ধারাবাহিকতার অঙ্গীকার নিয়ে নতুন কার্যালয়ে ‘নান্দিক’

ধারাবাহিকতার অঙ্গীকার নিয়ে নতুন কার্যালয়ে ‘নান্দিক’
গান কবিতা কথায় শুভ উদ্বোধন হলো কবি ইসমত শিল্পী সম্পাদিত শিল্প-সাহিত্য বিষয়ক পত্রিকা নান্দিকের নতুন কার্যালয়। শনিবার (২৯ জুলাই) সন্ধ্যায় রাজধানী কাঁটাবনের কনকর্ড ইম্পোরিয়াম শপিং কমপ্লেক্সে উদ্বোধন হয় নান্দিক কার্যালয়।
২৮ জুলাই উদ্বোধনের তারিখ নির্ধারণ থাকলেও দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির অস্থিরতার কারণে একদিন পিছিয়ে তা শনিবার (২৯ জুলাই) করা হয়।
মূলত নান্দিক একটি আনন্দের স্থান, একটি প্লাটফর্ম। সাহিত্য সংস্কৃতি শিক্ষা ও সমাজের নানাধরনের আলাপে আনন্দের উদযাপনে নান্দিক নিয়োজিত থাকে। ত্রৈমাসিক পত্রিকা সহ পাঠাগারের কর্মসূচিও চালায় নান্দিক। যা ২০২০ সাল থেকে কাজ করছে নান্দিক পাঠাগার নামে। বিশেষ করে কিশোর তরুণদের বই পাঠে আগ্রহী করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এই পাঠাগার।
নান্দিক এর ফাউন্ডার, সম্পাদক কবি ইসমত শিল্পী বলেন, শনিবার নান্দিকের একটি আউটলেট উদ্বোধন হলেও মূলত নান্দিক কার্যক্রম শুরু হয় অনেক আগেই। কার্যক্রমের মধ্যে গুণিজনদের জন্মদিন পালন, বিশেষ বিশেষ বই নিয়ে আলোচনা, আবৃত্তি, সংঙ্গীতসহ আলাপের একটি আয়োজন ‘নান্দিক আলাপ; চলে ফেসবুক অনলাইনে। করোনাকালীন সময়ে নান্দিকের এধরনের অনুষ্ঠানগুলো দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে সুহৃদ বন্ধুদের। ‘নান্দিক আলাপ’ নান্দিকের ধারাবাহিক চলমান কার্যক্রম হিসেবে আছে, থাকবে।
এছাড়া ‘নান্দিক পাক্ষিক বৈঠক’ করার ইচ্ছা আছে বলেও জানান ইসমত শিল্পী। কথা কবিতা গান নিয়ে বৈঠকে আসবেন, অংশগ্রহণ করবেন নান্দিকপ্রেমীরা এটাই তার প্রত্যাশা।
নান্দিক মূলত একটি অরাজনৈতিক, সাহিত্য সংস্কৃতি ও শিক্ষা সংক্রান্ত প্ল্যাটফর্ম। একটি আনন্দঘন পরিবেশে নানা সম্পর্কে সম্পর্কিত মানুষের মিলনমেলা, সাহিত্য চর্চার কেন্দ্রবিন্দু।
নান্দিক নানা আয়োজনে বর্ণিত যেমন:
* গুণিজনদের জন্মদিন পালন
* বিশেষ বিশেষ বই নিয়ে আলোচনা
* আবৃত্তি, সংঙ্গীত সহ আলাপের একটি আয়োজন "নান্দিক আলাপ"
* নান্দিক বই পড়া ও পাঠাগার
* নান্দিক ত্রৈমাসিক পত্রিকা ইত্যাদি
তাছাড়াও আরও কিছু উদ্দ্যোগ শীঘ্রই শুরু হবে বলে, জানা গেছে, যেমন:
* নান্দিক প্রকাশনা
* ‘নান্দিক পাক্ষিক বৈঠকৎ’
নান্দিক এর সামগ্রিক আয়োজন এবং প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিশ্রুতিকে যেভাবে দেখেন সরদার আরিফ উদ্দিন...
১। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, আমরা সামগ্রিকভাবে একটা নেতৃত্ব সংকটে আছি। যে কোন প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেই গুনগত এবং যথার্থ নেতৃত্ব পাওয়া যাচ্ছে না। মাঝে মাঝে এই সংকট উত্তরনের সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে আবার মিলিয়ে যাচ্ছে কুলুষিত রাজনৈতিক কারনে। রাষ্ট্র, রাষ্ট্রিয় প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে, ছোট ছোট প্রতিষ্ঠানেও নেতৃত্ব বিকশিত হচ্ছে না। নান্দিক এর উদীয়মান নেতৃত্ব আশার আলো দেখাচ্ছে। যিনি নান্দিকের ফাইন্ডার, তিনি যথেষ্ট নেতৃত্তের গুনাবলী সম্বলিত। এখানে participatory planning, collective decission making, democracy practice ইত্যাদির চর্চা হচ্ছে।
২। নান্দিক নানা পেশার, নানা মতের মানুষকে সংঘটিত করছে নিজ গুনেই। অনেকে এটাকে নেটওয়ার্কিং দক্ষতা বলে থাকে কিন্তু আমি "নেটওয়ার্কিং' শব্দ বলতে নারাজ, নেটওয়ার্কিং শব্দটিকে আমার অনেক বেশি কমার্শিয়াল মনে হয়। বরং বলতে পারি, কানেকটিভিটি (connectivity), নান্দিক কানেক্ট করতে পারে। ব্যক্তির সাথে ব্যক্তির, প্রতিষ্ঠানের সাথে প্রতিষ্ঠানের কানেকটিভিটি, এমনকি, সংস্কৃতির মধ্যেও অন্য সংস্কৃতি এবং ভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যকার কানেকটিভিটি তৈরি করা নান্দিকের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য।
৩। নান্দিকের নিজের একটি " ইগো" আছে। অনেকেই "ইগো" শব্দটিকে negatively persive করে, এমনকি মনোবিজ্ঞানেও "ইগো" কে নেগেটিভলি দেখা হয় এবং সেভাবেই চিকিৎসা ফ্রেম সাজানো হয়। কিন্ত আমি শব্দটিকে neutral word হিসেবেই ভাবি। শব্দটির applied form, positive হবে নাকি negative হবে, সেটা নির্ভর করে, শব্দটির ব্যবহারের উপর। এক্ষেত্রে নান্দিক অনেকটা এগিয়ে আছে, নান্দিক তার ইগোকে পজিটিভলি ব্যবহার করছে। যেমন, নান্দিক কোয়ালিটির সাথে কোন কম্প্রোমাইজ করবে না, স্ট্রাগল করবে কিন্তু কাজের ক্ষেত্রে কোয়ালিটিতে ছাড় দেবে না। অনেকেই বলে থাকে, বৈরী পরিস্থিতিতে টিকে থাকার জন্য, অনেক সময়ে কম্প্রোমাইজ করতে হয় কিন্ত নান্দিক এক্ষেত্রে অনড়।
৪। অনেক প্রতিষ্ঠানেরই কাগজে কলমে vision statement লেখা থাকে কিন্ত চর্চার মধ্যে তার প্রতিফলন দেখা যায় না প্রায় ক্ষেত্রেই। নান্দিকের কোন vision statement লিখা আছে কি না, আমি জানি না, কোথাও পড়িওনি। কিন্তু তাদের কার্যক্রম, তাদের চিন্তার দর্শন এবং আচরনে, তাদের ভিশন এর প্রতিফলন পাওয়া যায়।
৫। নান্দিক সফল হবার পথে হাটছে না, এ ব্যাপারে চিন্তিত ও না বরং স্বার্থক হয়ে উঠবার চেষ্টা করছে। অথচ, চাইলেই খুব দ্রুত সফল হয়ে উঠতে পারে। নান্দিক এগিয়ে যাক তার প্রতিশ্রুতি নিয়ে, এটাই প্রত্যাশা।
‘নান্দিক’ কার্যালয়ের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিলেন অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী। নাট্য নির্দেশক ও শিল্পকলা একাডেমির পরিচালক ড. আইরিন পারভিন লোপা, লেখক গবেষক ড. সরকার আবদুল মান্নান, উন্নয়ন সংস্থা পিকেএসএফ এর সাবেক পরিচালক ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন পরামর্শক সরদার আরিফ উদ্দিন, শিল্পী, সাহিত্য ও সংস্কৃতির অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী।
বিভি/এজেড
মন্তব্য করুন: