• NEWS PORTAL

  • মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

‘মরণফাঁদ’ পেরিয়েই বাড়ি যেতে হবে সাফজয়ী মগিনী বোনদের

এইচ এম প্রফুল্ল, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১২:৫১, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২

আপডেট: ১৭:২৬, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২

ফন্ট সাইজ
‘মরণফাঁদ’ পেরিয়েই বাড়ি যেতে হবে সাফজয়ী মগিনী বোনদের

কন্যাদের বিজয়ে দেশ ভাসছে আনন্দে। হিমালয় জয় করে সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশে ফিরেছে বাংলাদেশ ফুটবল নারী দল। দেওয়া হয়েছে ‘রাজসকি’ সংবর্ধনা। সে সাথে চলছে পুরস্কার ঘোষণার মহোৎসবও। প্রশাসনের অনেক কর্তাব্যক্তি ছুটে যাচ্ছেন অবহেলিত সে সব খেলোয়ারদের বাড়িতে। অথচ এতদিন এরা ছিল চরম অবহেলিত। 

এবারের সাফ চ্যাম্পিয়ন জয়ী বাঘিনীদের তালিকায় খাগড়াছড়ি জেলা সদরের যমজ বোন আনাই মগিনী ও আনুচিং মগিনীও রয়েছে। জেলা সদরে বাড়ি হলেও তাদের গ্রামটি একেবারেই দুর্গম। পিচঢালা পথ থেকে নেমে ইটের রাস্তা পেরিয়ে সরু-কর্দমাক্ত পথ মাড়িয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এক সাঁকো পেরিয়ে বাড়ি যেতে হয় যমজ ফুটবল কন্যা আনাই-আনুচিং মগিনীর। দুই কৃতি ফুটবলারের বাবা-মাসহ ভাই-ভাবীরা থাকেন সেখানে।

স্থানীয়রা বলছেন, যখনই দুই কন্যা আনাই-আনুচিং মগিনীরা দেশের জন্য কোন সুখবর নিয়ে আসে তখন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা যান এবং দেন অনেক প্রতিশ্রুতি। যদিও বছরের পর বছর কেটে গেলেও বাস্তবায়ন হয় না সেগুলো। তারই একটি বড় উদাহারণ এই রাস্তা। তাই এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, ‘এবারও মরণফাঁদ পেরিয়েই বাড়ি যেতে হবে বাংলার বাঘিনি মাগীনিদের’। 

জানা গেছে,  ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত সাফ অনুর্ধ্ব-১৫ ফুটবল টুর্নামেন্টে দক্ষিণ এশিয়ার পরাশক্তি ভারতকে হারিয়ে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ান হওয়ার গৌরব অর্জনের পর ওই বছরের ৯ জানুয়ারি খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী আনাই-আনুচিং মগিনীদের বাড়ী পরিদর্শণে যান। এ সময় তাদের বাড়িতে যাতায়াতের সুবিধার্থে ছড়ার ওপর ব্রিজ নির্মাণ এবং তিন নারী ফুটবলারকে ৫০ হাজার টাকা করে এফডিআর করে দেওয়াসহ তাদের লেখাপড়ার যাবতীয় খরচ বহন করার ঘোষণা দেন। কিন্তু চার বছর পার হয়ে গেলেও আজও বাস্তবায়ন হয়নি সেটি। 

আনাই-আনুচিংয়ের বড় ভাই মংক্রচাই মগ বলেন, বোনদের গর্বে আমরা সব সময় আনন্দে থাকি। মা-বাবারা বৃদ্ধ হয়ে গেছেন। কিন্তু আমাদের বাড়িতে আসার রাস্তাটি খুবই খারাপ। আর বর্ষাকালে ছড়ার পানি অনেক উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। তখন একটি বাঁশের সাঁকো দিয়ে চলাফেরায় ভয় লাগে।

আনাই-আনুচিংয়ের মা-বাবা আপ্রংমা মগিনী ও রিপ্রংচাই মগ বলেন, আমাদের দুই মেয়ে আজ দেশের গর্বে পরিণত হয়েছে। জেলা প্রশাসক আমাদের জন্য অনেক কিছু করেছেন। কিন্তু আমাদের বাড়িসংলগ্ন খালের ওপর সাঁকোটি ঝুঁকিপূর্ণ বিধায় সেতু নির্মাণের কথা দিয়েছিলেন সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী, কিন্তু কখন হবে আমরা জানি না।

খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য ও খাগড়াছড়ি জেলা ক্রীড়া সংস্থা’র সাধারণ সম্পাদক জুয়েল চাকমা বলেন, সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান যে সব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তার মধ্যে শুধুমাত্র আনাই-আনুচিং-এর পরিবারের কিছু অনুদান দেওয়া ছাড়া অন্যগুলো বাস্তবায়ন হয়নি।

খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, আনাই-আনুচিং মগিনী এবং লক্ষ্মীছড়ির মনিকা চাকমা’র বাড়ি সরেজমিন পরিদর্শণ করেছি। তাদের মা-বাবা স্বজন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে কথা বলে তাদের সমস্যা জেনেছি। সরকারি অর্থায়নে জেলা প্রশাসনের প্রতিশ্রুত  মনিকা চাকমা’র বাড়ি নির্মাণ ও বিদ্যুতায়ন, আনাই-আনুচিংদের বাড়িতে গভীর নলকূপ স্থাপন ও বিদ্যুতায়ন করা হয়েছে। সেই সাথে জেলার তিন কৃতি ফুটবলারকে দুই লাখ টাকা করে সঞ্চয়পত্র করে দেয়া হয়েছে। এবার সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় তিন কৃতি ফুটবলার ও সহকারি কোচ তৃষ্ণা চাকমাকেও এক লাখ টাকা দেওয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

আনাই-আনুচিংদের বাড়ি যাবার পথে ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকোর পরিবর্তে সেতু নির্মাণের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে বলে জানিয়ে আক্ষেপ করে তিনি বলেন, আমরা সবাই কেন যেন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের অপেক্ষায় থাাকি।

বিভি/কেএস

মন্তব্য করুন: