• NEWS PORTAL

  • শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫

Drama: Jamai Bou Chor
Drama: Jamai Bou Chor

কাঠের ব্লক দিয়ে করেন শিল্পকর্ম, ব্যবসায় লাভবান দুই ভাই

রাতুল সাহা, বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় 

প্রকাশিত: ১৪:৪৪, ৭ জুলাই ২০২৫

ফন্ট সাইজ
কাঠের ব্লক দিয়ে করেন শিল্পকর্ম, ব্যবসায় লাভবান দুই ভাই

পেইন্টিং বললেই আমাদের চোখে ভেসে ওঠে রঙ, তুলি কিংবা ক্যানভাসের দৃশ্য। তবে রঙিন কাঠের ছোট ছোট ব্লক দিয়েও সৃষ্টি করা যায় চমৎকার সব শিল্পকর্ম যা দেখতে অনেকটা চিত্রকর্মের মতোই। এই ব্লকগুলো ডিজিটাল পিক্সেলের মতো কাজ করে এবং যেকোনো দৃশ্য বা অবয়ব ফুটিয়ে তোলা সম্ভব।

এমনই এক নতুন ধারার শিল্পচর্চা করছে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া দুই ভাই, যাঁরা গড়ে তুলেছেন 'পিক্সেল স্টুডিও' নামে একটি ব্যতিক্রমধর্মী প্ল্যাটফর্ম। তাঁরা হলেন গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের শিক্ষার্থী মেহরাজ হোসেন শাওন এবং বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুটেক্স) ওয়েট প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী সায়মন হোসেন রাতুল। তাদের গল্প তুলে ধরছেন রাতুল সাহা। 

শুরুটা যেভাবে

ছোটবেলা থেকেই শাওনের নতুন কিছু বানানোর তীব্র আগ্রহ ছিল। যেমন ঘুড়ি, প্লেন, পাথর, মাটি ইত্যাদি দিয়ে নানান জিনিস বানিয়েই সময় কেটেছে তাঁর। উচ্চমাধ্যমিক শেষে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার ইচ্ছা থাকলেও বিষয়টি পাইনি সে। তারপর হাতে কিছু করা যায়, বানানো যায় এমন চিন্তা থেকেই সে স্থাপত্য বিভাগে ভর্তি হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথমবর্ষে থাকাকালীন সে কাঠের ব্লক দিয়ে একবার রবীন্দ্রনাথের প্রোট্রেইট তৈরি করেছিল। সেসময় করোনা মহামারীতে দেশে লকডাউনের ফলে তাঁর বাবার ব্যবসায় বিরাট ক্ষতি হয়। কিছুদিন পরেই তার বাবার ব্রেন স্ট্রোক হয়, ফলে তাঁর পরিবার কঠিন অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে পড়ে যায়। এমতাবস্থায় সেই রবীন্দ্রনাথের প্রোট্রেইট প্রজেক্টটা দেখে তাঁর বড় বোন তাঁকে এই ধরনের শিল্পকর্ম বিক্রি করার পরামর্শ দেয়। এই শিল্পকর্ম সাধারণত কাঠের ব্লক ব্যবহার করে তৈরি করা হয়, যা দিয়ে যেকোনো দৃশ্য বা অবয়ব ফুটিয়ে তোলা যায় যাকে পিক্সেল আর্ট বলে। অপরদিকে প্রচলিত চিত্রকলা খুব সাধারণ এবং বিক্রি করাও বেশ কঠিন। তাঁর ছোট ভাই রাতুলও আঁকাবুকি করা এবং আয়রন ম্যান, স্পাইডারম্যানের মতো ফ্যান্টাসি ক্যারেক্টার নিয়ে ছোটকাল থেকেই পড়ে থাকতো। নতুন কিছু বানানোর প্রতি তারও ভীষণ আগ্রহ ছিল। তাই পরিবারের উপার্জনে অবদান রাখতে দুই ভাই ভিন্ন কিছু করার সিদ্ধান্ত নেয়।

২০২১ সালের জুন মাসের দিকে দুই ভাই মাত্র দশ হাজার টাকা মূলধন নিয়ে যাত্রা শুরু করে। প্রথম দিকে তারা একটি ডিজাইন নিয়ে কাজ করে ধীরে ধীরে তাঁরা অর্ডার পেতে শুরু করে এবং সেখান থেকে অর্জিত অর্থ পুনরায় ব্যবসায় বিনিয়োগ করে। ফলে অল্প সময়ের মধ্যেই জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকলেও পড়াশোনার কারণে এই কাজটি অধিক সময় করতে পারতো না তারা। পরীক্ষা চলাকালীন তাদের কাজ বন্ধ থাকতো এবং যার ফলে গ্রাহকরা বিরক্ত হতেন। শুরুর দিকে তাঁরা নিজেদের বেডরুমে কাজ করতো। কিন্তু পরে উপলব্ধি করে, ব্যবসা বড় করতে হলে কর্মী নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন। এরপর তারা একটি ছোট কারখানা চালু করে এবং সেখানে কয়েকজন মহিলা কর্মী নিয়োগ করে। শুরুতে কর্মীরা কাজ বুঝতে না পারায় কিছু সমস্যার সম্মুখীন হলেও কয়েক মাস পর তারা দক্ষ হয়ে ওঠে এবং নিখুঁতভাবে কাজ করতে শুরু করে। বর্তমানে তাঁদের শিল্পকর্ম বাংলাদেশ মিলিটারি মিউজিয়াম, ময়মনসিংহ ক্যান্টনমেন্ট, ব্রুভানা গ্রুপসহ দেশের অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সংগ্রহে জায়গা করে নিয়েছে।

ব্যবসার ধরণ ও প্রণালি

সায়মন হোসেন রাতুল বলেন, আমাদের ব্যবসাটি মূলত একটি আর্ট অ্যান্ড ক্রাফট ব্যবসা। প্রথমে আমরা থ্রি-ডি মডেল তৈরি করি। তারপর স'মিল থেকে সে অনুযায়ী কাঠের অতিরিক্ত টুকরোগুলো কেটে আনি। এরপর সেগুলো রং করি এবং প্লাইউডের উপর বিভিন্ন ধরনের আকৃতি বসাই। এই আর্টগুলো দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখা হয় যা দেখতে অনেকটা পেইন্টিংয়ের মতো। একে থ্রি-ডি ওয়াল আর্টও বলে। আমাদের ব্যবসার নাম হলো পিক্সেল স্টুডিও। এর কারণ হলো আমরা ছোট ছোট ব্লক দিয়ে যেকোনো দৃশ্য তুলে ধরি ঠিক যেমনটি আসল পিক্সেল করে। আমাদের সাউন্ড ডিফিউজার নামে আরেকটি সেক্টর রয়েছে যেটি সাউন্ড ইকোকে এলিমিনেট করতে কাজ করে। ইউরোপে এই শিল্পধারা বেশি জনপ্রিয়। কিন্তু বাংলাদেশে শুধু আমরাই এটি তৈরি করি। 

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

তাঁরা বলেন, আমরা পিক্সেল স্টুডিওকে আরো বিস্তৃত করতে চাই এবং সেই সাথে বাংলাদেশে এই ধরনের পিক্সেল আর্টের জনপ্রিয়তা বাড়াতে চাই। তাই আমি বিশ্বাস করি আমাদের তৈরি এই পিক্সেল আর্ট বাংলাদেশের প্রতিটি শিল্পপ্রেমীর দেওয়ালে শোভা পাবে। আমি চাই আমাদের তৈরি এই শিল্পকর্ম প্রতিটি বাসা এবং অফিসের অঙ্গনকে সাজাক। এছাড়া নতুন কর্মী নিয়োগ, প্রযুক্তির সাহায্যে উৎপাদন প্রক্রিয়া আরও উন্নত করা এবং বহু দেশের বাজারে আমাদের পিক্সেল আর্ট পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া অনলাইন প্লাটফর্মে বিক্রয় বৃদ্ধির জন্য একটি ওয়েবসাইট অথবা অ্যাপ তৈরির পরিকল্পনা করছি যাতে আমাদের পণ্য সারা দেশে সহজেই পৌঁছাতে পারে।

বিভি/এজেড

মন্তব্য করুন:

সর্বাধিক পঠিত
Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2