• NEWS PORTAL

  • মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫

Drama: Jamai Bou Chor
Drama: Jamai Bou Chor

জমিলা ‘কসাই’ নামেই পরিচিত

অসীম চৌধুরী 

প্রকাশিত: ২২:০৩, ১৪ মে ২০২২

আপডেট: ২২:১০, ১৪ মে ২০২২

ফন্ট সাইজ
জমিলা ‘কসাই’ নামেই পরিচিত

দিনাজপুরের বীরগঞ্জের ৩ নং শতগ্রাম ইউনিয়নের ঝাড়বাড়ী বাজার। এই গ্রাম্য বাজারের কসাই জমিলা। ২০ বছরের টানা অভিজ্ঞতায় এখন গরুর গায়ে হাত দিলেই বুঝতে পারেন, পশুটি সুস্থ নাকি রোগাক্রান্ত। অসুস্থ গরু শত অভাবে পড়েও কখনো কেনেননি তিনি। ফলে তার কোনো গরু কিনে আনার পর জবাইয়ের আগ পর্যন্ত অসুখে পড়ে কখনো মরেনি। জমিলা বেগম এখনো নিজে হাটে গিয়ে দেখে শুনে গরু কেনেন।

তার ‘মায়ের দোয়া মাংস ভাণ্ডার’ দোকানের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে মাংস হাঁড় থেকে আলাদা করে বিক্রি করা হয় এখানে। এরপর ডিজিটাল মিটার স্কেলে মেপে বিক্রি করা হয়। বিয়ে বাড়ি, আকিকা, খতনাসহ আশপাশের গ্রাম-শহরের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে জমিলার দোকানের মাংস যায়। দুই দশকের টানা অভিজ্ঞতায় তিনি ক্রেতাদের কাছে হয়ে উঠেছেন বিশ্বস্ত। এলাকায় এখন ‘জমিলা কসাই’ নামেই পরিচিত তিনি।

নিজের কসাই হয়ে ওঠা প্রসঙ্গে জমিলা বলেন, স্বামী কসাই হওয়ায় খুব কাছ থেকে তার কর্মকাণ্ড দেখা, তাকে সহযোগিতা করা আর সংসারের অভাবই আমাকে এই ব্যবসা শিখিয়েছে।

স্বামী জামিলাকে ছেড়ে অন্যত্র চলে যান। আর এরপর আগের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে জামিলা নেমে পড়ে মাংসের দোকানে। ৫০ বছর বয়সী জামিলাকে ছেড়ে দিয়ে তার স্বামী যখন চলে যান তখন তার ঋণের পরিমাণ ছিল প্রায় তিন লাখ টাকা। ওই ঋণ পরিশোধ ও সন্তানদের ভরণপোষণ করতে তিনি এক সময় মাংসের দোকানে কাজ করতে শুরু করেন। তারপর নিজেই এই ব্যবসা শুরু করেন।

আরও পড়ুন:

প্রথম দিকে অনেক প্রতিবন্ধকতা এসেছে। কুসংস্কার ছড়িয়ে নালিশ করে আমার ব্যবসা বন্ধ করতে চেয়েছিল অনেকে, কিন্তু মায়ের প্রেরণায় সব প্রতিবন্ধকতা দূর করে আমি টিকে আছি।

তিনি বলেন, আমার দোকানে এখন প্রতিদিন ক্রেতারা দূর-দূরান্ত থেকে আসে ঠাকুরগাঁও, বীরগঞ্জ খানসামা, নীলফামারী থেকে অনেক কাস্টমার এসে মাংস কিনে নিয়ে যান। এখন আমি প্রতিদিনই গড়ে চারটি থেকে পাঁচটি গরু জবাই করে বিক্রি করি। এখন আমার ছেলে জহুরুল ইসলাম (৩৩) আমাকে সহযোগিতা করে। এবং মা ও ছেলে মিলে দুজনেই বর্তমান দোকান পরিচালনা করি। আমার দোকানে ৮ জন কর্মচারীও আছেন।

আমার সততার কারণে আমি যখন গরু কিনতে বাজারে যাই গরু কেনার পর টাকা কম থাকলে পাইকাররা আমাকে বিশ্বাস করে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা বাকিতে দিয়ে দিত। আমি মাঝে মাঝে অবাক হয়ে যেতাম মানুষ এতোটা আমাকে ভালোবাসে আমার সততার কারণে। বর্তমান আমার এখানে যারা মাংস কিনতে আসেন তারা যেভাবে চান তাদের সেভাবে দেওয়ার চেষ্টা করি। সততা ভালোবাসার কারণে আমার দোকানেই মাংস কিনতে ক্রেতাদের ভিড় থাকে।

খানসামা থানার সহজপুর গ্রামের সোনালী ব্যাংকের অফিসার সোহরাব আলী জানান, জমিলা আসলে সত্যিকারে একজন প্রকৃত নারী উদ্যোক্তা এবং তিনি সফল হয়েছেন। আমি প্রায় ছুটির দিনে ঝাড়বাড়ী মায়ের দোয়া মাংসের ভাণ্ডার থেকে মাংস কিনি। এখানে আমরা আমাদের পছন্দমত মাংসটা কিনতে পারি। জামিলা ক্রেতাদের চাহিদা মতো মাংস দেওয়ার চেষ্টা করেন।

সহজপুর গ্রামের বাসিন্দা সৈয়দ সালেহ আহমেদ বলেন, জামিলা ভাবির নামটা সবার মুখে মুখে থাকে। আশেপাশের কয়েকটা দোকান থেকে তিনগুণ বিক্রি হয় ভাবির দোকান থেকে। কারণ ভাবির ব্যবহারে ক্রেতারা সবাই মুগ্ধ।

বীরগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল কাদের বলেন, জামিলা নারী কসাই হয়ে বাংলাদেশে ইতিহাস তৈরি করেছেন। জামিলা আসলে একজন সত্যিকারের সফল নারী উদ্যোক্তা। সরকারের পক্ষ থেকে তাকে জয়িতা পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।


 

মন্তব্য করুন: