• NEWS PORTAL

  • শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

আজও আবহমান বাংলার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি টিকে আছে যে গ্রামে...

প্রকাশিত: ২১:০০, ১৬ মে ২০২৪

ফন্ট সাইজ
আজও আবহমান বাংলার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি টিকে আছে যে গ্রামে...

গোপালগঞ্জ (মুকসুদপুর) থেকে ফিরে:

ভোরের মুন্সি নারায়ণপুর। তখন পূর্বাকাশে উদয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে সূর্য। আবছা আলোয় জমিতে হাজির কৃষক পরিবার। শিশির ভেজা ঘাস মাড়িয়ে তুলে নিচ্ছেন ক্ষেতের ফসল। পাশাপাশি চলছে ফসলের পরিচর্যাও। ওদিকে ভোর না হতেই পাখির কলকাকলিতে মুখর হয়ে উঠেছে চারপাশ। খেঁজুর গাছের ডগায় খুনশুটিতে ব্যস্ত শালিক দম্পতি।

ধীরে ধীরে মুখ দেখাতে শুরু করেছে সূর্য। নতুন সূর্যের আলোয় চিকচিক করছে ঘাসে ঝুলে থাকা শিশিরবিন্দু। ততক্ষণে ফসল তোলা শেষ ওই কৃষক পরিবারের। তাজা ফসল নিয়ে গন্তব্য বাড়ির দিকে।

একঝাঁক বাচ্চাসহ একটু আগেই খোয়াড় থেকে মুক্তি মিলেছে এই মুরগিটির। ঘর ছেড়েই বাচ্চাদের খাবার খাওয়াতে রাজ্যের ব্যস্ততা মা মুরগিটির। পাশেই গাছতলে পড়ে থাকা লিচু কুড়িয়ে খাচ্ছে একটি পাখি। মায়ের ওলান থেকে দুধ খাচ্ছে গরুর বাচুরটি। ওদিকে সদ্য দোহন করা তাজা দুধ আর ক্ষেত থেকে তুলে আনা তাজা ফসল নিয়ে বাজারের পথে রওনা হয়েছেন সেই কৃষক। চলুন আমরাও যাই সেই বাজারে।

বাজারের নাম নতুন বাজার। যদিও লোকমুখে পরিচিতি প্রেম বাজার নামে। এই নামের পেছনে আছে বিশাল রহস্যও। স্থানীয়রা জানালেন, খুব একটা বাইরের কৃষি পণ্য আসে না এই বাজারে। স্থানীয়দের উৎপাদিত বিভিন্ন ফসলকে ঘিরেই ভোরে শুরু হয় এই বাজার। চলে সর্বোচ্চ ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা। ফলে এখানে পাওয়া সব ফসলই থাকে নিরাপদ ও তরতাজা।

গ্রামটির খাবারে আছে আলাদা বৈচিত্র্য। নিজেদের এলাকায় উৎপাদিত তাজা মাছ-মুরগি আর ফল-ফলাদিই তাদের প্রধান খাদ্য উৎস। দূরের অতিথি এলে তাজা এসব খাবারের পাশাপাশি দেশী মুরগির ঝোল আর ছিটা পিঠা দিয়ে করা হয় আপ্যায়ন।

গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার মুন্সি নারায়ণপুরের প্রতিটি বাড়িতেই আছে লিচু গাছ। চলছে মধুমাস, তাই এই গ্রামের গাছে গাছে থোকায় থোকায় ধরে আছে লিচু। সকাল হলেই প্রতিটি বাড়িতে চলে লিচু পাড়ার ধুম। তারপর লিচুগুলো প্রস্তুত করা হয় বাজারে পাঠানোর জন্য। গ্রামটিতে এ সময়ে অতিথি আপ্যায়নও হয় লিচুসহ মৌসুমি ফল দিয়ে। আমাদেরও আপ্যায়ন করা হয় একই পদ্ধতিতে। দুপুরে আড্ডাও বসে গ্রামের এক প্রান্তের শতবর্ষী অশ্বত্থ গাছের তলে। শোনা যায় সেই গাছকে ঘিরে থাকা নানান মিথ বা কল্পকাহিনী। 

দেখতে দেখতে দিনের শেষ, বিদায়ের পালা। আধুনিকতার ছোবলে পরিবর্তনের এই সময়ে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার মুন্সি নারায়ণপুর একটি ব্যতিক্রমী গ্রাম। এখানে যেমন আছে ঐতিহ্যের সম্মীলন, আছে সাম্প্রদায়ীক সম্পৃতি এবং ভ্রাতৃত্ববোধ। সব মিলিয়ে পুরো গ্রামের মানুষের আপ্যায়নপ্রবণ মন সত্যি স্মরণে রাখার মতো।

বিভি/পিএইচ

মন্তব্য করুন: