• NEWS PORTAL

  • শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫

ফ্রাঙ্কো-জার্মান মানবাধিকার পুরস্কার পেলেন সুমাইয়া ইসলাম

প্রকাশিত: ১৪:০২, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫

ফন্ট সাইজ
ফ্রাঙ্কো-জার্মান মানবাধিকার পুরস্কার পেলেন সুমাইয়া ইসলাম

বাংলাদেশ নারী শ্রমিক কেন্দ্রের (বিএনএসকে) নির্বাহী পরিচালক এবং মানবাধিকার রক্ষক সুমাইয়া ইসলাম ২০২৫ সালের ফ্রাঙ্কো-জার্মান মানবাধিকার ও আইনের শাসন পুরস্কার অর্জন করেছেন। বাংলাদেশে নিযুক্ত ফ্রান্স ও জার্মানির রাষ্ট্রদূত জঁ-মার্ক সেরে-শারলে এবং ড. রুডিগার লোটজ- আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে ঢাকায় ফ্রাঙ্কো-জার্মান দূতাবাসে আয়োজিত বিশেষ অনুষ্ঠানে সুমাইয়া ইসলামকে এই পুরস্কার প্রদান করেন।

২০১৬ সাল থেকে ফ্রান্স ও জার্মানি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা রক্ষায় অসাধারণ অবদান রাখা ব্যক্তিদের আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে যৌথভাবে এই সম্মাননা প্রদান করে আসছে। মহিলা, বিশেষত অভিবাসী নারী শ্রমিক, যৌনকর্মী, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ এবং অন্যান্য সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার এগিয়ে নেওয়ার দীর্ঘদিনের নিষ্ঠা ও অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সুমাইয়া ইসলাম এ বছর পুরস্কারটি অর্জন করেছেন।

একজন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নাগরিক সমাজের নেতৃত্বদানকারী হিসেবে সুমাইয়া ইসলাম গত দুই দশক ধরে বিএনএসকে ও বমসা (BOMSA) সহ তৃণমূল পর্যায়ের বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে কাজ করেছেন, যেগুলো অভিবাসী নারীদের অধিকার নিয়ে কাজ করে। এই দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে তিনি এখন বহু আঞ্চলিক নাগরিক সমাজ নেটওয়ার্কে অবদান রাখছেন। তিনি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের মহিলা বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

তার অ্যাডভোকেসি এবং নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়ায় সক্রিয় অংশগ্রহণ বাংলাদেশি নারী অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার ও সুরক্ষা জোরদার করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ আইনগত সংস্কার এগিয়ে নিতে মূখ্য ভূমিকা রেখেছে। তিনি নিরলসভাবে সেইসব নারীর কণ্ঠস্বর তুলে ধরেন, যারা প্রায়শই উপেক্ষিত থাকে। তার অধ্যবসায় ও প্রতিশ্রুতি বহু প্রান্তিক নারীর কাছে অনুপ্রেরণাদায়ক।

পুরস্কার গ্রহণের সময় সুমাইয়া ইসলাম বলেন, এটি আমার জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয় এবং এই ফ্রাঙ্কো-জার্মান মানবাধিকার পুরস্কার পেয়ে আমি সত্যিই কৃতজ্ঞ ও গভীরভাবে আনন্দিত। ১৯৮৭ সাল থেকে আমি আন্দোলন, প্রচারাভিযান এবং অ্যাডভোকেসিতে যুক্ত আছি এবং পরে বাংলাদেশে মানবাধিকার রক্ষার জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ নাগরিক সমাজ সংগঠন প্রতিষ্ঠা করি। এই স্বীকৃতি আমার কাজ এবং বিএনএসকের প্রচেষ্টাকে আরও শক্তিশালী করবে এবং বিশ্বব্যাপী নারী অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষা ও অগ্রগতির জন্য আমাদের উদ্যোগকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করবে।

ফ্রাঙ্কো-জার্মান মানবাধিকার ও আইনের শাসন পুরস্কার ফ্রান্স ও জার্মানির যৌথ মূল্যবোধকে প্রতিফলিত করে এবং বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার সুরক্ষা ও উন্নয়নে উভয় দেশের অঙ্গীকারকে দৃঢ়ভাবে প্রকাশ করে। এই দুই দেশের পররাষ্ট্রনীতি মানবাধিকারকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়। এই পুরস্কারের মাধ্যমে ফ্রান্স ও জার্মানি পুনর্ব্যক্ত করে যে মানবাধিকার একটি সার্বজনীন নীতি, যা আন্তর্জাতিক দলিলের মাধ্যমে সুরক্ষিত এবং প্রতিটি রাষ্ট্রের দায়িত্ব তাদের স্বেচ্ছায় গ্রহণ করা প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা।

পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত  জঁ-মার্ক সেরে-শারলে বলেন, ১০ ডিসেম্বর, ফ্রান্স উদযাপন করছে মানবাধিকার ঘোষণার সার্বজনীনতা যা ১৯৪৮ সালে প্যারিসে গৃহীত হয়েছিল এবং একই সঙ্গে যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার বিরুদ্ধে ১৬ দিনের আন্দোলনের শেষ দিনটিও। সময়রেখা স্পষ্টভাবে দেখায় যে নারীর অধিকার ছাড়া মানবাধিকার সম্ভব নয়। ফ্রান্স বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার রক্ষকদের পাশে দাঁড়িয়ে আছে এবং ২০২৫ সালের ফ্রাঙ্কো-জার্মান মানবাধিকার ও আইনের শাসন পুরস্কার অর্জনের জন্য সুমাইয়া ইসলামকে আন্তরিক অভিনন্দন জানায়। আমরা আশা করি, মানবাধিকারের প্রতি তার অঙ্গীকার বাংলাদেশ ও সারা বিশ্বের অন্যদেরও মানবাধিকার রক্ষা এবং লিঙ্গসমতা অগ্রসর করতে অনুপ্রাণিত করবে।

জার্মানির রাষ্ট্রদূত ড. রুডিগার লোটজ বলেন, আমরা অত্যন্ত আনন্দিত যে এ বছরের ফ্রাঙ্কো-জার্মান মানবাধিকার ও আইনের শাসন পুরস্কার এমন এক বাংলাদেশি কর্মীকে সম্মান জানাচ্ছে, যার কাজ এই দেশের বিভিন্ন সম্প্রদায়ে বিদ্যমান সাহস ও অঙ্গীকারের প্রতিফলন। তৃণমূল মানবাধিকার রক্ষ করা অধিকার সুরক্ষা, জবাবদিহিতা বৃদ্ধি এবং যারা প্রায়শই উপেক্ষিত থাকে তাদের কণ্ঠস্বর তুলে ধরতে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করেন। লিঙ্গসমতা, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন এবং আরও ন্যায়সঙ্গত সমাজ প্রতিষ্ঠায় তাদের প্রচেষ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মানবিক মর্যাদা রক্ষায় যারা প্রতিদিন কাজ করেন, জার্মানি এবং ফ্রান্স তাদের পাশে অটলভাবে রয়েছে। আমরা বাংলাদেশের এ বছরের পুরস্কারপ্রাপ্ত এই যোগ্য ব্যক্তিত্বকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।

এর আগে, এই পুরস্কারটি ২০১৭ সালে অধিকার-এর প্রতিষ্ঠাতা আদিলুর রহমান খানকে প্রদান করা হয়েছিল। তিনি ছিলেন দ্বিতীয় বাংলাদেশি প্রাপক; তার আগে ২০১৬ সালে আর্টিকেল ১৯- এর তাহমিনা রহমান এই পুরস্কার পান।

বিভি/পিএইচ

মন্তব্য করুন:

Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2