ধসে পড়লো ৬২৯ কোটি টাকার ধরলা প্রকল্প, আতঙ্কে গ্রামবাসী

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের সারডোব গ্রামে ধরলা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটি মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়েছে। প্রায় ৩৫০ মিটার দীর্ঘ বাঁধটির ৩০ মিটার অংশে শুক্রবার রাত থেকে সিসি ব্লক একের পর এক ধ্বসে যাচ্ছে। এ অবস্থায় সহস্রাধিক পরিবার ও কয়েক হাজার হেক্টর আবাদি জমি হুমকির মুখে পড়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ইতোমধ্যেই বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করছে। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, ডাম্পিং জোনে পর্যাপ্ত সিসি ব্লক ফেলা হয়নি। ফলে পানির প্রবল স্রোত বাঁধটিকে আঘাত করছে এবং ধসের ঝুঁকি বাড়ছে।
শুক্রবার রাত থেকেই স্থানীয়রা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। গ্রামবাসী জানান, একের পর এক সিসি ব্লক দেবে যেতে দেখে তারা অসহায় হয়ে পড়েছেন। বাঁধ রক্ষায় জরুরি ব্যবস্থা না নিলে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটতে পারে। প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়ম ও অবহেলার কারণে বারবার এমন পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
সারডোব গ্রামের কৃষক সিরাজুল ইসলাম ও নজরুল ইসলামসহ অনেকেই বলেন, “এই বাঁধ আমাদের রক্ষার কবচ। ধসে গেলে কয়েক হাজার হেক্টর আবাদি জমি ও সহস্রাধিক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ২০২২ সালের বন্যার ক্ষতি আমরা এখনও সামলে উঠতে পারিনি। এবার যদি বাঁধ ভেঙে যায়, গ্রামটি পুরোপুরি বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে।”
অন্য এক কৃষক আব্দুল হোসনের অভিযোগ, বাঁধের কাজে অনিয়ম হয়েছে। “প্রয়োজনীয় সিসি ব্লক না ফেলার কারণে বাঁধ এখন স্রোতের আঘাত সহ্য করতে পারছে না। বাঁধটি যদি রক্ষা না হয়, আমরা নিঃস্ব হয়ে যাব,” তিনি বলেন।
কুড়িগ্রামে ধরলা নদীর তীর সংরক্ষণের জন্য ২০২০ সালে ৬২৯ কোটি টাকার ‘ধরলা প্রকল্প’ হাতে নেওয়া হয়। এর আওতায় ২০ কিলোমিটার ২৯০ মিটার নদীতীর সংরক্ষণ, ১৭ কিলোমিটার ৯০০ মিটার বিকল্প বাঁধ নির্মাণ এবং ১৪ কিলোমিটার ৮৮৯ মিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ পুনরাকৃতিকরণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই ৯৭ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলে দাবি করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
এই প্রকল্পের ফলে প্রায় ২২ হাজার ৪০০ পরিবার, ৫০টি হাট-বাজার, ৩০টি নৌ-ঘাট ও ১০ হাজার হেক্টর আবাদি জমি বন্যার কবল থেকে রক্ষা পেয়েছে। তবে সারডোব গ্রামের বাঁধে নতুন করে ধসের শঙ্কা প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রশ্ন তুলছে।
এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম পাউবোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (এসডিই) মুন্না হক জানান, উজানে চর জেগে উঠায় নদীর গতিপথ পরিবর্তিত হয়ে স্রোত সরাসরি বাঁধে আঘাত করছে। এ কারণে বাঁধের কিছু অংশ দেবে গেছে। তিনি আরও বলেন, “আমরা আপাতত জিও ব্যাগ ফেলছি। পানি কমে গেলে ক্ষতিগ্রস্ত অংশ মেরামত করা হবে।”
এ প্রসঙ্গে পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো: রাকিবুল হাসান জানান, ধ্বসে যাওয়া প্রকল্প এলাকায় রংপুরের ঠিকাদার হাসিবুল হাসান কাজ করেছেন তবে কাজ হস্তান্তর হয়নি। বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হলে সম্পূর্ণ দায়ভার ঠিকাদারকেই নিতে হবে। “আমরা সর্বদা বাঁধটির ওপর নজর রাখছি। আপাতত জিও ব্যাগ ফেলে বাঁধ রক্ষা করা হচ্ছে। পানি নেমে গেলে নিয়ম অনুযায়ী মেরামত করা হবে বলে জানান নির্বাহী প্রকৌশলী।
বিভি/এজেড
মন্তব্য করুন: