইতিহাসকে পেছনে ফেলবে। গুম খুন ও বিচিত্ররকম অত্যচারের স্টিম রোলার কীভাবে জন মানুষের হৃদয়ে ঘৃণা ও তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করেছিলো তার চূড়ান্ত প্রকাশ উপলব্ধি করতে হলে জুলাইয়ের ৩৬ দিনের ছবিগুলো দেখতে হবে; এ চিত্র যারাই দেখবেন তারাই বলবেন, বিশ্বে শেখ হাসিনার চাইতে নির্দয় নারী ঘাতক আর আসবে কিনা সন্দেহ আছে!
বুধবার (২ জুলাই) আমার বাংলাদেশ পার্টি ( এবি পার্টি) আয়োজিত ৩৬ দিনব্যাপী জুলাই গণঅভ্যুত্থান উদযাপনের অংশ হিসেবে ‘কোটা না মেধা: এক রক্তস্নাত অধিকারের সংগ্রাম’ শীর্ষক চিত্র প্রদর্শনী ঘুরে দেখে এরকমই প্রতিক্রিয়া জানান উপস্থিত দর্শনার্থীরা।
বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ ড. দিলারা চৌধুরী বিকেল ৪ টায় এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। এবি পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ৪৫ বিজয় নগরে এ প্রদর্শনী প্রতিদিন সকাল ১১ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উম্মুক্ত থাকবে। প্রদর্শনী চলবে আজ থেকে ১৩ জুলাই পর্যন্ত।
এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু'র সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলতাফ হোসাইনের সঞ্চালনায় চিত্রপ্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডা. জাহেদ উর রহমান, শহীদ জিসানের মা জেসমিন আক্তার, শহীদ নুরু ব্যাপারীর স্ত্রী রোমানা বেগম সহ বিশিষ্টজনেরা।
প্রদর্শনীর উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দিলারা চৌধুরী বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর আমরা এখনো কোন গান, সিনেমা, নাটক কিছুই সুন্দরভাবে করতে পারিনি। হাজারো শহীদের রক্তের বিনিময়ে মানুষ মুক্তি পেলো সেটাকে আমাদের ধরে রাখতে হবে, যেভাবেই হোক। এতো ত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ের পর দেশে যদি কোন সংস্কার না হয়, আগের ফ্যাসীবাদি ব্যবস্থাই যদি চলতে থাকে তাহলে শহীদদের স্বজন কিংবা আহত, পঙ্গুত্ববরণকারীদের আমরা কী জবাব দিবো।
তিনি বলেন, রাষ্ট্র সংস্কার যদি সম্ভব না হয়, আবারো নতুন কোন ফ্যাসীবাদের কবলে পড়ি তাহলে আমার ভয় হয়, দেশ একটা গভীর অন্ধকারে ঢেকে যাবে। তিনি সকল রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে দেশ গঠনের আহবান জানিয়ে বলেন, আমরা এই গণঅভ্যুত্থান যদি ধরে রাখতে না পারি এর ভুক্তভোগী আপনাদেরই হতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ক্ষমতার মোহে অন্ধ ও চরম অহংকারী হয়ে শেখ হাসিনা কোটা নিয়ে জাতির সাথে উপহাস করতে চেয়েছিল। সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহর ইচ্ছায় তাঁর অহংকারের চরম শিক্ষা অবধারিত হয়ে পড়ে। ফলে জঘন্যতম নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালিয়েও তার শেষ রক্ষা হয়নি। জুলাইয়ের নির্মমতা স্মরণ করে তিনি বলেন, এ গণহত্যা পৃথিবীর যে কোন পৈশাচিক দুঃশাসনের ইতিহাসকে ম্লান করেছে। গুম, খুন, লুটপাট, হেলিকপ্টার থেকে গুলি, কারফিউ জারিসহ সবধরনের অত্যচার চালিয়ে জনগণকে দমন করার চেষ্টা হয়েছে। জুলাই ৩৬ দিনের নৃশংসতা যেই দেখবে সে-ই বলবে, বিশ্বে শেখ হাসিনার চাইতে নির্দয় নারী ঘাতক আর হতে পারে না। তিনি শেখ হাসিনাসহ সকল খুনী ও সহযোগীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।
ডা. জাহেদুর রহমান বলেন, পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গেছে এখন মনে হয় খুনি হাসিনার কাছে ক্ষমা চাই। তিনি এমন নির্লজ্জ খুনি এখনো ভারতে বসে দেশের মানুষকে হুমকি দিচ্ছে, যারা আন্দোলন করেছে, প্রোফাইল লাল করেছে তারা ক্ষমা চাইলে তিনি ক্ষমা করবেন। কতোবড় আস্ফালন, এখনো খুনীরা দেশের মানুষকে হুমকি দেয়।
তিনি চিত্র প্রদর্শনীর দেখে বলেন, জুলাই নিয়ে গান হওয়া দরকার, সিনেমা হওয়া দরকার, হাজার হাজার ছবি সব জায়গায় প্রদর্শন হওয়া উচিত।
শহীদ জিসানের মা জেসমিন আক্তার বলেন, আমার ছেলে আব্দুর রহমান জিসান রায়েরবাগ শহীদ হন। জিসানের শহীদের পর তার শোক ও দুঃখে তার স্ত্রী আত্মহত্যা করে। আমার একসাথে দুটি সন্তান হারাতে হয়েছে। জিসান ছিলো আমার একমাত্র ছেলে। আমি খুনী হাসিনার বিচার চাই।
শহীদ নুরু ব্যাপারীর স্ত্রী রোমানা বেগম বলেন, আমার স্বামী রায়েরবাগে শহীদ হন। পরিস্থিতি এমন ছিলো আমার স্বামীর লাশটাও তখন আমি আনতে পারিনি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন এবি পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান লে. কর্ণেল (অবঃ) দিদারুল আলম, লে. কর্ণেল (অবঃ) হেলাল উদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার যোবায়ের আহমেদ ভুইয়া, আনোয়ার সাদাত টুটুল, এবিএম খালিদ হাসান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম আহবায়ক আব্দুল হালিম খোকন, ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব সেলিম খান সহ কেন্দ্রীয় ও মহানগরীর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
বিভি/এআই
মন্তব্য করুন: