• NEWS PORTAL

  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

৫ মিনিট থমকে দাঁড়ালো রংপুর!

রংপুর প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৪:৪৭, ১ জুন ২০২৩

ফন্ট সাইজ
৫ মিনিট থমকে দাঁড়ালো রংপুর!

পদ্মা সেতুর মতো নিজের টাকায় তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে এবারের বাজেটে বরাদ্দ ও উত্তরের বৈষম্য নিরসসনসহ ৬ দফা দাবিতে রংপুর বিভাগে স্তদ্ধ কর্মসূচি পালন করেছে তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ। 

বৃহস্পতিবার (১ জুন) সকাল ১১টায় নগরির ৩৭টি পয়েন্ট ও বিভাগের আট জেলা শহরসহ তিস্তা নদী পারের দু’ধারে এক যোগে পাঁচ মিনিটের স্তদ্ধ কর্মসূচি পালন করা হয়। সংগ্রাম পরিষদ সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানীর সভাপতিত্বে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে কর্মসূচির উদ্ধোধন করেন সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। এ সময় যে যার অবস্থান থেকে দাড়িয়ে কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করেন। পাঁচ মিনিটের জন্য যানজট আর মানুষ জটের নগরি থমকে দাঁড়ায়। 

নগরভবনের সামনে স্তব্ধ কর্মসূচিতে অংশ নেন সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা রংপুর সিটি করপোরেশন মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। এসময় মেয়র বলেন, তিস্তার ভাঙন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত লাখ লাখ মানুষের দীর্ঘশ্বাসে তিস্তা পাড়ের আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে আছে। তিস্তার দুঃখ ঘোঁচাতে তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ গঠন হয়েছে।

তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ- তিস্তা ইস্যুতে ছয় দফা দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে। তিস্তা আন্দোলন বর্তমানে গণজাগরণে রূপ নিয়েছে। 

আসছে বাজেটে দেশীয় টাকায় তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে মেয়র বলেন, অন্যথায় এ আন্দোলন আরও বড় আকারে ছড়িয়ে পড়বে।

কর্মসূচির শুরুতে বক্তারা বলেন, তিস্তা আন্দোলনের মূল দাবি; অভিন্ন নদী হিসেবে ভারতের সঙ্গে ন্যায্য হিস্যার ভিত্তিতে তিস্তা চুক্তি সম্পন্ন, তিস্তা নদী খনন, অকাল বন্যা, ভাঙন নিয়ন্ত্রণ ও কৃষকের ফসলের সুরক্ষা। আন্দোলনের লক্ষ্য দুটি। এক আন্তঃদেশীয় ব্যবস্থাপনায় তিস্তা অববাহিকার দুই দেশ মিলে অববাহিকাভিত্তিক তিস্তা নদী ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা। দুই দেশীয় ব্যবস্থাপনায় তিস্তা নদী খনন, ভাঙন রোধে কার্যকর পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন। এর একটিও বাস্তবায়িত না হওয়ায় বাংলাদেশ অংশের ১১৫ কিলোমিটারব্যাপী তিস্তা অববাহিকার জনপদের দুই কোটি মানুষের জীবনে নেমে এসেছে মহাদুর্যোগ। খরা, বন্যা ও নদী ভাঙনে তিস্তা পাড়ের ঘরে ঘরে চলছে আহাজারি। নদী ভাঙনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় বর্তমানে কোথাও কোথাও তিস্তা নদীর প্রস্থ হয়েছে ১২ কিলোমিটার। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় পরিস্থিতি ক্রমাগত বেসামাল হয়ে উঠছে। বাড়ছে খরার প্রকোপ। উজানের বক্তারা বলেন, পাহাড়ি ঢলে বাড়ছে অসময়ের হালকা বন্যা ও নদী ভাঙনের ভয়াবহতা। গজলডোবায় বাঁধ দিয়ে শুকনো মৌসুমে পানি আটকে রাখা হচ্ছে। একটু পানি বেশি হলেই কোনো সতর্কতা জারি না করেই গজলডোবার কপাট দেওয়া হয় খুলে। ঘটছে ব্যাপক ফসলহানি। হুমকিতে পড়েছে খাদ্য নিরাপত্তা। বাড়ছে উদ্বাস্তু মানুষের সংখ্যা বাড়ছে রংপুর বিভাগে গড় দারিদ্রের হার। সারাদেশে ১০টি দরিদ্র জেলার মধ্যে ৬টিই রংপুর বিভাগে। দেশে দারিদ্রের হার ২০ শতাংশ হলেও রংপুর বিভাগে দারিদ্রের হার ৪৬ শতাংশ। দারিদ্রতা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ নদী ভাঙন ও কর্মসংস্থানের অভাব।

উত্তরের ২৩৭ বছর বয়সী নদী তিস্তার জন্মলগ্ন থেকে আজ অবধি কোনো পরিচর্যাই করা হয়নি। তিস্তার নাব্যতা নেই, নেই সামান্য গভীরতা। তিস্তার উপনদী, শাখা-প্রশাখা এখন তিস্তা থেকে বিচ্ছিন্ন, সংযোগ হারা। তিস্তার মরণে এর শাখা-প্রশাখা ও উপনদীগুলো হয়েছে দখল, হয়েছে গতিহারা। পরিণত হয়েছে জলশূন্য মরা খালে। 

বক্তারা বলেন, ঢাকাসহ দক্ষিণাঞ্চলের মেগা প্রকল্পগুলোতে ৩ লাখ কোটি টাকার কাজ চলছে। সমতা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে হয়নি। কোনো কোনো বছর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে রংপুর বিভাগের জন্য মাত্র ০.৯৮ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম লক্ষ্য ছিল বৈষম্য দূরীকরণ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমৃত্যু বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন।

তিস্তা নদী সুরক্ষায় তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে ৯-১০ হাজার কোটি টাকা রাষ্ট্রের কাছে বড় টাকা নয়। প্রতিবছর খরচ হবে প্রায় দেড় থেকে দুই হাজার কোটি টাকা। বিশ্বে নদী সুরক্ষায় যারা দক্ষ-অভিজ্ঞ তাদের মেধা ও প্রযুক্তি কাজে লাগানোর দাবি করা হয়।

এর আগে গত ৬ মে রংপুরে গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও তিস্তা চুক্তি সই করাসহ দ্রুত তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে ২০২০ সালের ১ নভেম্বর তিস্তার দুই তীরে ২৩০ কিলোমিটারব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে সংগঠনটি। এতে দুই তীরের লাখো মানুষ এ কর্মসূচিতে অংশ নেন।

স্তব্ধ কর্মসূচিতে সংগ্রাম পরিষদেও সাধারণ সম্পাদক শফিয়ার রহমান, উপদেষ্টামণ্ডলির সদস্য অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলী, রংপুর মহানগর সুজনের সভাপতি অধ্যক্ষ ফখরুল আনাম বেঞ্জু, রংপুর জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব আব্দুর রাজ্জাক, মহানগর জাতীয় পার্টির সহ-সভাপতি লোকমান হোসেন, মহানগর দোকান মালিক সমিতির সহ-সভাপতি মফিজার রহমান চাঁন, সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন, জাসদের রংপুর জেলা সভাপতি সাখাওয়াত রাঙ্গা, সদর উপজেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক মাসুদ নবী মুন্নাসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ অংশ নেন।

বিভি/টিটি

মন্তব্য করুন: