নদীভাঙন-আগুন-ঋণের বোঝায় দিশেহারা কুড়িগ্রামের দিনমজুর জুয়েল মিয়া
 
								
													কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পাঁচগাছি ইউনিয়নের ধরলা নদীতীরবর্তী দক্ষিণ নওদাবস গ্রামের দিনমজুর জুয়েল মিয়া (৪০) এখন নিঃস্ব ও দিশেহারা। পেশায় দিনমজুর এই মানুষটির জীবনের একমাত্র অবলম্বন ছিল সামান্য বসতভিটা ও কিছু গবাদিপশু। কিন্তু দুর্যোগ যেন পিছু ছাড়ছে না তার।
ধরলা নদীর ভাঙনে এরই মধ্যে তার প্রায় ৫ বিঘা জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। বর্তমানে তিনি তার বাবার দেওয়া মাত্র ৫ শতাংশ জমির ওপর চারটি ছোট ঘর ও একটি গোয়ালঘর নিয়ে কোনোরকমে বসবাস করছিলেন। কিন্তু গত ২২ অক্টোবর (বুধবার) দিবাগত রাত দুইটার দিকে আকস্মিক এক অগ্নিকাণ্ডে সেই ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়ে যায়।
আগুনে তার চারটি গরুর মধ্যে দুইটি পুড়ে মারা যায়, বাকি দুইটি গুরুতর আহত হয়। পরিবারের সব সম্পদ, কাপড়চোপড়, আসবাবপত্র—সবকিছু মুহূর্তেই ছাই হয়ে যায়। এখন তিনি আশ্রয় নিয়েছেন তার ছোট ভাই দুলাল মিস্ত্রির একটি ছোট ঘরে।
অগ্নিকাণ্ডের আগে বাড়ি নির্মাণের সময় জুয়েল মিয়া স্থানীয় এনজিও টিএমএস থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। প্রতি সপ্তাহে ১ হাজার ৩৫০ টাকা করে কিস্তি দিতে হয় তাকে। কিন্তু এখন সবকিছু হারিয়ে তিনি ঋণের কিস্তি চালাতে পারছেন না।
চার সন্তানের পিতা জুয়েল মিয়ার বড় মেয়ে এরইমধ্যে বিবাহিত, এক মেয়ে হেফজো মাদ্রাসায় পড়াশোনা করছে, ছেলে কুড়িগ্রাম পৌরসভার হানাগর এলাকার মাদ্রাসায় দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র, আরেকটি ছোট মেয়ে এখনও শিশুকন্যা। অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া, খাবার ও থাকার জায়গা—সবকিছুর অভাবেয় তিনি চরম কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন।
মানবিক সহায়তা হিসেবে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)মোঃ ইসমাইল হোসেন তাকে ৫ হাজার টাকা নগদ সহায়তা দিয়েছেন। এছাড়া চর উন্নয়ন কমিটি, কুড়িগ্রাম জেলা সভাপতি ও জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম বেবু এক মাসের খাদ্য সহায়তা ও নগদ ৫ হাজার টাকা প্রদান করেছেন।
তবে এত অল্প সহায়তায় জীবন পুনর্গঠন সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন জুয়েল মিয়া। তিনি বলেন— “সব শেষ হয়ে গেছে। ঘর নাই, গরু নাই, খাবার নাই। ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তায় আছি। সরকারের কাছে শুধু একটা আশ্রয় চাই।”
ধরলা নদীর পাড়ে বসবাসকারী বহু পরিবারই প্রায়ই প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু জুয়েল মিয়ার মতো দিনমজুর পরিবারের জন্য এমন দুর্ঘটনা মানে জীবনের সব আলো নিভে যাওয়া। এখন সমাজের বিত্তবান, স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর সহযোগিতাই হতে পারে এই অসহায় পরিবারের নতুন করে বেঁচে ওঠার একমাত্র আশার আলো
বিভি/টিটি
 
						





 
							
							 
						 
 
										 
							 
							 
							 
							 
							 
							 
							 
							 
							 
							
 
											 
											 
											 
											
মন্তব্য করুন: