যেসব কারণে ইতিহাসের সেরা কাতার বিশ্বকাপ
সাংগঠনিক দক্ষতা, বর্নাঢ্য উদ্দোধনী অনুষ্ঠান এবং মাঠের লড়াই, বিশ্বকাপ ফুটবলে সেরা আয়োজন হিসেবে ইতিমধ্যেই ইতিহাসে ঠাই করে নিয়েছে কাতার বিশ্বকাপ। বিশ্বের প্রথম কোন মুসিলম দেশে এই বিশ্বকাপ ছিলো বিয়ার ও মদমুক্ত। ইউরোপিয়ান সমর্থকরা এই নিয়ে প্রথমে হৈচৈ করলেও; কোন সমস্যার কথা শোনা যায়নি, কঠোর বিধি নিষেদ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারনে ঘটেনি সমর্থকদের মধ্যে কোন মারামারি, সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বা কোন অপ্রিতিকর ঘটনা। এমনকি মধ্যপ্রাচ্যের প্রচন্ড গরমের কারনে জুন জুলাই;র পরিবর্তে প্রথমবার নভেম্বর-ডিসেম্বরে এই আয়োজন বেশ আলো ছড়িয়েছে।
দেড় মাসের এই মহাযজ্ঞে ৬৪ ম্যাচে ১৭২ টি গোল। যা বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ গোলের নতুন রেকর্ড। এরআগে ১৯৯৮ সালের ফ্রান্সে এবং ২০১৪ সালে ব্রাজিল বিশ্বকাপে মোট গোল হয়েছিল ১৭১টি করে। আর ১৭২টি গোলের মধ্যে সার্বিয়ার বিপক্ষে ব্রাজিলের রিচার্লিসনের বাইসাইকেল কিকে করা গোলটি আসরের সেরা গোলের মযার্দা পেয়েছে।
তবে কাতার বিশ্বকাপ স্মরনীয় হয়ে থাকবে আফ্রিকান এবং এশিয়ান দেশগুলোর দারুন পারফরম্যান্সে। বিশ্বকাপ ইতিহাসে এবারই সবচয়ে বেশী আপসেটের ঘটনা ঘটেছে। সেখানে স্বাগতিক কাতার হতাশ করলেও, এশিয়ার অন্য ৫টি দেশ অন্তত একটি করে ম্যাচ জিতেছে। আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে সৌদি আরব বিশ্বকাপ ইতিহাসে সবচেয়ে বড় আপসেটের জন্ম দেয়। জার্মানি ও স্পেনকে হারিয়ে জাপান; পর্তুগালকে হারিয়ে দক্ষিণ কোরিয়া এবং ডেনমার্ককে হারিয়ে অস্ট্রেলিয়া দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠে বড় সাফল্য দেখিয়েছে।
আফ্রিকান দেশগুলোর মধ্যে ক্যামেরুন হারিয়েছে ব্রাজিলকে; তিউনেশিয়ার কাছে হেরেছে ফ্রান্স। তবে মরক্কোর রূপকথা সবকিছুকে ছাড়িয়ে গেছে। গ্রুপ পর্বে তারা হারিয়েছে বেলজিয়াম ও কানাডাকে। দ্বিতীয় রাউন্ডে স্পেনকে কাঁদিয়েছে। সেই রূপকথা থামেনি কোয়ার্টার ফাইনালেও। পর্তুগালকে হারিয়ে প্রথম আফ্রিকান দেশ হিসেবে খেলেছে বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে।
বিশ্বকাপের শেষটাও হয়েছে দারুন ভাবে। ১৮ ডিসেম্বর কাতারের জাতীয় দিবসে অসাধারণ এক ফাইনালে শেষ হয় বিশ্বকাপ মহাযজ্ঞ। বিশ্বকাপ ইতিহাসে এই ফাইনালকেই সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ বলেছেন ফুটবল বিশেষজ্ঞরা। দারুন উত্তেজনাপূর্ণ ফাইনালে কিলিয়ান এমবাপ্পের অসাধারণ এক হ্যাটট্রিক, যা বিশ্বকাপ ইতিহাসে দ্বিতীয় এবং ১৯৬৬ সালের পর বিশ্বকাপে ফাইনালে গত ৫৬ বছরে প্রথম হ্যাটট্রিক। ১২০ মিনিটের শ্বাসরুদ্ধকর ফাইনাল ৩-৩ গোলে ড্র থাকার পর, টাইব্রেকে জয় নিশ্চিত করে আর্জেন্টিনা। সেই ফাইনাল আরো বেশী আকর্ষন ও উত্তাপ ছড়িয়েছে ইতিহাসের সেরা ফুটবলার মেসির হাতে বিশ্বকাপ ট্রফি ওঠায়।
কাতার বিশ্বকাপকে ফুটবল প্রেমীরা কেন মনে রাখবে? ইতিহাসের অন্যতম সেরা ফুটবলার লিওনেল মেসির হাতে বিশ্বকাপ ট্রফি, ২০২২ বিশ্বকাপ স্মরনীয় হয়ে থাকার জন্য এই টুকুইতো যথেষ্ট। কিন্তু বিশ্বকাপ ফুটবল ইতিহাসে সবচেয়ে বেশী আপসেটের ঘটনা, প্রথম আফ্রিকান দেশ হিসেবে মরক্কোর সেমিফাইনালে খেলা, ব্রাজিলের রিচার্লিসনের দৃষ্টনন্দন গোল, বিশ্বকাপে ফাইনালে ৫৬ বছর পর কিলিয়ান এমবাপ্পের অসাধারণ হ্যাটট্রিক এবং দারুন উত্তেজনাপূর্ণ এক ফাইনাল ম্যাচের জন্য কাতার বিশ্বকাপ ঠাই করে নিয়েছে ইতিহাসে বিশেষ স্থানে। আর এই সকল কারনেই ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো তার দেখা সেরা বিশ্বকাপ বলতে এতটুকু দেরী করেননি।
মন্তব্য করুন: