শিল্পে আত্মার শক্তি
‘মন যদি চোখকে শাসন করে,তবে কখনো চোখ ভুল করবে না’
- পাবলিয়াস
মন, আত্মা যা কিনা অনুভূতির আতুরাশ্রম, সকল ইচ্ছে, আকাঙ্ক্ষা, লোভ, লালসার উৎপত্তি এই মন থেকেই। শুভ, অশুভকে ধারণ করে মানবের মাঝে এই মন। আকাঙ্খার উৎপত্তি ও তার বহিঃপ্রকাশ ঘটায় তার নিজস্ব গতিপথে।সেই হোমো সেপিয়েন্স থেকে আজ অব্দি নৃকুল তার নিজের গতিতে ছুটে চলে আসছে।
‘দুনিয়াতে মানুষের চেয়ে বড়ো আর কিছু নাই,আর মানুষের মাঝে মনের চেয়ে বড়ো আর কিছু নাই’
- স্যার উইলিয়াম হেমিল্টন।
এই মনের গতিকে মানুষ নানা ভাবে উপস্থাপন করে চলেছে, নানা বিষয় নিয়ে নানানরকম ভঙ্গিতে। তেমনি শিল্পের ভাষায় নিজস্ব গতি কে ব্যবহার করে চিত্রে তার প্রয়োগ ঘটাচ্ছেন শিল্পী জিয়াউর রহমান।এক যুগের বেশি সময় ধরে নিমগ্ন শিল্পী নিজের ভেতরের এই শক্তি কে প্রস্তুত করেছেন একটু একটু করে। শিল্পী আধ্যাত্নিকতাকে পাশ কাটিয়ে এই ধরনীর বুকে চলে বেড়ানো প্রানীকূল, গরু ও ঘোড়াকে তার চিত্রের মুল বিষয়বস্তু হিসাবে বেছে নিয়েছেন,কিন্তু গরু ও ঘোড়া কেন? অন্য অসংখ্য প্রাণী পৃথিবীতে চরে বেড়ায় মানুষের সহচর হয়ে।
গুহাবাসী জীবন থেকে শুরু করে আজ অব্দি খাদ্য উৎপাদনের প্রক্রিয়ায় এই দুই প্রানীর উপস্থিতি লক্ষনীয়। মৃত্তিকা শাসনের মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদন করে মানবকে অস্বস্তি টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করে আসছে এই দুই সহদ্বর।এক অনবদ্য প্রাণশক্তি লুকিয়ে থাকে এই দুই প্রানীর স্পন্দনশীলতায়।
শিল্পী জিয়াউর শীতালক্ষা ও মেঘনা পাড়ের ভাঙ্গন ও গড়নের খেলা, একই সাথে কৃষিজীবী জীবনের নিগুঢ় বাস্তবতা অবলোকন করেছেন এবং দিনে দিনে ভেতরের শক্তিকে পুঞ্জিভূত করেছেন, যখন তুলি হাতে নিয়েছেন কৃতজ্ঞতা স্বীকার হিসাবে চারপাশের বিষয়কে ক্যানভাসে তুলতে ভোলেননি কারন ভেতরের শক্তির উৎস তো এই নিজের চারপাশ।
‘পাখির ডানায় দারুণ শক্তি, গরুর চোখে মায়া’
-কফিল আহমেদ
গরুর চোখের মায়া শিল্পীর দৃষ্টি এড়াতে পারেনি, তা চিত্রপট্টে গভীর ভাবে উপস্থাপন করে ফেলেছেন শিল্পী, আবার গরুর প্রানশক্তিকে নিজের ভেতরের শক্তিতে রুপান্তর ঘটিয়ে ক্যানভাসে আছড়ে পড়েছেন।
আমাদের পূর্বসূরি প্রধান তিন শিল্পী জয়নুল, কামরুল, সুলতান, তাদের চিত্রে রাজনৈতিক আলাপ নিয়ে গরুকে আমরা পাই। প্রতিবাদের প্রতীকী রুপ হয়ে ষাঁড়, গরু আমরা চিত্রে পাই। ঘোড়ার রাজনৈতিক আলাপও কম নয়, সেই প্রাচীন মানুষদের বাহন ও যোদ্ধা হিসাবে ঘোড়ার শক্তিকে ব্যবহার করে আসছে মানুষ। এই শক্তি রুপক হয়ে শিল্পীর ক্যানভাস বারবার অর্থবহ করে আসছে।
শিল্পী জিয়াউরের চিত্রে কখনো রেখায়, কখনো লাল বা সাদা কালো বর্নের মধ্যে দিয়ে নিজেকে অতিক্রমের প্রচেষ্টা লক্ষনীয়। কখনো সমুখ যোদ্ধা হিসাবে ঘোড়া বা ষাঁড়কে আমরা পাই,কিন্তু রেখার যে বলিষ্ঠতা তা ক্যানভাসের ছুটে চলা ষাঁড়কে অতিক্রম করে, নাকি কখনো কখনো গতিকে মন্থর করে দেয় বলে মনে হয়! বিপ্লবী লালকে ধারণ করে জিয়াউরের ষাঁড়ের ছুটে চলার মধ্যে কি বার্তা বহন করে তা স্পষ্ট নয়। মৃত্তিকা স্পর্শী জিয়াউরের ঘোড়া কতটা রাজনৈতিক আলাপ নিয়ে ছুটে চলছে তা দেখবার বিষয়, নাকি শুধু চিত্র কর্মের পেলবতা বাড়িয়েছে। শিল্পী কি নিজের ছুটে চলার মধ্যে এই প্রাণীকুলের শক্তি কে কাজে লাগিয়েছেন নাকি এর মধ্যে কোন বার্তাও রেখেছেন, খানিকটা অপ্রকাশিত।
‘তুমি যা খুঁজছো- তা মূলত তুমি নিজে’
-মাওলানা জালালুদ্দিন রুমি।
শিল্পী জিয়াউর কী খুঁজছে তা হয়তো কিছুটা আমরা বুঝতে পারছি, এখন সময় ও শিল্পীর ক্যানভাস বলে দিবে আত্মার শক্তি শিল্পীকে কোথায় পৌঁছে দেয়।
লেখক- চিত্রশিল্পী
বিভি/এজেড
মন্তব্য করুন: