দেশের বিভিন্ন জেলায় বজ্রপাত ও কালবৈশাখির তাণ্ডবে ১৪ জনের মৃত্যু
ছবি: সংগৃহিত
দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকটি জেলা ছাড়াও দেশের ৯টি জেলায় বজ্রপাত ও কালবৈশাখি ঝড়ের তাণ্ডবে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছেন অনেকে। পিরোজপুর, ঝালকাঠী ও খুলনা জেলায় রবিবার (৭ এপ্রিল) সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কালবৈশাখী ঝড়ে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে অসংখ্য গ্রাম। এ সময় গাছ চাপা পড়ে ও বজ্রপাতে কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে।
পিরোজপুরে কালবৈশাখীর আঘাতে শতাধিক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্তসহ নিহত হয়েছে একজন। আহত হয়েছে অন্তত ২০ জন। এছাড়া, ঝড়ের সময় বজ্রপাতে ঝালকাঠি, ভোলা, খুলনাসহ বিভিন্ন জায়গায় ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এধিকে, রূপসা নদীতে ঝড়ের কবলে পড়ে পিলারে ধাক্কা খেয়ে টিএসপি সারবোঝাই একটি কার্গো ভ্যাসেল ডুবে গেছে। এ ঘটনায় নিখোঁজ দুইজন।
পিরোজপুরে রবিবার সকাল ৯টার দিকে কালবৈশাখী আঘাত হানে । ঝড়ের সময় গোটা পিরোজপুর রাতের জেলা অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যায়। এ সময় বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় বিদ্যুৎ সংযোগ। এতে পিরোজপুরের সঙ্গে বরিশালের সড়ক যোগাযোগসহ বিভিন্ন এলাকার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরে গাছাপালা সরিয়ে যোগাযোগ স্বাভাবিক করে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসসহ স্থানীয়রা।
পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান জানান, জেলায় ঝড়ে রুবি নামের এক গৃহবধূ মারা গেছেন। এ সময় তার ৮ মাসের শিশু মেহেজাবিন গুরুতর আহত হয়।
এদিকে, খুলনায় রূপসা নদীতে নির্মিত খুলনা রেল ব্রিজের পূর্ব প্রান্তের পিলারে ধাক্কা খেয়ে টিএসপি সারবোঝাই এম ভি থ্রি লাইট- ১ নামে একটি জাহাজ ডুবে গেছে। এ ঘটনায় দুইজন নিখোঁজ রয়েছেন। রবিবার সকাল আটটার দিকে চালনা পৌঁছে ঝড়ের কবলে পড়ে জাহাজটি। দ্রুত নোঙ্গর করে বিপদমুক্ত হলেও ১১ টার দিকে ব্রিজের পূর্ব প্রান্তের তৃতীয় নাম্বার পিলারে ধাক্কা খেয়ে ডুবে যায় জাহাজটি।
ঝালকাঠির কাঁঠালিয়ায় ব্রজপাতে মারা গেছে দুই নারী ও এক শিশু। ঝড়ের সময় মাঠ থেকে গবাদি পশু আনতে গিয়ে তারা ব্রজপাতে মারা যায় বলে জানায় পুলিশ।
কালবৈশাখী ঝড়ে তছনছ হয়ে গেছে ভোলার লালমোহন উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বহু ঘর-বাড়ি। রোববার বেলা ১১টার দিকে লালমোহনে হঠাৎ করেই বইতে শুরু করে ঝড়। প্রায় ঘণ্টাখানেক ধরে চলে ঝড়ের তাণ্ডব। এতে ঘর চাপা পড়ে ও বজ্রপাতে দুইজন নিহত হয়েছেন।
জানা গেছে, ঝড়ের প্রভাবে উপজেলার বদরপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে ঘর চাপা পড়ে হারিছ আহমেদ (৭০) নামে একজন নিহত হয়েছেন। তিনি পার্শ্ববর্তী ফরাজগঞ্জ ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা।
একই সময় বজ্রপাতে উপজেলার চরভূতা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের চরলেঙুটিয়া গ্রামে মো. বাচ্চু নামে (৩৫) এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি ওই এলাকার কয়ছর আহমেদের ছেলে। এছাড়া ঝড়ে দুই শতাধিক ঘর-বাড়ির ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে।
পটুয়াখালীর বাউফলে কালবৈশাখী ঝড়ে রাতুল (১৪) নামের এক কিশোর ও সুফিয়া বেগম (৮৫) নামের এক বৃদ্ধা নিহত হয়েছেন। সন্ধ্যায় বাউফলের তেঁতুলিয়া নদী থেকে ভাসমান অবস্থায় ইব্রাহিম ফরাজী (৪৩) নামে এক জেলের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের মান্নান ফরাজীর ছেলে। ঝড়ের সময় ইব্রাহিম ও ইসমাইল রাঢী নদীতে মাছ ধরছিল। ইসমাইল রাঢী এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (রাত ১০টা) নিখোঁজ রয়েছেন।
পার্বত্য জেলা রাঙামাটি জেলার রাজস্থলী উপজেলায় বজ্রপাতে সাজেউ খিয়াং (৪৮) নামে একজন নিহত গেছেন। রোববার (৭ এপ্রিল) বিকেলে এ বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে।
যশোর জেলার ঝিকরগাছা উপজেলায় ধান ক্ষেতে কাজ করতে গিয়ে বজ্রপাতে আব্দুল মালেক পাটোয়ারী (৬০) নামে এক কৃষক নিহত হয়েছেন। সকালে উপজেলার বড়পোদাউলিয়া গ্রামের বিলে এ ঘটনা ঘটেছে। ঝিকরগাছার শংকরপুর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য পোদাউলিয়া গ্রামের জাহান আলি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। নিহত আব্দুল মালেক উপজেলার বড়পোদাউলিয়া গ্রামের মৃত ওমর আলি পাটোয়ারীর ছেলে।
বিভি/এমআর
মন্তব্য করুন: