• NEWS PORTAL

  • বুধবার, ০১ মে ২০২৪

যাত্রী সেজে উঠতো তারা, এক মাসে ৩ বাসে ডাকাতি

প্রকাশিত: ১৪:৩২, ১২ জুন ২০২২

আপডেট: ১৪:৩৫, ১২ জুন ২০২২

ফন্ট সাইজ
যাত্রী সেজে উঠতো তারা, এক মাসে ৩ বাসে ডাকাতি

প্রথমে কাউন্টার থেকে সাধারণ যাত্রী সেজে টিকিট কেটে দূর পাল্লার বাসে উঠতো ৮-১০ জনের একটি চক্র। এরপর চলতি পথে টার্গেটকৃত এলাকায় গিয়ে বাসের যাত্রী, চালক ও হেলপারকে দেশীয় অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সর্বস্ব লুটে নিত। এভাবে গত এক মাসে তিনটি দূরপাল্লার বাসে ডাকাতি করেছে মহাসড়কের ডাকাত দলের একটি চক্র। তবে শেষ পর্যন্ত রক্ষা হয়নি। এই চক্রের ১০ জন ধরা পড়েছে র‌্যাবের অভিযানে।

রবিবার (১২ জুন) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।

তিনি জানান, সাভারের আশুলিয়ায় হানিফ পরিবহন ও গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে স্টার লাইন পরিবহনের বাসে ডাকাতিসহ বিভিন্ন সময়ে দূরপাল্লার বাসে ডাকাতির সঙ্গে জড়িত ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-৮ এর একটি আভিযানিক দল। শনিবার (১১ জুন) রাতে ঢাকার আশুলিয়া এলাকা থেকে ডাকাতির প্রস্তুতি নেওয়ার সময় তাদের গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন, ডাকাত সর্দার মো. হীরা শেখ ওরফে কালাম শেখ ওরফে সোলেমান শেখ, তার সহযোগী মো. হাসান মোল্লা ওরফে ইশারত মোল্লা (৩৯), আরিফ প্রামানিক ওরফে আরিফ হোসেন (৩৩), মো. নুর ইসলাম (৫৩), মো. রাজু শেখ, মো. রেজাউল সরকার (৪৯), মো. রতন (৩৬), মো. শরিফুল ইসলাম (৩৯), মো. হানিফ (৪২), মো. নজরুল ইসলাম (৩৫)। গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে ডাকাতিতে ব্যবহৃত একটি বিদেশি পিস্তল, ৩ রাউন্ড গুলি, ৮টি দেশীয় অস্ত্র, ৪টি শ্যামলী এনআর ট্রাভেলসের টিকিট, ৩টি ব্যাগ উদ্ধার করা হয়।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘ডাকাত সর্দার হীরার নেতৃত্বে এই সংঘবদ্ধ ডাকাত দল গত এক মাসে চট্টগ্রাম থেকে যশোরের বেনাপোলগামী হানিফ পরিবহন, ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী ন্যাশনাল ট্রাভেলস এবং কাশিয়ানীতে ঢাকা থেকে কোটালীপাড়াগামী স্টার লাইন পরিবহনে ডাকাতি করেছে।’

তিনি বলেন, ‘তারা একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্রের সদস্য। এই দলের সদস্য সংখ্যা ১২-১৫ জন। তাদের ডাকাত সর্দার হীরা ও তার অন্যতম সহযোগী হাসান মোল্লা বিভিন্ন ডাকাতির পরিকল্পনা করে থাকে। ডাকাত দলটি দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন জেলামুখী যাত্রীবাহী বাসে উঠে ডাকাতি করে আসছিল। গত দুই বছরে তারা ১০-১৫টি বাসে ডাকাতি করেছে। আগেও চক্রটি ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে শ্যামলী পরিবহন ও মামুন ট্রাভেলস, ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে ন্যাশনাল ট্রাভেলস ও একতা ট্রাভেলসে ডাকাতি করেছে বলে স্বীকার করেছে তারা।’

কমান্ডার মঈন বলেন, ‘ঢাকা রুটের বাস ছাড়াও চট্টগ্রাম-সিলেট মহাসড়কে সৌদিয়া বাসে ডাকাতির সময় তারা বাস চালকের হাতে ও হেলপারের পেটে ছুরিকাঘাত করে। এছাড়া চক্রটি ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে ফাল্গুনী ট্রাভেলস, সুন্দরবন এক্সপ্রেস ও কণক পরিবহন, ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে সুরভী পরিবহন, হানিফ পরিবহন, সিলেট-রাজশাহী মহাসড়কে শ্যামলী পরিবহন ও রইস পরিবহন, ঢাকা-পাবনা মহাসড়কে পাবনা এক্সপ্রেস ও সরকার ট্রাভেলস, রাজশাহী-বরিশাল মহাসড়কে সেবা গ্রীন লাইন পরিবহন ও তুহিন পরিবহনে ডাকাতি করেছে।’

ডাকাতির কৌশল সম্পর্কে কমান্ডার আল মঈন বলেন, ‘ডাকাতির জন্য তারা ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন দূরপাল্লার আন্তঃজেলা বাসকে টার্গেট করে। এক্ষেত্রে চক্রটির কয়েকজন সদস্য আগেই নির্দিষ্ট বাসের কাউন্টার থেকে টিকিট কিনে বাসে উঠে। অন্য সদস্যরা পরে বিভিন্ন কাউন্টার থেকে টার্গেট করা বাসে উঠে। এছাড়া যেসব দূরপাল্লার বাস কাউন্টার ছাড়া যাত্রী উঠায় তারা এসব বাসকে প্রাধান্য দিয়ে ডাকাতি করতো।’

র‌্যাব জানায়, সাধারণত তারা মহাসড়কের নির্জন এলাকাকে বাস ডাকাতির জন্য বেছে নেয়। ডাকাতি করার পর তারা আবার আশুলিয়ায় ফিরে আসে। এছাড়া বিভিন্ন সময় তারা বাড়িঘরে ডাকাতি করতো বলে জানা যায়। গ্রেফতার প্রত্যেকে সর্বনিম্ন দুই থেকে সর্বোচ্চ ছয় বছর মেয়াদে কারাভোগ করেছে।

ডাকাত সর্দার হীরাকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে কমান্ডার আল মঈন বলেন, ‘হীরা আগে গার্মেন্টস পণ্য বিক্রি করতেন। পরে ডাকাতি পেশায় জড়িয়ে পড়েন এবং ১০-১২ বছর ধরে ডাকাতি করে আসছেন। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বেশ কয়েকটি বাস ডাকাতির ঘটনা তার নেতৃত্বে সংঘটিত হয়েছে। প্রত্যেকটি পরিবহনে ডাকাতিতে তিনি নিজে সশরীরে অংশগ্রহণ করেন। ডাকাতির সময় তিনি পরিবহনে উঠে প্রথমে বাস স্টাফদের এবং যাত্রীদের মারধর করে ভয় দেখাতেন। পরে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করতেন এবং বাকিরা যাত্রীদের কাছ থেকে নগদ অর্থ, মোবাইল এবং স্বর্ণালঙ্কার লুট করতো। তার নামে দেশের বিভিন্ন থানায় ডাকাতিসহ অস্ত্র আইনে মোট সাতটি মামলা রয়েছে বলে জানান র‌্যাবের এই পরিচালক।

বিভি/এসএইচ

বিভি/এসএইচ/এনএ

মন্তব্য করুন: