• NEWS PORTAL

  • শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

বাবার পরিচয় দিতে আজও বুকটা ভরে উঠে

মো.শরীফ উদ্দিন, দক্ষিণ আফ্রিকা

প্রকাশিত: ১৫:১১, ১৮ জুন ২০২৩

ফন্ট সাইজ
বাবার পরিচয় দিতে আজও বুকটা ভরে উঠে

১৯৯৭সালের ২০জুন ঢাকা থেকে ১সাপ্তাহের জন্যে বাবা বাড়ীতে আসেন। তিনি আসার সময় বাংলা অর্থসহ কোরআন শরীফ পড়তে আমাদের জন্য নিয়ে আসেন। বাবার হাত ধরে তার জীবনের শেষ নামাজ মসজিদে গিয়ে পড়ার সুভাগ্য হয়েছে। তিনি মসজিদে আশা যাওয়ার সময় মৌলিক দোয়াগুলো আমাকে শিখাতেন। জীবনে সকল ক্ষেত্রে ইসলামকে জীবন ব্যবস্থা মানার জন্যে বলতেন। কর্মস্থলের ছুটি কাটানো ৭দিন শেষ, আগামীকাল নোয়াখালী থেকে ভোরের গাড়িতে গিয়ে তিনি ঢাকায় অফিস করবেন। আজ সন্ধার সময় বাবার (হৃদক্রিয়া বন্ধ) হার্টস্টোক হলে ২ঘন্টার ব্যবধানে তিনি আল্লাহর ডাকে চলে গেলেন। হায়াতের কি নির্মম বাস্তবতা ঢাকা আর যাওয়া হলোনা। বাবাকে কবরের যাত্রী হতে হয়েছে।


আমার বাবা ১৯৯৭ সালের ২৭জুন শুক্রবার রাত ৯টার সময় পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়াছেন। দেখতে দেখতে ২৬টি বছর পার হয়ে গেল। কিন্তু আজও একটি মহত্বের জন্য বাবাকে ভুলতে পারিনি, মনে পড়ে অবিরত। বাবার স্মৃতিগুলোকে বুকে ধারন করে বেঁচে আছি। জীবনের সকল ক্ষেতে তিনি ছিলেন অনুপেরণা।


আমি গর্ব করি আমার বাবাকে নিয়ে। আমার বাবা মরহুম এম এ হালিম ফোরম্যান ছিলেন একজন সৎ, আদর্শ বান, প্রজ্ঞাবান ও বিচক্ষণ। অল্প সময়ে তার নাম ডাক সুনাম কোম্পানীগঞ্জে ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়ে। বাবা এক সময় বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণীর ধনী হাজ্বী জহিরুল ইসলামের মিন্নাস কোম্পানীতে কর্মরত ছিলেন। তিনি এলাকার সবার সাথে আন্তরিকতা দিয়ে হাসি মুখে কথা বলতেন। সুখে দুখে মানুষের পাশে থাকতেন। দুঃস্থ অসহায়দের পাশে দাঁড়াতেন। বাবার সুন্দর ব্যবহার, মুয়ামালাতের কারণে এখনো ওনাকে এলাকার মানুষ বেশি স্মরণ করে থাকেন। তিনি সারাজীবন সামাজিক সেবামূলক সংগঠনের পাশে থেকে মানুষের সেবা করে গেছেন। আজ আমাদের মাঝে বাবা নেই। আছে, বাবার স্মৃতি, আদর, ভালোবাসা, মধুর শাসন ও নৈতিক শিক্ষা।


বাবার পরিচয় দিতে আজও গর্বে বুকটা ভরে ওঠে। আমার ভাই বোনের মধ্যে আমি পঞ্চম। আমার বয়স যখন সাত বছর। সে সময় ৪৭ বছর বয়সে বাবাকে হারালাম। তখন থেকে পরিবারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন বড় দু'ভাই মোহাম্মদ আব্দুল বাকী ও ইব্রাহীম খলিল। তবুও বাস্তব জীবনে সমাজে বসবাস করা অনেক কঠিন। মাথার উপর বাবার ছায়া কী জিনিস হাড়ে হাড়ে বুঝতে পেরেছি। বাবা হারানো স্মৃতি আজও ভুলতে পারিনি। পরিবারে মা ও আমরা ৪ ভাই ৩ বোন। সবার ভরণপোষণ লেখা-পড়ার খরচ বাবা একাই বহন করতেন। বাবা তার জীবনে ইচ্ছে গুলোকে প্রধান্য না দিয়ে আমাদের (আদরের সন্তানের) ইচ্ছে গুলোকে গুরুত্ব দিয়ে গেছেন। টাকা পয়সা, সম্পত্তি, বাড়ী গাড়ির চেয়ে সন্তানের লেখা-পড়াকে গুরুত্ব দিয়াছেন। তিনি বলতেন আমার সন্তানই আমার আসল সম্পদ। তারাই দেশ ও জাতীর মুখ উজ্জ্বল করবে। তিনি সব সময় আমাদের নিয়ে গর্ব করতেন। সারাজীবন নিরবে নিভৃতে নিজের সবকিছু বিলিয়ে গেছেন। বাবা আজ দুনিয়াতে নাই এখন তার সন্তানদের সবকিছু হয়েছে। অথচ এতো ত্যাগ তিতিক্ষার ফল বাবা ভোগ করতে পারলেন না। সন্তানদের জন্যে এর চেয়ে জীবনে বড় দুঃখ আর কি হতে পারে।


আমরা জানি প্রত্যেক জীবনকেই মৃত্যু বরন করতে হবে। আর চিরন্তন সত্যি হলো মৃত্যু। তবে কিছু মৃত্যুর মৃত্যু হয় না, শুধু দেহটাই হয়তো আড়াল হয়। বাবার মৃত্যুটাও শুধু দেহ থেকে প্রাণ ত্যাগ করেছে। কিন্তু তাঁর কর্ম, নৈতিক শিক্ষা, আদর্শ সবার কাছে স্মৃতি হয়ে থাকবে। আমার বাবা এমনই এক জন যাঁকে ভালবাসায়, স্মৃতিতে, স্মরণে, আদর্শে ধারন করেই পথ চলছি, চলবো তাঁর গর্বিত সন্তান হয়ে। 


বাবা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সম্পদ। আদর, স্নেহ, ভালোবাসা, আস্থা, ভরসা, বিশ্বস্ততা আর পরম নির্ভরতার নাম বাবা। অসংখ্য গুণাবলী দিয়ে আল্লাহ তায়ালা শ্রেষ্ঠ নেয়ামত বাবাকে নির্ধারণ করে সন্তানকে দিয়াছেন। পরোকালেও হিসাবের দিন আদম সন্তানদের নামের সাথে যার নাম যুক্ত করে ডাকা হবে তিনি হলেন বাবা। বাবা ডাকটা সবচেয়ে সুন্দরও মধুর। জীবনে সবকিছু বিসর্জন, বহু ত্যাগ স্বীকার করে সন্তানকে ছায়ার মতো আগলে রাখেন একমাত্র বাবা।


জীবনের সকল ক্ষেত্রে বাবা থেকে বেঁচে থাকার শক্তি পায় সন্তান। প্রতিটি সন্তানের কাছে বাবা মানে শক্তি সাহস আর অনুপ্রেরণা। বাবার প্রতি সন্তানের চিরন্তন ভালোবাসার প্রকাশ প্রতিদিনই ঘটে। বাবার ভালোবাসা বিশেষ কোনো একদিনের মাঝে সীমাবদ্ধ থাকে না। সন্তানের জন্য প্রতিদিন বাবা দিবস। বাবা মানে একটু শাসন, অনেক বেশি সাগর সমতুল্য ভালোবাসা।


বাবা নামের মানুষটা বট বৃক্ষের মতো। যে বৃক্ষের ছায়া সন্তানের জন্যে একমাত্র অবলম্বন। জীবনের সকল কিছু থেকে বাঁচিয়ে রাখে। সন্তান দৃঢবিশ্বাসের সাথে শক্তি সাহস ভরসা পায় যার কাছে থেকে তিনি হলেন বাবা। বাবা নামক বৃক্ষটি যখন হারিয়ে যায়। সন্তানের জীবনে নেমে আসে দুঃখ। তখন বটবৃক্ষের নিচে থাকা গাছগুলোর মতো বাবা হারা সন্তাদের সমস্ত ঝড়-বৃষ্টি-রোদ মোকাবেলা করে পৃথিবীতে টিকে থাকতে হয়। ঠিক তেমনি আমাকেও অনেককিছু মোকাবেলা করতে হয়েছে।


বাবা শব্দটা দুই অক্ষর বিশিষ্ট কিন্তু এর ভিতরে সীমাহীন গহীনে রয়েছে হৃদয়ের স্পন্দন। বাবার হাজারও ত্যাগ তিতিক্ষা এবং কত সহস্র যে ভালোবাসা লুকোনো থাকে তা প্রতিটি সন্তান ভালো করে জানে। বাবাকে নিয়ে যত কথা, যত স্মৃতি আছে। তা বলতে বা লিখতে গেলে আমার দ্বারা শেষ করা সম্ভব নয়। তবে দীর্ঘ আয়ু নিয়ে বাবা বেঁচে থাকা সবার ভাগ্যে থাকেনা।

 

মন্তব্য করুন: