• NEWS PORTAL

  • রবিবার, ২৫ মে ২০২৫

Drama: Jamai Bou Chor
Drama: Jamai Bou Chor

আইলার ১৬ বছর: সাতক্ষীরার উপকূলে সংস্কার হয়নি অধিকাংশ বেড়িবাঁধ

আসাদুজ্জামান, সাতক্ষীরা

প্রকাশিত: ১১:০১, ২৫ মে ২০২৫

আপডেট: ১১:০২, ২৫ মে ২০২৫

ফন্ট সাইজ
আইলার ১৬ বছর: সাতক্ষীরার উপকূলে সংস্কার হয়নি অধিকাংশ বেড়িবাঁধ

আজ ভয়াল ২৫ মে। ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় আইলার ১৬ বছর পেরিয়ে গেলেও দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের উপকূলজুড়ে ক্ষতিগ্রস্ত আইলা কবলিত হাজার হাজার পরিবার এখনও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি। আইলায় ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় সহায়তায় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো কাজ করলেও ক্ষতিগ্রস্থরা এখনও ফিরতে পারেননি স্বাভাবিক জীবনে।

এদিকে, উপকূলীয় জনপদে এখনও চলছে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান ও খাবার পানির জন্য তীব্র হাহাকার। সর্বগ্রাসী আইলা আজও উপকূলীয় অঞ্চল সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত হাজার, হাজার মানুষকে প্রভাবিত করছে। উপকূলীয় এলাকার বেশ কয়েকটি পয়েন্টে এখনো ঝুকিপূর্ণ রয়েছে বেঁড়িবাধ। তবে, সরকারের পক্ষ থেকে ৩৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধকে স্থায়ীবাঁধে রূপান্তর করা হচ্ছে।

জানা যায়, ২০০৯ সালের ২৫ মে সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস ও ঘুর্ণিঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট সর্বনাশা ‘আইলা’ আঘাত হানে দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় জনপদে। মুহূর্তের মধ্যে সাতক্ষীরার শ্যামনগর, আশাশুনি ও খুলনার কয়রা ও দাকোপ উপজেলার উপকূলবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকা লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। স্বাভাবিকের চেয়ে ১৪-১৫ ফুট উচ্চতায় সমুদ্রের পানি এসে নিমিষেই ভাসিয়ে নিয়ে যায় নারী ও শিশুসহ কয়েক হাজার মানুষ, হাজার হাজার গবাদী পশু আর ঘরবাড়ি। ক্ষণিকের মধ্যে গৃহহীন হয়ে পড়ে লাখো পরিবার। লক্ষ লক্ষ হেক্টর চিংড়ি আর ফসলের ক্ষেত তলিয়ে যায়। ধ্বংস হয়ে যায় উপকূল রক্ষা বাঁধ আর অসংখ্য ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। 

শ্যামনগর উপজেলা প্রকল্প অফিসারের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, আইলার আঘাতে শুধু সাতক্ষীরায়ই প্রাণ হারিয়েছেন ৭৩ জন নারী, পুরুষ ও শিশু। আর আহত হয়েছে অন্তত দুই শতাধিক মানুষ। এছাড়াও, তাৎক্ষণিকভাবে এসব এলাকার ৫ লাখ ৯৫ হাজার ১২২ জন মানুষ নিরাশ্রয় হয়ে পড়ে। শুধু শ্যামনগরেই গৃহহীন হয় ২ লাখ ৪৩ হাজার ২৯৩ জন।

এছাড়া, শ্যামনগরের ৯৬ হাজার ৯১৬টিসহ মোট ১ লাখ ৪২ হাজার ২৪৪টি বসতঘর বিধ্বস্ত হয়। উপজেলার ৪৮ হাজার ৪৬০ পরিবারসহ মোট ১ লাখ ১৪ হাজার পরিবার আইলার আঘাতে সরাসরি ক্ষতির সম্মুখীন হয়। আইলার ধ্বংসযজ্ঞে ৩৯৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ তিন শতাধিক মসজিদ, মন্দির সম্পূর্ণ ও আংশিকভাবে ধ্বংস হওয়ার পাশাপাশি ১৭৯ কিলোমিটার রাস্তা সম্পূর্ণ ও ৯৯ কিলোমিটার আংশিক নষ্ট হয়ে যায়। ৪১টি ব্রিজ ও কালভার্টসহ ১১৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সম্পূর্ণ নদীতে বিলীন হয়ে যায়। শুধু শ্যামনগরেই ১২৭ কিলোমিটার উপকূল রক্ষা বাঁধের ৯৭ কিলোমিটার সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। সহস্রাধিক নলকূপ ও দুই হাজারেরও বেশি পুকুর জলাশয় জলমগ্ন হয়ে পড়ায় দুর্দশাগ্রস্ত লাখ লাখ মানুষের দুর্ভোগ কয়েকগুণ বেড়ে যায়।

এদিকে, আইলা আঘাত আনার ১৬ বছর পেরিয়ে গেলেও উপকূলীয় অঞ্চল সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা, পদ্মপুকুর ও আশশুনির প্রতাপনগর এলাকায় মানুষের হাহাকার থামেনি আজও। দু‘মুঠো ভাত আর জীবনক-জীবিকার জন্য লড়াই করতে হচ্ছে তাদের। আইলার পর থেকে এসব এলাকায় সুপেয় পানি সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করেছে। খাবার পানির জন্য ছুটতে হচ্ছে মাইলের পর মাইল। আইলা কবলিত এ অঞ্চলের রাস্তাঘাট, উপকূলীয় বেড়িবাঁধ এখনও যথাযথভাবে সংস্কার হয়নি। এর উপর ২০২০ সালের ২০ মে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে আবারও লণ্ডভণ্ড  হয়ে যায় উপকূলীয় জনপদ। এর ফলে যে কোন ধরনের  ঘূর্ণিঝড় এর আগমনী বার্তায় উপকূলীয় এলাকার লক্ষ লক্ষ মানুষ জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধ ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটান। 

স্থানীয়দের দাবি, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মানসহ সুপেয় পানি ও এলাকার রাস্তাঘাট সংস্কারে সরকার যেন দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।

উপকূলীয় উপজেলা শ্যামনগরের গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা মাসুদুল আলম জানান, প্রলয়ঙ্করী আইলার ১৬ বছর পেরিয়ে গেলেও সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকার মানুষ এখনও মাথা উচু করে দাঁড়াতে পারেননি। আজও এই অঞ্চলের মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের অভাব রয়েছে। একই সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থাও রয়েছে নাজুক অবস্থায়। আর পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধে তার ইউনিয়নের কয়েকটি পয়েন্টে সংস্কার করা হলেও দুই তিনটি জায়গায় এখনো রয়েছে ভয়াবহ ফাটল। নদীতে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেলে বেড়িবাঁধ ভাঙন আতঙ্কে দিন পার করতে গোটা ইউনিয়নবাসীর। 

ভৌগলিক অবস্থানের কারণে প্রতি বছর সাতক্ষীরায় ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে জানান পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সালাউদ্দীন। তিনি বলেন, সরকার ঘূর্ণিঝড় আইলা থেকে শিক্ষা নিয়ে টেকসই বেড়িবাঁধ ও নদী সংরক্ষণ কাজে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। ষাটের দশকে নির্মিত জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধ নিচু হয়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি আরও জানান, সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ মেরামত অব্যাহত রেখেছে। ইতোমধ্যে ৩৫ কিলোমিটার বাঁধকে স্থায়ীবাঁধে রূপান্তর করা হচ্ছে। বাকি বাঁধগুলোকে স্থায়ীবাঁধে রূপান্তর করা হবে পর্যায়ক্রমে।

বিভি/পিএইচ

মন্তব্য করুন: