ভাষা দিবসে দেশে প্রথমবার চালু হলো ইশারা ভাষার ই-অভিধান
মানুষের যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম ভাষা। মুখের ভাষা দিয়েই তৈরি হয় সম্পর্ক। কিন্তু যারা কথা বলতে কিংবা শুনতে পায় না তাদের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ইশারা ভাষা। বাংলাদেশে শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী কিংবা ইশারা ভাষার মানুষের সংখ্যা প্রায় ৩০ লাখ। বিশাল এই জনগোষ্ঠীর জন্য দেশে প্রথমবার এসেছে ই-বাংলা ইশারা ভাষার অভিধান।
২১ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে-‘এসো ইশারা ভাষা শিখি শিরোনামের’ ই-অভিধান অনলাইনে উদ্বোধন করেন ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার। ইউএনডিপি উদ্দ্যোগ তৈরি হয়েছে এই অভিধান। https://ishara.sonket.org এই লিঙ্কের মাধ্যমে অভিধানটি ব্যাবহার করা যাবে এবং গুগল প্লে স্টোর থেকে অ্যাপটি ডাউনলোড করা যাবে।
এই প্রসঙ্গে লিলার বলেন, কোনো মানুষ বা জনগোষ্ঠীর জন্য কিছু করতে চাইলে সবার আগে দরকার তাঁর প্রয়োজনকে জানা এবং তাঁর মনের কথাগুলো বোঝা। এই মোবাইল অ্যপলিকেশনের মাধ্যমে আমরা তার অনেকটাই বুঝতে পারব। আর এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, আমরা যারা শব্দ ভাষায় কথা বলি তাঁদের ইশারা ভাষা শিখতে সাহায্য করা, যাতে শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী মানুষের কথা আমরা বুঝতে পারি। এই মোবাইল অ্যপলিকেশনটি তৈরি ছিল ইউএনডিপির মহৎ উদ্যোগ। ওয়েব এবং মোবাইল এই দুটি ভার্সনে অভিধানটি ব্যাবহার করা যাবে। ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে অভিধানটি প্রকাশ করতে পেরে ইউএনডিপি আনন্দিত।
এই অভিধানকে আলোর মুখ দেখানোর নেপথ্যে কাজ করেছেন ইশারা ভাষা বিশেষজ্ঞ মনোয়ার হোসেন, শিরীন আক্তার রুপা, শাহনাজ রিতা এবং আহসান হাবীব। এই চারজনই বাংলাদেশ টেলিভিশনের ইশারা ভাষার সংবাদ উপস্থাপক এবং দীর্ঘদিন ধরে তারা রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে ইশারা ভাষার দোভাষী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। আর অ্যাপ ডেভলোপার হিসেবে কাজ করেছেন সাজ্জাদ হোসেন।
প্রজেক্টের কো-অর্ডিনেটর অহসান হাবীব বলেন, ইশারা ভাষার এই অভিধানটি তৈরি করা খুব সহজ ছিল না। ভ্যালিডেটেশনের জন্য আমরা ১৯৯৪ সালে প্রকাশিত জাতীয় বিশেষ শিক্ষা কেন্দ্র, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বধির সংস্থার প্রিন্টেড ভার্সন অভিধানটি ফলো করেছি। আমরা আশা করি এই ই-অভিধানটি শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী বাক্তি এবং সাধারন মানুষের মাঝখানে বৈষম্যের দেয়াল ভাঙতে সাহায্য করবে এবং প্রতিনিয়ত অ্যাপটিতে নতুন শব্দ যুক্ত করা হবে।
ইউএনডিপি বাংলাদেশের হেড অব কমিউনিকেশন আব্দুল কাইয়ুম জানান, ভাব প্রকাশের প্রতিবন্ধকতার কারণে শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধীরা সমাজের মূলধারার সঙ্গে মিশতে পারে না, বঞ্চিত হয় প্রাপ্ত অধিকার থেকে। ইশারা ভাষা নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে রয়েছে যথেষ্ট উদ্যোগ। কিন্তু প্রায়োগিক ক্ষেত্রে কিছু বাধা থেকেই যাচ্ছে! ইশারা ভাষার সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে- এ ভাষা চোখে দেখা যায়। যোগাযোগ স্থাপনে ব্যবহৃত আর অন্য কোনো ভাষাই আমরা দেখতে পাই না। এটাই এ ভাষার সৌন্দর্য ও স্বকীয়তা, যা সবাইকে মুগ্ধ করে প্রতিনিয়ত। এই ভাষা ও ভাষার মানুষের প্রতি গভীর ভালোবাসা থেকে ইউএনডিপি উদ্দ্যোগ নেয় বাংলা ইশারা ভাষার অভিধান তৈরির। এটি বাংলাদেশে প্রথম ইশারা ভাষার ই-অভিধান।
বিভি/এজেড
মন্তব্য করুন: