• NEWS PORTAL

  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

বাহারি ঘুড়িতে ঐতিহ্যবাহী সাকরাইন উৎসব 

মিলন মাহমুদ রবি

প্রকাশিত: ২৩:১৯, ১৪ জানুয়ারি ২০২৩

আপডেট: ২৩:২০, ১৪ জানুয়ারি ২০২৩

ফন্ট সাইজ
বাহারি ঘুড়িতে ঐতিহ্যবাহী সাকরাইন উৎসব 

আকাশের বুকে রঙ-বেরঙের ঘুড়ি উড়ছে। পুরো আকাশটা ছিলো ঘুড়িদের দখলে। শনিবার (১৪ জানুয়ারি) পুরান ঢাকায় চলছে ঐতিহ্যবাহী ‘সাকরাইন’ উৎসব। মূলত পৌষ সংক্রান্তিতেই পালন করা হয় সাকরাইন উৎসব। আর একদিন পরেই মাঘ মাস। পৌষের শেষ দিনটিতে গান-বাজনা, আতশবাজি ও ঘুড়ি উড়ানোর মধ্য দিয়ে পালিত হয় সাকরাইন উৎসব। সন্ধ্যা হতেই পটকা-আতশবাজি ফুটিয়ে আর রঙ-বেরঙের ফানুস উড়িয়ে আলোয় আলোকিত হয়ে উঠে পুরান ঢাকার আকাশ। পুরান ঢাকাবাসী প্রতি বছর এভাবেই সাকরাইন উৎসবকে আনন্দঘন করে তোলে।

জানা যায়, ১৭৪০ সালের এই দিনে মোগল আমলে নায়েব-ই-নওয়াজেশ মোহাম্মদ খানের আমলে ঘুড়ি উড়ানোর শুরু। সেই থেকে ৩০০ বছরের অধিক সময় ধরে এই ঐতিহ্য নিয়ে বয়ে চলছে আমাদের ঢাকা। সাকরাইন বা ঘুড়ি উৎসব তেমনই পুরান ঢাকার একটি ঐতিহ্যবাহী উৎসব। সাকরাইন উৎসব বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরাতন বিখ্যাত একটি বার্ষিক উৎসব। যদিও এই সাকরাইন শব্দটি নানান পথ পরিক্রমায় সংস্কৃত শব্দ সংক্রন থেকে এসেছে। আর এই সংক্রনের আভিধানিক অর্থ হলো ‘বিশেষ মুহূর্ত’, অর্থাৎ বিশেষ মুহূর্তকে সামনে রেখে যে উৎসব পালিত হয় তাকেই বলা হচ্ছে সাকরাইন উৎসব। এটি বাংলাদেশের পুরানো ঢাকার বৃহত্তম উৎসব। এ উৎসবে অংশ নেন সব ধর্ম, পেশার বিভিন্ন বয়সের মানুষ।

প্রতি বছরের ন্যায় এই দিনটিকে কেন্দ্র করে পুরান ঢাকার অলিতে গলিতে ও বাসার ছাদে সব বয়সের মানুষ মিলিত হয়ে পালন করছে অতি প্রাচীন উৎসব। সাজসজ্জা আর বাড়তি আয়োজনে বিশেষ মুহূর্তটি পালন করছে সবাই।

পুরান ঢাকার প্রতিটি বাড়ির ছাদে কিশোর-কিশোরী, যুবক-যুবতী এমনকি বয়োবৃদ্ধরাও এ উৎসবে মিলিত হন! বিকেল হলেই বাড়তে থাকে আকাশে ঘুড়ির সংখ্যা। দিনভর ঘুড়ি উড়িয়ে সন্ধ্যায় বিভিন্ন আয়োজনে মেতে ওঠেন সবাই।

সাকরাইন উৎসবকে কেন্দ্র করে ঘুড়ি তৈরিতে রয়েছে শিল্পের ছোঁয়া। ঘুড়ি তৈরি হয় বাহারি রঙের কাগজ ও বাঁশের অংশবিশেষ দিয়ে। সঠিকভাবে তৈরি করে তা নীল আকাশে উড়ানোর মধ্যেই আনন্দ। ঘুড়ি তৈরিতে মাপে এদিক-ওদিক হলে তা আর উড়ানো সম্ভব হয় না। তাই সেদিকটাও লক্ষ্য রাখতে হয় উৎসব প্রেমিদের। এছাড়া নাটাই তৈরিতেও রয়েছে বাড়তি শৈল্পিকতা। ঘুড়ি উড়াতে বাহারি রঙের সুতা কিনে তা মানজা দেওয়া। সেসব সুতার মধ্যে রক সুতা, ডাবল ড্রাগন, কিংকোবরা, ক্লাক ডেবিল, ব্লাক গান, ডাবল গান, সম্রাট, ডাবল ব্লেট, মানজা, বর্ধমান, লালগান ও টাইগার। আর বিশেষ ঘুড়ির মধ্যে থাকে গোয়াদার, চোকদার, মাসদার, গরুদান, লেজলম্বা, চারভুয়াদার, পানদার, লেনঠনদার ঘুড়িগুলো অন্যতম।

দিনটিকে কেন্দ্র থাকে নানান আয়োজন ও প্রতিযোগিতা। বাহারি ঘুড়ির মালিককে নিয়ে আয়োজন করা হয় ঘুড়ি উড়ানোর প্রতিযোগিতা। মূলত, বাসার ছাদে এসব প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। প্রতিযোগীদের মাঝে চ্যাম্পিয়ন ও রানারআপ নির্ধারণ করা হয়। ঘুড়ি উড়ানোর প্রতিযোগিতা হলো এমন, যে যতো বেশি উড়ন্ত ঘুড়ির সুতা দিয়ে অন্য ঘুড়ি কাটতে পারবে এবং শেষ পর্যন্ত যার ঘুড়ি আকাশে উড়বে সেই হবে চ্যাম্পিয়ন। এবং বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানও হয় জাঁকজমকপূর্ণ।

অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে থাকে নানা রকমের খাবারের আয়োজন। সন্ধ্যা হলেই বাড়তে থাকে আনন্দ উৎসব। কিশোর-যুবকরা মুখে কেরোসিন নিয়ে আগুনের লেলিহান শিখা তৈরি করে, পটকা ফুটিয়ে ও ফানুস উড়িয়ে সবার মাঝে উচ্ছ্বাস আবহ নিয়ে আসে। 

বর্তমানে এ উৎসবে লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। পুরান ঢাকাবাসীর সাথে শামিল হয়ে অনেকেই এই উৎসবে অংশ নিয়ে থাকেন। আত্নীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব সবাই অংশগ্রহণ করে থাকেন সাকরাইন উৎসবকে ঘিরে, এ যেন উৎসবপ্রেমীদের মিলন মেলা। 

পুরান ঢাকার বায়ান্ন বাজার তেপ্পান্ন গলির অধিকাংশ গলিতে আর খোলা ছাদে পুরাদমে চলে এই আনন্দ উৎসব। ঐতিহ্যবাহী সাকরাইন উৎসব পুরান ঢাকাবাসীকে পালন করতে দেখা যায় পুরো সপ্তাহজুড়ে।

বিভি/এমআর

মন্তব্য করুন: