এশিয়ান গেমসে হকি দলের ম্যানেজারের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ
ষষ্ঠ হওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে এশিয়ান গেমসে অষ্টম হয়েছে বাংলাদেশ হকি দল। দলের পারফরম্যান্সের এমন বেহাল দশা হলেও মাঠের বাইরের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে দল-সংশ্লিষ্টদের নিয়ে চলছে তীব্র সমালোচনা। নিজের কর্তৃত্ববাদ বজায় রাখতে একের পর এক বিতর্কিত সব কাণ্ড ঘটিয়েছেন হকি দলের ম্যানেজার মাহবুবুল এহসান রানা।
খ্যাপাটে স্বভাবের এই ম্যানেজার দলের খেলোয়াড়-কোচদের সঙ্গে রুক্ষ ব্যবহার করেই ক্ষান্ত হননি, রানা বেদম মারধর করেন এশিয়ান হকি ফেডারেশনের (এএইচএফ) অতিথি হয়ে চীনে যাওয়া সাবেক জাতীয় দলের খেলোয়াড় মুজাহিদুল ইসলাম শিপলুকে। হকি ফেডারেশনের দুই শীর্ষ কর্তার সামনেই এমন কাণ্ড ঘটিয়েছেন মাহবুব রানা। এ সময় মদ্যপ ম্যানেজার নাকি তার কাছে অর্থও দাবি করেছেন। এমনটা জানিয়ে হকি ফেডারেশনের সভাপতির কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন লাঞ্ছিত শিপলু। তবে মাহবুব রানা পুরো বিষয়টি করেছেন অস্বীকার।
টাঙ্গাইলের সন্তান শিপলু বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক, বাস করেন মেলবোর্ন শহরে। একসময় খেলেছেন জাতীয় হকি দলে। পুরোনো পরিচয়ের সূত্র ধরে গেমসের ভেন্যু হাংঝুতে বাংলাদেশ দলের ম্যানেজার মাহবুব রানার সঙ্গে কথাবার্তা হলেও শুরুর দিন থেকেই নাকি তার কাছে অর্থ দাবি করছিলেন অভিযুক্ত ম্যানেজার। হাংঝু শহরের ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো ভ্রমণের দিনে পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করে। একপর্যায়ে মদ্যপ অবস্থায় তাকে শারীরিকভাবে নাজেহালও করা হয় বলে জানান শিপলু, ‘গায়ে হাত তুলেই ক্ষান্ত হননি রানা, ফেডারেশনের দুই শীর্ষ কর্তার সামনেই দেশে থাকা আমার পরিবারের সদস্যদের গুলি করে হত্যার হুমকিও দেন তিনি।’ এসব ঘটনা উল্লেখ করে এরই মধ্যে ফেডারেশনের সভাপতির কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার এ নাগরিক।
গণমাধ্যমকে শিপলু জানিয়েছেন, ‘হকি ফেডারেশনের শীর্ষ কর্তাদের সামনেই এসব করেছে সে, তার পক্ষে তো দেশে অবস্থানরত আমার পরিবারের সদস্যদের ক্ষতি করা অসম্ভব কিছু নয়। সে কারণে পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্নতার মধ্যে দিন কাটছে।’ যার বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই মাহবুব রানার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি রীতিমতো বিস্ময় প্রকাশ করেন। সবকিছু অস্বীকার করে জানান, ‘শিপলুর কাছে আমি টাকা চাইতে যাব কেন? কেনই বা তাকে আমি হুমকি দিতে যাব। সে আমার বন্ধু। হাংঝুতে আমি, শহিদুল্লাহ টিটু, আরিফুল হক প্রিন্স ও শিপলু একসঙ্গে সময় কাটিয়েছি। হুমকি-ধমকি কিংবা অর্থ দাবি করার প্রশ্নই আসে না।’
অভিযোগকারী শিপলু বলেন, আমি তখনই বিষয়টি এশিয়ান হকি ফেডারেশন ও বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন (বিওএ) কর্মকর্তাদের জানাতে চেয়েছিলাম। পরে হকি কর্মকর্তারা আমাকে এএইচএফ, বিওএকে না জানিয়ে ফেডারেশন সভাপতির কাছে অভিযোগ করার পরামর্শ দেন। আমি সেটাই করেছি। দেখি কী হয়। আমি চাই না, রানার মতো মানুষ জাতীয় দলের ম্যানেজারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকুক। বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের সিনিয়র সহসভাপতি আব্দুর রশিদ শিকদার এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘এমন কিছু আমার জানা নেই। আপনি বরং অভিযোগকারী ও যার বিরুদ্ধে অভিযোগ তার সঙ্গে কথা বলুন।’
এশিয়ান গেমসের আগে ওমানেও বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২১ দলের ম্যানেজার থাকাকালে প্রকাশ্যে দলের কোচের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়েছিলেন এ ম্যানেজার। দলের ওপর যার প্রভাব পড়তে সময় নেয়নি। চীনের এশিয়ান গেমসেও একই কাণ্ড প্রায় নিয়মিতই করেছেন ম্যানেজার রানা। জাপানের সঙ্গে হারের পর খেলোয়াড়দের সামনেই কোচের সঙ্গে উচ্চ স্বরে বিতর্কে লিপ্ত হন তিনি। ঘটনার সময় উপস্থিত একাধিক সূত্র গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করে জানিয়ে দলের বিদেশি কোচও নাকি এক পর্যায়ে ড্রেসিংরুম ছেড়ে চলে যান। পরের ম্যাচগুলোতে সেই কোচকে নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়। শিপলুর মতো কোচও নাকি ফেডারেশনের শীর্ষ কর্তার কাছে অচিরেই ম্যানেজারকে নিয়ে লিখিত অভিযোগ দাখিল করবে।
বিভি/এজেড
মন্তব্য করুন: