• NEWS PORTAL

  • মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

সম্ভাবনায় ভরপুর কমিউনিটি ট্যুরিজমের যত বাধা

প্রকাশিত: ১৮:৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪

আপডেট: ১৯:১২, ২৮ এপ্রিল ২০২৪

ফন্ট সাইজ
সম্ভাবনায় ভরপুর কমিউনিটি ট্যুরিজমের যত বাধা

নওগাঁর কমিউনিটিভিত্তিক পর্যটন স্পট কুঁড়েঘর। ছবি- সংগৃহীত

তুমি যাবে ভাই- যাবে মোর সাথে আমাদের ছোট গাঁয়,
গাছের ছায়া লতায় পাতায় উদাসী বনের বায়;
মায়া মমতার জরাজরি করি
মোর গেহখানি রহিয়াছে ভরি,
মায়ের বুকেতে, বোনের আদরে, ভায়ের স্নেহের ছায়,
তুমি যাবে ভাই- যাবে মোর সাথে আমাদের ছোট গাঁয়।

উপরের উক্তিটি পল্লী কবি জসীম উদ্‌দীনের নিমন্ত্রণ কবিতার প্রথম কয়েকটি লাইন। এই কবিতার পুরোটুকু  পড়লে মনে হবে যেন পর্যটকদের গ্রামের দিকে ডাকতেই এই কবিতাটি লিখেছিলেন তিনি। যার প্রতিটি লাইন পর্যটক মনকে আহ্বান করছে একবার গাঁয়ে ঘুরে যেতে।

শুধু পল্লী কবি জসীম উদ্‌দীনই নয়, শত বছর ধরে কবিতার অক্ষরে অক্ষরে সুজলা-সুফলা বাংলার গ্রামীণ সৌন্দর্য তুলে ধরে পর্যটকদের ডেকেছেন বন্দে আলী মিয়া, আল মাহমুদ, রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরসহ বিখ্যাত কবিরা।

বাংলাদেশের গ্রামে এসে কৃষকের কাজে অংশ নিচ্ছেন বিদেশি পর্যটক। ছবি: সারাহ স্টাইনার

প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী শাহনাজ রহতুল্লাহ’র কণ্ঠে ‘একবার যেতে দেনা আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়’ গানটিতেও মধুর সুরে তুলে ধরা হয়েছে গ্রাম-বাংলার সৌন্দর্য। এভাবে গ্রাম নিয়ে গেয়েছেন বহু শিল্পীও। 

গ্রাম নিয়ে এত গান, কবিতা বা গল্প প্রমাণ করে সত্যিই ভিন্ন আকর্ষণ আছে বাঙলার এসব গ্রামে। কিন্তু গ্রামীণ এই আকর্ষণ কতটুকু কাজে লাগাতে পেরেছে বাংলাদেশ? শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির মাধ্যমে এত এত গ্রামে ডাকা হলেও কতটুকু সম্প্রসারণ হয়েছে দেশের গ্রামীণ পর্যটন? কত আয়ই বা হচ্ছে গ্রামীণ বা কমিউনিটি ট্যুরিজম থেকে?

কমিউনিটি বেইজড ট্যুরিজম বলতে কোনো সমাজ বা সম্প্রদায়ের মাধ্যমে পরিচালিত পর্যটনকে বুঝায়। এই পর্যটনের বিশেষত্ব হলো- কোনো নির্দিষ্ট কোম্পানি নয়, বরং পুরো সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীর বড় একটি অংশ এর দ্বারা উপকৃত হয়। এই কমিউনিটি বা সম্প্রদায়টি মূলত কোনো ঐতিহাসিক স্থাপনা, ঐতিহ্যবাহী কোনো শিল্প, গ্রামীণ সংস্কৃতি বা ধর্মীয় ঐতিহ্যকে ঘিরেও গড়ে উঠতে পারে।

শীতকালে গ্রামীণ নারীদের খেজুরের রস জাল দেয়া দেখছেন পর্যটকরা। ছবি- সংগৃহীত

বাংলাদেশে বর্তমানে ৪ হাজার ৫৭৮টি ইউনিয়নে ৮৭ হাজার ২৩০টি গ্রাম রয়েছে। ভৌগলিক অবস্থান, প্রাকৃতিক পরিবেশ, কৃষি উৎপাদন, সামাজিক আচার-আচরণ, মানুষের জীবনধারন, ভাষা ও সংস্কৃতি, ধর্মীয় কৃষ্টি-কালচার, ঐতিহাসিক স্থাপনা এবং খাদ্যাভ্যাসের দিক থেকে এই গ্রামগুলোর একেকটি অন্যটি থেকে ভিন্ন। তাই এসব গ্রামের প্রতিটিতেই রয়েছে পর্যটন সম্ভাবনা। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশের পাহাড়ে দুই শতাধিক কমিউনিটি ট্যুরিজম স্পট থাকলেও সমতলে এর সংখ্যা হাতে গোনা কয়েকটি মাত্র। অথচ পর্যটন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাংলাদেশের গ্রামগুলোতে যে ধরনের ভিন্ন ভিন্ন রূপ আছে প্রতিটি ইউনিয়নে অন্তত একটি করে গ্রামকে কমিউনিটি ট্যুরিজম ভিলেজে রূপ দেওয়া গেলে এই সেক্টরে অন্তত ১২ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। যার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পর্যটকদের আকর্ষণ করে আয় করা যাবে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রাও।

নওগাঁর ‍কৃষি ভিত্তিক কমিউনিটি পর্যটন কেন্দ্র ‘কুঁড়েঘর’ এ পর্যটকরা। ছবি- সংগৃহীত

বাংলাদেশে বর্তমানে যে কয়টি কমিউনিটি ট্যুরিজম স্পট আছে তার মধ্যে অন্যতম একটি হলো, যশোরের মনিরামপুরের জয়রামপুর কৃষি পর্যটন গ্রাম। এই গ্রামটিতে যেমন ভিন্ন ভিন্ন কৃষি খামার আছে, আছে মৌসুমি নানান ফলের বাগানও। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীকে ঘিরে আছে জেলেদের কর্মতৎপরতা, আছে মাঝির আনাগোনাও। এছাড়া গ্রামটিতে বাংলার ঐতিহ্যবাহী নানান মৃৎশিল্প, বেত শিল্পও আছে। এখানে কামার-কুমোররা দিনভর মাটি দিয়ে নানান তৈজসপত্র বা খেলনা বানায়। যার সবকটিই দেখার মতো।

এই গ্রামের পর্যটন সম্ভাবনার বিবেচনায় স্থানীয় যুবকরা গ্রামটিকে পরিচিত করেছেন জয়রামপুর কৃষি পর্যটন গ্রাম নামে। এখানে পর্যটকের চাহিদার আলোকে যোগান দিতে হিন্দু ও মুসলিম পরিবারের কিছু মাটির-টিনের-বিল্ডিং ঘরকে প্রস্তুত করেছেন তারা। প্রতিটি ঘরের কিছু মানুষকে দিয়েছেন পর্যটন সেবা ও ভাষার প্রশিক্ষণ। কৃষক, কামার, কুমোর, জেলে এমনকি রিকশাচালক এবং মাঝিকেও দেওয়া হয়েছে প্রশিক্ষণ। ফলে এখন এই গ্রামে এসে বাংলার গ্রামীণ সংস্কৃতি দেখছে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা। বিনিময়ে বাড়তি আয় হচ্ছে গ্রামের সবশ্রেণির মানুষের। পর্যটকের মাধ্যমে ভালো দামে ফসলও বিক্রি করছেন সেখানকার চাষীরা।

জয়রামপুর কৃষি পর্যটন গ্রামে গিয়ে পর্যটকের তাবুবাস। ছবি- সংগৃহীত

জয়রামপুর কৃষি পর্যটন গ্রামের উদ্যোক্তা ও কমিউনিটি ট্যুরিজম বিশেষজ্ঞ কামরুল বাশার রয়েল বাংলাভিশনকে বলেন, কৃষি পর্যটনের মাধ্যমে জয়রামপুর গ্রামে অন্তত ৩ শতাধিক মানুষের বাড়তি কর্মসংস্থান হয়েছে। অন্য আট-দশটা গ্রামের মতোই এই গ্রামের মানুষ জমি চাষ করছে, মাছ ধরছে, রিকশা চালাচ্ছে বা অন্য কোনো কাজ করছে। এর পাশাপাশি পর্যটক এলে তাদের একদিন বা দু’দিন নিজের ঘরে রেখে নিজেদের উৎপাদিত ফসল বা মাছ-মাংস খাইয়ে আপ্যায়ণ করছে। চলে যাওয়ার সময় সেই ট্যুরিস্টের কাছে নিজের উৎপাদিত ফল-ফলাদি, নদী থেকে ধরে আনা মাছ বা ঘরের পালা মুরগিটাও বিক্রি করছে। এর মাধ্যমে বেশ ভালো আয় করছেন তারা। একইসঙ্গে পর্যটকদের নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, ফাইভ স্টার হোটেলে আমি যেসব পর্যটক নিয়ে গেছি তারা সেখানে যতটা না সন্তুষ্ট হয়েছে তারচেয়ে বেশি সন্তুষ্ট হয়েছে এখানে এসে। কারণ ফাইভ স্টার হোটেলের সেবা সে তার দেশেও পায় কিন্তু এখানে পেয়েছে ব্যতিক্রম কিছু। এতে বাংলাদেশের প্রতি তাদের মনে পজেটিভ ধারণা তৈরি হতেও দেখেছি।

বাংলাদেশের অন্য গ্রামগুলোর পর্যটন সম্ভাবনা নিয়ে তিনি বলেন, শুধু জয়রামপুর নয়, বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামেই রয়েছে কমিউনিটি ট্যুরিজমের সম্ভাবনা। কারণ আমাদের প্রতিটি গ্রামের আলাদা বিশেষত্ব আছে, যা দেখার মতো। এছাড়া এখানে ধর্মীয় পর্যটনেরও ব্যাপক সম্ভাবনা আছে। ধরুন প্রতিবছর ইজতেমায় বহু ভিনদেশি ধর্মপ্রাণ মুসলমান আমাদের দেশে আসে। তাদের যদি বাংলাদেশের বিভিন্ন গ্রামের মুসলিম ঐতিহ্যগুলো দেখাই অবশ্যই তারা সেটা লুফে নিবে। একইভাবে হিন্দু ধর্মের ৭টি পিঠ আছে বাংলাদেশে, যাকে ঘিরে সনাতন ধর্মের অনেক মানুষ আসেন আমাদের দেশে। তাদের যদি এদেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সংস্কৃতি দেখাতে পারি অবশ্যই তারা সেটা পছন্দ করবে। বৌদ্ধ ধর্মের বিভিন্ন স্থাপনাকে ঘিরেতো ইতোমধ্যে পর্যটন হচ্ছেই। এটা কঠিন কিছু না। শুধু প্রয়োজন গ্রামগুলোকে পর্যটকদের জন্য প্রস্তুত করে তুলে ধরতে পারা।

বাংলাদেশের জাতীয় ফল কাঁঠাল ভেঙে খাচ্ছেন বিদেশি পর্যটকরা। ছবি- সংগৃহীত

বাগেরহাটে সুন্দরবনের পশ্চিম গাংমারিতে স্থানীয়দের নিয়ে কমিউনিটিভিত্তিক পর্যটন সম্প্রসারণে কাজ করছেন সুন্দরী ইকো রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাছির উদ্দিন বাদল। তিনি বলেন, আমরা স্থানীয়দের নিয়ে সুন্দরবন এলাকায় কমিউনিটি ট্যুরিজমে কাজ করছি। এর সবচেয়ে বড় ফল হলো যারা আগে সুন্দরবনে দস্যূতা করে পেট চালাতো তারা এখন রিসোর্টে পর্যটককে সেবা দিচ্ছেন। কমিউনিটি পর্যটনের মাধ্যমে কর্মসংস্থান হওয়ায় তারা খারাপ পথ ছাড়তে পেরেছে। পর্যটকদের কাছে মধুসহ বিভিন্ন বনজদ্রব্য বিক্রি করে এখন আরও অনেকে স্বাবলম্বী। এখন তাদের জীবনযাত্রাও বদলে গেছে। একই অবস্থা পাহাড়েও। পাহাড়ে পর্যটকদের সেবা দিয়ে এখন স্বাবলম্বী হয়েছে অনেকে।  এটা প্রমাণ করছে কমিউনিটিভিত্তিক পর্যটন খুবই প্রয়োজন।

কমিউনিটি ট্যুরিজমে শুধু স্থানীয় বাসিন্দারাই উপকৃত হয় না, ব্যতিক্রম সেবা পেয়ে সন্তুষ্ট হয় পর্যটকও। কিন্তু এই পর্যটনের বিকাশে আমাদের দেশে তেমন একটা প্রচার-প্রচারণা হচ্ছে না জানিয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণ ও কমিউনিটি ট্যুরিজম সম্প্রসারণে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডকে সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

নওগাঁর পোরশা উপজেলায় নোনাহার (পশ্চিম পাড়া) সারক ডাংগার মাঠ এলাকায় কুঁড়েঘর নামে একটি কমিউনিটি ভিত্তিক পর্যটন কেন্দ্র পরিচালনা করছেন মুজাহিদুল ইসলাম জাহিদ। তিনি বলেন, আমাদের দেশে পর্যটক, পর্যটন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বা সরকার কেউই কমিউনিটি ট্যুরিজমের মানসিকতার নয়। পর্যটকরা যে কমিউনিটি দেখতে যায় সেখানে গিয়ে সেই কমিউনিটির বিপরীত আচরণ করে যা সাধারণ মানুষ মেনে নিতে পারে না। যেমন ধরেন- একটা মুসলিম অধ্যুষিত গ্রামে গিয়ে ইসলামী কালচারের বিরোধী কিছু করা অথবা মসজিদ, মন্দির বা গির্জায় গিয়ে জুতা পায়ে প্রবেশ করা অথবা ভিন্ন ধর্মাবলম্বী হলে তাদের কটাক্ষ করা, সামাজিক একটা পরিবেশে ভ্রমণ করতে গিয়েও নেশা দ্রব্য চাওয়া ইত্যাদি। এসব কারণে ওই সমাজের মানুষ ট্যুরিস্টদের মেনে নিতে পারে না। ফলে আমাদের দেশে কমিউনিটি ট্যুরিজম গড়ে উঠছে না। 

বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ‘মাটির বাড়ি’ মুগ্ধ করে পর্যটকদের। ছবি- কুঁড়েঘর

তবে দেশীয় পর্যটকরা বিরূপ আচরণ করলেও বিদেশি পর্যটকরা গ্রামে যা আছে তা দেখেই অনেক সন্তুষ্টি নিয়ে ফিরে যাচ্ছে। আমাদের লোকাল কালচার দেখে তারা খুবই খুশি হয়। কিন্তু সমস্যা হলো বিদেশি পর্যটক দেশের হাতেগোনা দুএকজন পাওয়া যায়। এখানে যে বিশাল ব্যবসার সুযোগ আছে সেটা নিয়ে আমাদের কেউ ভাবছে না। আমাদের দেশের কমিউনিটি ট্যুরিজমের কোনো প্রচারণা নেই। আপনি দেখুন, ব্যবসায়ীক কারণে চীন, রাশিয়া, জাপানসহ বিভিন্ন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী দেশের নাগরিকরা বাংলাদেশে আসেন। আমাদের নওগাঁর পাহাড়পুর বিহার হলো বৌদ্ধ ধর্মের তৃতীয় তীর্থস্থান। কিন্তু আমরা কি বিভিন্ন কারণে আমাদের দেশে আসা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী পর্যটকদের এটি সম্পর্কে জানাতে পারছি? বিমানবন্দর বা কোনো হোটেলে এই পাহাড়পুর নিয়ে কোনো প্রোসপেক্টাস দেখেছেন? তাহলে কিভাবে বিদেশি পর্যটক আসবে? আসলেওবা তার জন্য কতটুকু সেবা আমরা রেখেছি। একজন পর্যটক পাহাড়পুরে এলে তাকে থাকতে হবে বগুড়ায় গিয়ে, তাও অত মানসম্মত না। বগুড়ায় থেকে সে কি বৌদ্ধবিহারে উপাসনা করতে পারবে? আমরা তার উপাসনার সুযোগ কি রেখেছি? অথচ কমিউনিটি ট্যুরিজমের মাধ্যমে এটা খুবই সহজ ছিল। কিন্তু দুঃখজনক হলো, আমাদের সরকারের কেউ এটা নিয়ে ভাবেইনি।   

দেশের বিভিন্ন স্থানে কমিউনিটি ট্যুরিজম নিয়ে কাজ করা উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে এই সেক্টরের বিকাশে আরও বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতার চিত্র পাওয়া গেছে। তারা মনে করেন- কমিউনিটি ট্যুরিজমের সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হলো প্রশিক্ষিত জনবল না থাকা এবং তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কোনো অথরিটিও না থাকা। দ্বিতীয়ত অঞ্চলভিত্তিক পর্যটন উপাদানগুলো চিহ্নিত করতে না পারা এবং চিহ্নিত হলেও গ্রামীণ বা কমিউনিটি ট্যুরিজম নিয়ে প্রচার-প্রচারণা না থাকা। এছাড়া নিরাপত্তা সংকট, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হয়রানি, স্থানীয়রা নিজেদের পর্যটন সম্পদ সম্পর্কে না জানা, কমিউনিটি ট্যুরিজমকে বিজনেস মডেলে আনতে না পারা এবং সর্বোপরি দেশীয় পর্যটন নিয়ে চিন্তা, গবেষণা ও অধ্যয়নের অভাবের কথা উঠে এসেছে উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে।

বাংলাদেশের গ্রামীণ রান্নাঘরে রান্না করছেন বিদেশি পর্যটকরা। ছবি- সংগৃহীত

কিভাবে সমস্যা কাটিয়ে কমিউনিটি ট্যুরিজম সম্প্রসারণ করা যায় জানতে চাইলে কমিউনিটি ট্যুরিজম বিশেষজ্ঞ কামরুল বাশার বলেন, কমিউনিটি ট্যুরিজম সম্প্রসারণ করতে হলে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়কে একসাথে কাজ করতে হবে। প্রথমে পর্যটন সম্ভাবনাময় ১-২শ’ গ্রামকে বাছাই করে পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে নিয়ে কাজ শুরু করা যেতে পারে। এখানে ইউনিয়ন পরিষদকে যুক্ত করে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নে কমিউনিটি ট্যুরিজম ডেস্ক রাখতে হবে এবং যাবতীয় ব্যবস্থাপনায় ইউনিয়ন পরিষদ থাকবে অভিভাবক হিসেবে। পরিষদের মাধ্যমেই সেই কমিউনিটির লোকজনকে মানসম্মত প্রশিক্ষণ দিতে হবে এবং সমবায় পদ্ধতিতে সেখানে কমিনিটি ট্যুরিজম ডেভেলপ করতে হবে। যেসব গ্রামে সম্ভাবনা দেখা যাবে সেগুলোকে দেশে এবং আন্তর্জাতিক পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলে ধরতে হবে। 

ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব) সভাপতি শিবলুল আজম কোরেশী বলেন, বাংলাদেশে কমিউনিটি ভিত্তিক পর্যটনের ব্যাপক সম্ভাবনা আমরা দেখি। কমিউনিটি ট্যুরিজমের অনেকগুলো সুবিধা আছে। অবর্তমানে দেশের জিডিপিতে পর্যটনের অবদান ১০ শতাংশের মতো। কমিউনিটি ট্যুরিজম হলে এই সংখ্যাটা আরও বাড়বে। ব্যাপক কর্মসংস্থান হবে, আমাদের গ্রামগুলোরও আর্তসামাজিক উন্নয়ন হবে। কিন্তু সমস্যা হলো আমাদের এখন প্রচলিত পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে দেশীয় পর্যটকদের ব্যাপক উপস্থিতি থাকলেও বিদেশি পর্যটক আসে না বললেই চলে। এর প্রধান কারণ প্রচার-প্রচারণার অভাব।

আমরা ইতোমধ্যে সরকরাকে বলেছি পর্যটন সমৃদ্ধ দেশগুলো বিবিসি-সিএনএনের মতো আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে নিজেদের দেশের পর্যটনের বিজ্ঞাপন দেয়, যদিও এটা ব্যাপক ব্যয়বহুল তবে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আমাদেরও দেওয়া উচিত। আমাদের পর্যটন কেন্দ্রগুলো নিয়ে বিভিন্ন ভাষায় কন্টেন্ট বানিয়ে সেগুলো দেশগুলোর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা দরকার। আমাদের কনস্যুলেট অফিসগুলোতে অন্তত একজন করে পর্যটন কর্মকর্তা দেওয়া দরকার। এভাবে নানান পদক্ষেপের মাধ্যমে ট্যুরিস্টদের কাছে আমাদের কমন পর্যটন স্পটগুলোর পাশাপাশি কমিউনিটি ট্যুরিজম স্পটগুলোরও প্রচার করা গেলে বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা নিশ্চয়ই বাড়বে। এতে আমাদের ডলার সংকটও কিছুটা লাঘব হবে। বলেন, টোয়াব সভাপতি শিবলুল আজম কোরেশী।

বিভি/এজেড

মন্তব্য করুন: