ছাত্র হামলায় অভিযুক্ত রাবির তিন কর্মকর্তাকে পুলিশে সোপর্দ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) তিন আওয়ামীপন্থী কর্মকর্তাকে পুলিশে দিয়েছে স্থানীয় সাবেক শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) দুপুরে কর্মরত অবস্থায় তাদেরকে প্রথমে লীগ্যাল সেলে নিয়ে যান তারা। পরবর্তীতে পুলিশ এসে তাদেরকে গ্রেফতার করে।
জুলাই আগস্টে শিক্ষার্থীদের উপর হামলার সাথে জড়িত বলে অভিযোগ আছে তাদের বিরুদ্ধে। এছাড়া তাদের বিরুদ্ধে বোয়ালিয়া থানায় মামলা রয়েছে এবং তারা এজাহারভুক্ত আসামি বলে জানিয়েছেন মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত ওসি আব্দুল মালেক।
এজাহার ভুক্ত আসামিরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকশন অফিসার পঙ্কজ কুমার, অর্থ ও হিসাব শাখার উপ পরিচালক আমিনুল হক, অর্থ ও হিসাব শাখার সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল মাসুদ।
আইন বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী আল আমিন বলেন, আমরা গত সপ্তাহে দাবি জানাতে এসেছিলাম রেজিস্ট্রারের কাছে। তিনি আজকে আমাদের সময় দিয়েছিলেন। আমরা আজ আসার পর তিনি আমাদের পাত্তাই দিচ্ছেন না। স্যার কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায়, আমরা নিজেরাই পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছি। আমরা উনাদেরকে লিগাল সেলে আসতে বলি, পরে স্যার উনাদের প্রক্টর দপ্তরে রেখে যান এবং পুলিশকে ইনফর্ম করেন। এখন দেখা যাক তারা কি করেন। আমরা যাদের ধরেছি তারা সবাই এজাহারভুক্ত আসামি।
আরেক সাবেক শিক্ষার্থী বলেন, এরা সবাই ছিলেন একেকজন আওয়ামী লীগের ক্যাডার। ২০১৮ সালে তারা আমাদের উপর হামলা করেছে। জুলাই অভ্যুত্থানেও তারা আমাদের উপর হামলা করেছে; কিন্তু তারপরেও এখনো চাকরি করে যাচ্ছে। এক বছর হয়ে গেলেও পুলিশ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি তাই আজ আমরা তাদেরকে পুলিশের হাতে তুলে দিলাম।
এজাহার ভুক্ত আসামি সেকশন অফিসার পঙ্কজ কুমার বলেন, "আমি কখনো শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করিনি। আন্দোলনে আমি বাসাতেই ছিলাম। ৫ আগস্টে আমি বাসা থেকেই বের হইনি। শুনেছিলাম আমার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে; কিন্তু কেউ কখনো কিছু বলেনি। আজ হঠাৎ তারা আমাকে ধরে আনছে। কেন ধরছে আমার জানা নেই।"
আরেক এজাহার ভুক্ত আসামি আবদুল্লাহ আল মাসুদ বলেন, "সোবহান স্যারের আমলে আমি নিজে ছাত্রলীগের দ্বারা নির্যাতিত হয়েছি। আমি কখনো শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কিছু করিনি। ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগ করেছি; কিন্তু আমি চাকরি জীবনে কখনো কোন রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলাম না। কোন শিক্ষার্থীর উপর কখনো হামলাও করিনি। শুনেছিলাম মামলা হয়েছে, কিন্তু বিস্তারিত জানি না। আজ যারা আমাদের ধরেছে, মনে হচ্ছে তারা জামায়াত-শিবির।"
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত সংগঠন জুলাই বিপ্লব চেতনা বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক
ইতিহাস বিভাগের ২০০৮-০৯ সেশনের শিক্ষার্থী মো. মুস্তফিজুর রহমান। তিনি জানান, ১৬ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত বিভিন্নভাবে এই তিন কর্মকর্তা ছাত্রদের উপর হামলা করেছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলাও আছে। কিন্তু তারা আইন অমান্য করে জামিন না নিয়ে এখনো চাকরি করে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের কোনো দোসর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনে থাকতে পারবে না। যেখানে থাকবে সেখানে আমরা প্রতিবাদ জানাবো।
এ প্রসঙ্গে মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল মালেক বলেন, "তাদের বিরুদ্ধে মামলা আছে, তাই তাদেরকে নিয়ে যাচ্ছি। তারা এজাহার ভুক্ত আসামি।"
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান বলেন, "তাদের বিরুদ্ধে মামলা আছে। মতিহার থানা পুলিশ আমাকে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ দেখিয়েছে, তাই আমি তাদেরকে নিয়ে যেতে দিয়েছি। তবে সাবেক শিক্ষার্থীরা যেটা করছে এটা কখনোই কাম্য না। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কর্মরত অবস্থায় তারা এভাবে ধরে নিয়ে যেতে পারে না। এটা পুলিশের কাজ পুলিশ করবে। পরেরবার থেকে আমি এটা মোটেও অ্যালাউ করবো না।"
বিভি/এজেড
মন্তব্য করুন: