• NEWS PORTAL

  • বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

তামাক চাষ বাড়লে, বিলুপ্ত হবে ইলিশ: আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের

প্রকাশিত: ২১:১০, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ফন্ট সাইজ
তামাক চাষ বাড়লে, বিলুপ্ত হবে ইলিশ: আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের

হালদার পাড়ে তামাক চাষের ফলে ব্যাপক দূষণের কারণে ২০১৬ সালে নদীতে ইলিশের ডিম উৎপাদন আশঙ্কাজনক হারে কমে যায়। পরে মৎস সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। হালদার পাড়ে তামাকচাষ নিষিদ্ধের উদ্যোগ নিলেও, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অসহযোগিতার কারণে নিষিদ্ধ করা যাচ্ছে না। তামাক কোম্পানিগুলোর আগ্রাসী কার্যক্রম ও সরকারের কিছু উচ্চপদস্থ অসাধু কর্মকর্তারাই এর জন্য দায়ী। 
 
রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টায় বাংলাদেশ তামাকবিরোধী জোট, উবিনিগ, তাবিনাজ ও ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘পরিবেশ সুরক্ষা ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা (খসড়া) চূড়ান্ত করা জরুরি’- শীর্ষক ভার্চুয়াল টকশোতে উপস্থিত বিশেষজ্ঞ আলোচকরা এই দাবি জানান। ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের কর্মসূচি প্রধান সৈয়দা অনন্যা রহমানের সঞ্চালনায় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রকল্প কর্মকর্তা মিঠুন বৈদ্য। অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশ তামাকবিরোধী জোট এর ফেসবুক পেজ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।

অধ্যাপক ড. মো. মনজুরুল কিবরিয়া (প্রাণিবিদ্যা বিভাগ ও কো-অর্ডিনেটর, হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়) বলেন, হালদা অববাহিকার মনিকছড়ি এলাকায় শতশত একর জমিতে তামাক চাষের কারণে নদীতে মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন চক্র হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। তামাক চাষে স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ১০ গুণ বেশি রাসায়নিক সার ব্যবহৃত হওয়ার পাশাপাশি তামাক গাছের উচ্ছিষ্টাংশ বৃষ্টির পানির ঢলের মাধ্যমে নদীতে পড়ছে। যা দূষণ সৃষ্টির মাধ্যমে মৎস সম্পদকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। অত্র এলাকাকে মৎস হেরিটেজ ঘোষণা করা হলেও এর অববাহিকায় তামাক চাষ নিষিদ্ধ করা হয়নি যা সরকারের নীতিগত বৈপরিত্যকেই তুলে ধরে।

উন্নয়ন পরামর্শক নাসির উদ্দীন শেখ বলেন, ফসলের উর্বরতা ও পরাগায়নের জন্য প্রয়োজনীয় কীটপতঙ্গ তামাক চাষের জমিতে বসে না। ফলে জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে যা আমাদেরকে দীর্ঘমেয়াদী খাদ্য সংকটের দিকে ধাবিত করছে। গো- খাদ্য এবং গবাদিপশুর জন্যও তামাক ক্ষতিকর। ফলে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে তাল মিলিয়ে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত ও পরিবেশকে তামাকের ক্ষতি থেকে রক্ষা করা জরুরি। তিনি তামাক পাতার উপর মওকুফকৃত ২৫ শতাংশ রফতানিশুল্ক পুনর্বহালের দাবি জানান।

ইপসা’র প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী মো: আরিফুর রহমান উল্লেখ করেন, তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণে বিদ্যমান আইনে সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা না থাকায় কৃষকদের তামাক চাষে প্রলুব্ধ করছে কোম্পানিগুলো। এমনকি নীতি নির্ধারনী পর্যায়েও প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে। তিনি আরো বলেন তামাকের বিকল্প চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করতে কারিগরি সহায়তা, উন্নত ও দ্রুত বর্ধনশীল বীজ সার প্রদানের পাশাপাশি স্বল্প শর্তে ঋণ প্রদান কার্যকর ভূমিকা রাখবে। একক ফসল হিসেবে আয়- ব্যয় তুলনায় চৌদ্দটি ফসলের মধ্যে ১২ তম অবস্থানে রয়েছে তামাক। সুতরাং তামাক চাষ লাভজনক এটা নিছকই তামাক কোম্পানীর একটি মিথ্যা প্রচারনা।

বিশিষ্ট আইনজীবী ও নীতি বিশ্লেষক মাহবুবুল আলম বলেন, বিগত দিনে কৃষি অধিদফতর ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তামাক কোম্পানির সাথে সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। সংবিধান ও আদালতের নির্দেশনায় জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর তামাক চাষ যৌক্তিক সময়ের মধ্যে কমিয়ে আনতে বলা হলেও নির্বাহী বিভাগের কর্মকর্তাগণ আদালত ও সংবিধানের নির্দেশনা মানছেন না। এমনকি তামাক পাতার মূল্য নির্ধারনী কমিটিতেও সরকারের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে যা খুবই উদ্বেগজনক। 

তিনি আরও বলেন, সবজী উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দেশগুলোর তালিকাতে থাকা সত্ত্বেও সঠিক সংরক্ষনের ব্যবস্থা না থাকায় প্রতিবছর মাঠেই ২৫০০ কোটি টাকার সবজী নষ্ট হচ্ছে। পার্বত্য অঞ্চলগুলোতে তামাকের পরিবর্তে বিভিন্ন উচ্চমূল্যের মসলা চাষের মাধ্যমে প্রতিবছর ৪ হাজার কোটি টাকার অধিক মসলা আমদানির পরিমানও কমানো সম্ভব।

উবিনীগ’র পরিচালক সীমা দাস সীমু বলেন, তামাক চাষের ফলে রবি মৌসুমে ফসলের উৎপাদন কমছে যা জাতীয় খাদ্য ঘাটতির দিকে ধাবিত করছে। তামাক চাষের জন্য কৃষকদেরকে চড়া সুদে সার, বীজ সরবরাহ করা হয় এবং কোম্পানির পক্ষ থেকেই প্রতিবছর পাতার গ্রেড নির্ধারনের সুযোগে চাষীদেরকে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে কম মূল্য দেয়া হয়। ফলে, এই ঋণের বোঝা এবং তামাকের চক্র থেকে চাষী বের হতে পারেনা। পরিশেষে তিনি তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা (খসড়া) চুড়ান্তকরণের পাশাপাশি সরকার সংরক্ষিত বণভূমিতে তামাক চাষের জন্য যেন কোন গাছ কাটা না হয় সেদিকে নজর দেওয়ার আহবান জানান।

বাংলাদেশ তামাকবিরোধী জোটের সমন্বয়কারী সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা ও জনস্বাস্থ্য বিবেচনায় তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণের কোনো বিকল্প নেই। অথচ রফতানি শুল্ক ছাড় দেবার কারণে মাত্র ১ বছরের ব্যবধানে ৫০ হাজার একর জমিতে তামাক চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণে কৃষি মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে সম্পৃক্ত করা জরুরি। এ ছাড়া সর্বোপরি তামাক চাষকে নিরুৎসাহিত করতে তামাক চাষের জমির উপরে দ্বিগুন পরিমানে ভূমিকর আরোপের দাবি জানান। তিনি তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণ প্রক্রিয়ায় তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণকে অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশও করেন।
 

বিভি/টিটি

মন্তব্য করুন:

সর্বাধিক পঠিত
Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2