• NEWS PORTAL

  • বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

সাবেক মন্ত্রীর ভাই মোহতেশাম বাবরের বিরুদ্ধে যতো অভিযোগ

হারুন আনসারী, ফরিদপুর প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৯:৪৬, ৮ মার্চ ২০২২

আপডেট: ২০:৫০, ৮ মার্চ ২০২২

ফন্ট সাইজ
সাবেক মন্ত্রীর ভাই মোহতেশাম বাবরের বিরুদ্ধে যতো অভিযোগ

খন্দকার মোহতেশাম হোসেন বাবর

ফরিদপুর সদর আসনের সংসদ সদস্য, সাবেক মন্ত্রী এবং জাতীয় সংসদের স্থানীয় সরকার বিভাগ সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ভাই ফরিদপুর সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান খন্দকার মোহতেশাম হোসেন বাবরকে (৬৭) গ্রেফতার করা হয়েছে। মঙ্গলবার (৮ মার্চ) বিকালে আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। 

এর আগে সোমবার রাত ২টার দিকে ঢাকার বসুন্ধরা এলাকা হতে তাকে অর্থপাচার মামলার আসামি হিসেবে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তাকে ফরিদপুরের কোতয়ালী থানায় নিয়ে আসা হয়। দুপুরে কোতয়ালী থানায় এ ব্যাপারে সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশ।

ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জামাল পাশা সংবাদ সম্মেলনে বলেন, খন্দকার মোহতেশাম হোসেন বাবর ২ হাজার কোটি টাকা অর্থপাচারের মামলায় চার্জশিটভুক্ত একজন আসামি। তিনি দীর্ঘদিন পলাতক ছিলেন। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে ঢাকার ভাটারার বসুন্ধরার জি ব্লক এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়। 

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরও জানান, ফরিদপুর সদর উপজেলার সাবেক এই চেয়ারম্যান ক্ষমতায় থাকাকালে তিনি দলীয় ক্ষমতা এবং তার ভাইয়ের ক্ষমতাসহ সকল ধরনের ক্ষমতা প্রয়োগ করে ফরিদপুরের সকল ধরনের টেন্ডার থেকে কমিশন বাণিজ্য এবং চাকরি বাণিজ্য করে দেশেবিদেশে অঢেল সম্পত্তি অর্জন করেন। ২০২০ সালে বিশেষ অভিযান পরিচালনাকালে তার ছত্রছায়ায় হাতুড়ি বাহিনী এবং হেলমেট বাহিনী আত্মগোপনে চলে যায়। 

তিনি জানান, সিআইডি’র দায়েরকৃত ডিএমপির কাফরুল থানার ২৪ নং মামলায় তদন্ত শেষে তার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। তার বিরুদ্ধে আদালত হতে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করা হয়।

আলোচিত খন্দকার মোহতেশাম হোসেন বাবর জেলা সদরের গোয়ালকান্দির নুরুল হোসেন মিয়ার সেঝ ছেলে। তিনি বিবাহিত এবং দুই ছেলে এক মেয়ে রয়েছে তার। কর্মজীবনে তিনি পোল্ট্রি ব্যবসায়ী ছিলেন। প্রথম জীবনে তার বিরুদ্ধে বিএনপি’র রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ করেন ফরিদপুরের আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। তার বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর ছবি অবমাননারও অভিযোগ রয়েছে তাদের। 

১৯৯১ এর নির্বাচনে তিনি বিএনপি থেকে প্রার্থী হন। ১৯৯৬ ও ২০০১ এর নির্বাচনে তিনি নৌকার প্রার্থী তার বড় ভাই ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বিপক্ষে নির্বাচন করেন। ২০০৯ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে পরের বছর ২০১০ সালে বাবর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত হন। এরপর তিনি ফরিদপুরের ক্ষমতাসীন দলের নেতা হয়ে ব্যাপকভাবে তৎপরতা শুরু করেন। ২০১৪ সালে তিনি সদর উপজেলার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ব্যাপক কারচুপির মাধ্যমে তিনি ওই নির্বাচনে প্রতিপক্ষকে হারিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান হন বলে অভিযোগ করা হয়। এরপর সদর উপজেলাকেন্দ্রীক তিনি নিজস্ব স্টিয়ারিং কমিটি গঠন করে দলের রাজনীতি নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসেন। এসময়ে তার বিরুদ্ধে ফরিদপুরের সবধরনের উন্নয়ন কাজের টেন্ডার হতে কমিশন ও বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে চাকরির বিনিময়ে কমিশন বাণিজ্যের ব্যাপক অভিযোগ ওঠে। ২০১৫ সালে তিনি ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হন। ২০১৭ সালে তিনি ওই পদ হতে বহিষ্কৃত হন। এসময় থেকে তিনি ফরিদপুরের রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিতে বাধ্য হন।

খন্দকার মোহেতেশাম হোসেন বাবরের গ্রেফতারের খবরে এক প্রতিক্রিয়ায় ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মাসুদ হোসেন বলেন, বাবরের গ্রেফতারে ফরিদপুরের আওয়ামী রাজনীতি কলঙ্কমুক্ত হয়েছে। তিনি বলেন, খন্দকার মোহতেশাম হোসেন বাবর আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করে ফরিদপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে ধ্বংসে মেতে উঠেছিলেন। তবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে শুদ্ধি অভিযানে তাদের সকল অপকর্ম ফাঁস হয়েছে। তবে এতোদিনেও তাকে গ্রেফতার না করায় ফরিদপুরবাসী অসন্তুষ্ট ছিলো। আজ তাদের মন থেকে কালো মেঘ সরে গেছে।

২০১৪ সালে সদর উপজেলা নির্বাচনে খন্দকার মোহতেশাম হোসেন বাবরের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি দলীয় প্রার্থী ছিলেন যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সহ-সভাপতি মাহবুবুল হাসান ভুইয়া পিংকু। এক প্রতিক্রিয়ায় মাহবুবুল হাসান পিংকু বলেন, খন্দকার মোহতেশাম হোসেন বাবর আওয়ামী লীগের ক্ষমতাকে অপব্যবহার করে ২০১৪ সালের উপজেলা নির্বাচনে ভোট কারচুপির এক জঘন্য নজির স্থাপন করেন। ওই নির্বাচনে ফরিদপুরের মানুষ আমাকে ভালোবেসে এক লাখ ভোট উপহার দিয়েছিলো। কিন্তু মোহতেশাম হোসেন বাবর ওই নির্বাচনে আমাদের বিজয় ছিনতাই করে নিয়ে যায়। এজন্য ফরিদপুরবাসী তার গ্রেফতারে আনন্দিত।

ফরিদপুরে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা খন্দকার বাবরের গ্রেফতারে শহরে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করে। মঙ্গলবার বিকালে দলীয় কার্যালয় হতে মিছিল বের হয়ে শহরের জনতা ব্যাংকের মোড়ে সমাবেশ করে। জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শামীম হকের সভাপতিত্বে এসময় উপস্থিত ছিলেন ফরিদপুরের পৌর মেয়র অমিতাভ বোস, শহর আওয়ামী লীগের আহŸায়ক মনিরুল হাসান মিঠু, জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক জিয়াউল হাসান মিঠু, জেলা আওয়ামী মহিলা লীগের সভাপতি মাহমুদা বেগম, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তামজিদুল রশিদ চৌধুরী রিয়ান প্রমুখ। 

এ সময় বক্তারা বলেন, খন্দকার মোহতেশাম হোসেন বাবরের গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগ আজ কলঙ্কমুক্ত হলো। বিগতদিনে ফরিদপুরে ক্ষমতার অপব্যবহার করে যে অত্যাচার অবিচার হয়েছে তার গডফাদার এই বাবর। সকল চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজির নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। 

জানা গেছে, দেশের বহুল আলোচিত ২ হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে গত বছরের ২৬ জুন  রাজধানীর কাফরুল থানায় মামলাটি দায়ের করেন সিআইডির পরিদর্শক এস এম মিরাজ আল মাহমুদ। গত গত ৩ মার্চ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির সহকারী পুলিশ কমিশনার (এএসপি) উত্তম কুমার সাহা ১০ জনের বিরুদ্ধে সিএমএম আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে খন্দকার মোহতেশাম হোসেন বাবর ছাড়াও আরো যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে তারা হলেন- ফরিদপুর শহর আওয়ামী বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বরকত, বরকতের ভাই ইমতিয়াজ হাসান রুবেল, ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম খন্দকার লেভী, শহর যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসিবুর রহমান ফারহান, সাবেক মন্ত্রীর এপিএস এএইচএম ফুয়াদ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফাহাদ বিন ওয়াজেদ ওরফে ফাহিম, যুবলীগ নেতা কামরুল হাসান ডেভিড, মুহাম্মদ আলি মিনার ও তারিকুল ইসলাম নাসিম।

 

বিভি/এসডি

মন্তব্য করুন:

Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2