বিবাড়িয়ায় নির্বাচন: বিএনপি’র সাত্তারের পক্ষে আওয়ামী লীগ

রোববার আশুগঞ্জ চর চারতলা ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় চত্বরে `উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া সমর্থক গোষ্ঠী`র ব্যানারে কর্মিসভা অনুষ্ঠিত হয়। এদিন সন্ধ্যায় উপজেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা বৈঠকে বসেন। বৈঠকের উদ্দেশ্য ১ ফেব্রুয়ারি ব্রাহ্মণবড়িয়া-২ আসনের উপনির্বাচনে উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার জন্য নির্বাচনী এজেন্ট সংগ্রহ করা।
আওয়ামী লীগের উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হানিফ মুন্সী ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যদের এজেন্ট সংগ্রহের নির্দেশনা দেন। বলেন, কে কতজন এজেন্ট দেবেন। বিএনপির মনোনয়নে চারবার এমপি নির্বাচিত হওয়া উকিল সাত্তারের জন্য আওয়ামী লীগ কেন এজেন্ট জোগাড় করে দিচ্ছে- প্রশ্নে হানিফ মুন্সী বললেন, 'তিনি এত দিন একটা দলে ছিলেন। সেই দলের (বিএনপি) কেউ তো এখন তাঁর সঙ্গে নেই। তাঁর সঙ্গে আমরা (আওয়ামী লীগ) আছি।'
শুধু স্থানীয় নয়, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা এবং এমপিরাও নেমেছেন ৪৩ বছর বিএনপির রাজনীতি করা উকিল সাত্তারের পক্ষে। রোববার বিকেলে সরাইলের অরুয়াইলে 'উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া সমর্থক গোষ্ঠী'র জনসভায় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বলেন, 'বিএনপি উকিল সাত্তারকে ছুড়ে ফেলেছে। তারেক জিয়া তাঁর সঙ্গে বেয়াদবি করেছে। প্রধানমন্ত্রী তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন। আমরা তাঁর পাশে আছি।
আচরণবিধি অনুযায়ী এমপিদের ভোটের প্রচারে অংশ নেওয়ার সুযোগ নেই। আচরণবিধি ভেঙে উকিল সাত্তারের পক্ষে রোববার প্রচার চালান আওয়ামী লীগের দুই এমপি জেলার সভাপতি র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী ও উম্মে সালমা নাজমা বেগম শিউলী আজাদ। মোকতাদির চৌধুরী বলেন, 'গণতন্ত্রকে এগিয়ে নেওয়ার চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন সাত্তার সাহেব। তাঁকে বিজয়ী করে গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে হবে।'
বিএনপির এমপিরা গত ডিসেম্বরে দলের সিদ্ধান্তে পদত্যাগ করেন। উকিল সাত্তার পদত্যাগী সাত এমপির একজন। তাঁর পদত্যাগে আসন শূন্য হওয়ার ২০ দিন না পেরোতেই উপনির্বাচনে অংশ নিতে মাঠে নামেন তিনি। দল থেকে পদত্যাগ করে উকিল সাত্তার প্রার্থী হওয়ায় উপনির্বাচনের হিসাব-নিকাশ উল্টে গেছে।
ছেলে মাইনুল হাসান তুষার বলেন, 'আওয়ামী লীগের কাছে সমর্থন চাইনি। আওয়ামী লীগ প্রার্থী দেয়নি, তাই দলটির নেতারা সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাদের সমর্থন দিয়েছেন। জাতীয় পার্টির (জাপা) একাংশও সমর্থন দিয়েছে। এই সমর্থন আমরা লুফে নিয়েছি।
তিনি বলেন, অসমাপ্ত প্রতিশ্রুতি পূরণে তাঁর বাবা নির্বাচন করছেন। বিএনপি রয়েছে ভুল পথে।
যদিও স্থানীয় বিএনপি নেতাদের ভাষ্য, সাত এমপির পদত্যাগের সিদ্ধান্তকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে ও উকিল সাত্তারের সংসদে যাওয়ার পথ প্রশস্ত করতে উপনির্বাচনে প্রার্থী দেয়নি আওয়ামী লীগ। দলটির তিন নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন। তাঁরা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। জাপার দুইবারের এমপি জিয়াউল হক মৃধা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েও সরে গেছেন ভোট থেকে। এই চার প্রার্থী সরে যাওয়ার পর উকিল সাত্তারের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপি নেতা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবু আসিফ আহমেদ। তিনি তিন দিন ধরে 'নিখোঁজ' বলে দাবি করছে দলটি।
নির্বাচনে অংশ নিয়ে দল থেকে বহিস্কার হওয়া বিএনপি নেতা আবু আসিফের বাড়ির ফটক ভেতর থেকে তালাবদ্ধ। তাঁর স্ত্রী মেহেরুন্নেসা বলেন, 'শুক্রবার বিকেল থেকে ফোনে পাচ্ছেন না আবু আসিফকে। তিনি কোথায় আছেন, জানেন না। আমাকে ২৪ ঘণ্টা নজরবন্দি করে রেখেছে। ' মেহেরুন্নেসা জানান, তাঁর ভাই শাফায়েত হোসেন সুমনও শুক্রবার থেকে নিখোঁজ। আবু আসিফের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট আবু মুসাকে বুধবার রাতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন: