• NEWS PORTAL

  • বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

ছাত্র নেতৃত্ব: সংকট বনাম সম্ভাবনা 

তাহমিদ হাসান

প্রকাশিত: ১৪:৩৫, ৭ মার্চ ২০২৪

আপডেট: ১৫:৩২, ৭ মার্চ ২০২৪

ফন্ট সাইজ
ছাত্র নেতৃত্ব: সংকট বনাম সম্ভাবনা 

স্বৈরাচার প্রতিরোধে দ্রোহের আগুন জ্বেলে রাজপথ দখলে নেয় ছাত্র সমাজ। বারংবার স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে এনার্কিস্ট হয়ে নিজেদের অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন তারা। কার্পণ্য করেননি নিজের বুকের তাজা রক্ত উৎসর্গ করতে। যুগের ক্রান্তিলগ্নে ছাত্র নেতৃত্বের ভূমিকা বাহুল্য নাকি বাস্তবতা সে প্রসঙ্গে নিজেদের অভিমত জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা, পাঠকের জন্য তুলে ধরেছেন তাহমিদ হাসান।

‘ছাত্রসংগঠন গুলোকে শুকিয়ে মারা হচ্ছে’

ছাত্ররা ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পালাবদলের সবথেকে বড় প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে। যেকোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে ছাত্ররা সংঘবদ্ধ শক্তে হিসেবে মাঠে নেমে ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকে। শাসকদের সর্বদা প্রশ্নের মুখে রাখতে ও জনগণকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ রাখতে ছাত্রদের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ের কোনো  বিকল্প নেই। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আপাত গণতান্ত্রিক ছাত্ররাজনীতি চোখে পড়লেও কার্যত গোটা ক্যাম্পাসের সর্বোত্র ছাত্রলীগ ও প্রশাসনের স্বৈরাচার-দখলদারিত্ব বিদ্যমান। সব হলগুলো দখলদার বাহিনীর দখলে, ক্যাম্পাসের যত্রতত্র তারা চাঁদাবাজি করে বেড়ায়, টিএসসির সংগঠনগুলোতি তাদের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ দখল থাকে। সাথে রয়েছে পদে পদে প্রশাসনিক হয়রানি। অন্যদিকে ক্যাম্পাসের ডিপার্টমেন্টগুলো ছাত্রদের সর্বদা পরীক্ষার চাপে রাখে। কোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে গেলে কোর্সে নাম্বার কমানোর ভয় দেখানো হয়। এই পরিস্থিতে ভিন্ন মতের ছাত্রসংগঠনগুলোর গণতান্ত্রিক পরিসর ছোট করতে করতে শুকিয়ে মেরে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে। এই চতুর্মুখী দমবন্ধ পরিবেশে ক্যাম্পাসে নেতৃত্ব তৈরির অবস্থা নেই।

উমামা ফাতেমা
স্নাতকোত্তর, প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

‘স্বৈরাচারবৃত্তি ধ্বংসে ছাত্র নেতৃত্বের উত্থান জরুরী’ 

ছাত্র সমাজ একটি দেশের আর্থসামাজিক এবং রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাস অত্যন্ত গৌরবোজ্জ্বল; শিক্ষার অধিকার আদায়, জাতীয় সংকট নিরসনে ছাত্র সমাজ সব সময়ই তৎপর ছিলো। ইতিহাসের দিকে আলোকপাত করলে দেখা যায়, ১৯৫২ তে ভাষা আন্দোলন, ’৬২ এর শিক্ষা আন্দোলন ’৬৬ তে ছয় দফা, ’৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধ, ’৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন, ২০১৩ তে যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি কিংবা ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন; বাংলাদেশের স্বাধিকার আন্দোলন থেকে শুরু করে প্রতিটা সংগ্রামেই ছাত্র সমাজ সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে। চলমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, ভোটচুরি, দুর্নীতি, অর্থপাচার, সিন্ডিকেট, সন্ত্রাস, শিক্ষা নিয়ে বানিজ্যের বিরুদ্ধে ছাত্র সমাজকেই অতীতের মত এগিয়ে আসতেই হবে। একটি গনতান্ত্রিক রাষ্ট্রে মুক্ত গনতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা এবং মুক্তবুদ্ধি চর্চার একটি আদর্শ প্লাটফর্ম হলো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। কিন্তু বর্তমান সময়ে মেধাবী শিক্ষার্থীদের রাজনীতি বিমুখতা, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের মাত্রাতিরিক্ত দুর্বৃত্ততা ক্যাম্পাসগুলোতে অগণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টির জন্য প্রধানত দায়ী। সংকটগুলো নিরসনে প্রতিটা ক্যাম্পাসেই ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে এবং ভিন্ন মতের-চিন্তার মানুষগুলোর সহবস্থানের মাধ্যমে ক্যাম্পাসগুলোতে শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।

রাশেদ খান 
স্নাতকোত্তর, রসায়ন বিভাগ।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

‘অধিকার আদায়ের জন্যই দরকার ছাত্র নেতৃত্ব’

৫২র ভাষা আন্দোলন, ৬৯র গণঅভ্যুত্থান, ৭১র মহান মুক্তিযুদ্ধ বা ৯০র স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন- বাংলাদেশের সকল গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলন সংগ্রামে ছাত্রদের ভূমিকা অবিস্মরণীয়। অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে এদেশের ছাত্ররা বরাবরই আপসহীন ছিল। যার মধ্যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা সমসময় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে এসেছে। আর তাদের অধিকাংশই আসতো বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক ছাত্র সংসদ গুলো থেকে। পরিতাপের বিষয় সকল ছাত্র সংসদ এখন বন্ধ। যার ফলে শিক্ষার্থীরা ভুলে যাচ্ছে তাদের অধিকার আদায়ের লড়াই। সাহস ও শক্তির অভাবে নানা অন্যায় ও অভ্যন্তরীণ স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারছে না, রুখে দাঁড়াতে পারছে না। দেশের  একমাত্র বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আমাদের গণ বিশ্ববিদ্যালয়েও ছাত্র সংসদ হয়েছিলো। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর নির্দেশনায় দীর্ঘ সময় ছাত্রদের হয়ে পক্ষে বলেছে এই সংসদ। কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ করে রাখা হয়েছে। অধিকার সচেতন শিক্ষার্থীদের উচিত তাদের ন্যায্য দাবীর পক্ষে সোচ্চার হওয়া।

মো: নাদিম খান 
১ম বর্ষ, বাংলা বিভাগ।
গণ বিশ্ববিদ্যালয়।

‘শিক্ষার্থীরা সমাজ পরিবর্তনের আলোকবর্তিকা’

ছাত্রদের শিক্ষা তথা যেকোন অধিকার আদায়ের আন্দোলনেরই গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে। যেকোন অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে অংশগ্রহণ করা প্রত্যেকটি ছাত্রেরই ঐতিহাসিক কর্তব্য বলে মনে করি। ৬২ থেকে হালের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তবে বর্তমান সরকার  যেনো অতীতের শিক্ষা ব্যবস্থারই ভূত পোষে! বাংলাদেশের প্রায় সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই  শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। উপরন্তু শিক্ষানীতি-শিক্ষাক্রমে বারবার পরিবর্তন এনে শিক্ষার্থীদের গিনিপিগে পরিণত করা হচ্ছে। আমরা একটি কথা সবাই জানি কিংবা শুনেছি,"একটি দেশেকে ধ্বংস করতে চাইলে সবার আগে সে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দাও"। ছাত্র রাজনীতিকে বলা হয় নেতৃত্ব তৈরির বাতিঘর। অথচ আমরা দেখবো বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে কোন ভিন্নমত পোষণ করলেই ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের দমন-পীড়ন, অত্যাচার,নিপীড়নের স্বীকার হতে হয়। ফলত  ক্যাম্পাসগুলোতে ভয় সৃষ্টি করে ছাত্র নেতৃত্ব সৃষ্টি হওয়ায় বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। তবে ঐতিহাসিক অনুপ্রেরণা এবং গণতান্ত্রিক শিক্ষা-রাষ্ট্র ব্যবস্থার আকাঙ্খা ছাত্র সমাজের মধ্যে পরিবর্তনের শক্তি জোগাবে। শিক্ষার্থীরাই বর্তমান তমসাচ্ছন্ন অবস্থার পরিবর্তনে আলোকবর্তিকা হয়ে পথ দেখাবে। 

ফাতেমা রহমান বীথি 
১ম বর্ষ, আইন বিভাগ।
নারায়ণগঞ্জ ‘ল’ কলেজ।

লেখক: তাহমিদ হাসান, শিক্ষার্থী, গণ বিশ্ববিদ্যালয়, আইন বিভাগ, ২য় বর্ষ।

(বাংলাভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে পাঠকের লেখার মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, বাংলাভিশন কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার বাংলাভিশন নিবে না।)

বিভি/এজেড

মন্তব্য করুন:

সর্বাধিক পঠিত
Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2