• NEWS PORTAL

  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিয়ে তরুণ-তরুণীদের নিঃস্ব করছে যে দম্পতি (ভিডিও)

প্রকাশিত: ০১:২২, ২৫ মে ২০২৩

ফন্ট সাইজ

থানা পুলিশ-আইন-আদালত যেন দুধ ভাত তাদের কাছে।একাধিকবার গ্রেফতার হওয়ার পরও থেমে নেই প্রতারণা। জামিনে মুক্ত হয়ে যেন আরও দ্বিগুন উৎসাহে চালান চাকরি দেয়া আশ্বাসে তরুণ-তরুণীদের কাছ থেকে টাকা হাতানোর ব্যবসা। তাই গ্রেপ্তার-পুলিশ এসব নিয়ে দম্ভোক্তিও করেন বিএলার্ট সিকিউরিটি কোম্পানির এমডি আনোয়ারা খানম আলো।

প্রকৃত নাম আনোয়ারা খানম আলো হলেও কখনও তিনি হয়ে যান আফরিন আক্তার আলো। সেই সঙ্গে নিজেকে পরিচয় দেন মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী। নাম-পরিচয় আর যাই হোক- তার কাজই যেন সহজ-সরল বেকার যুবক-যুবতীদের সঙ্গে প্রতারণা করা। স্বামী রেজাউল হক ও কয়েকজন সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে রাজধানীর উত্তরার আযমপুরের কাঁচাবাজার এলাকায় হাসান টাওয়ারে চাকরির নামে প্রতারণার স্বর্গরাজ্য গড়েছেন তারা।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ- প্রতারণার ফাঁদে ফেলা থেকে শুরু করে প্রতারণার পর বেকারদের ভয়ভীতি দেখানো, সবই প্রকাশ্যে হয়।তবুও এই চক্রের লাগাম টানা যাচ্ছে না। ফলে বেকার যুবক-যুবতীরা সাবলম্বী হওয়ার আশায় এখানে এসে আরও নিঃস্ব হচ্ছেন। সম্ভ্রমহানী চেষ্টার অভিযোগ করেছে এক ভুক্তভোগী।

অনুসন্ধানে জানা যায়-চক্রটি ফেসবুকে চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে বেকারদের প্রলুব্ধ করে নিজেদের ডেরায় আনে। প্রথমে চাকরি প্রত্যাশী কেউ মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তখন জানানো হয়-চাকরি করতে কোনো টাকা জমা দিতে হবেনা । উল্টো মাস শেষে ২০-৩০ হাজার টাকা বেতনের আশ্বাস।পরে যখন চাকরির জন্য কেউ তাদের অফিসে আসে- তখনি শুরু হয় তাদের মূল প্রতারণা। থাকা-খাওয়ার জন্য টাকা, চাকুরির জামানত হিসেবে টাকাসহ নানান কৌশলে যার থেকে যা পারে সে অনুযায়ী টাকা বাগিয়ে নেয় তারা।কিন্তু টাকা নেওয়ার পর মাসের পর মাস চলে গেলেও চাকরি আর মেলে না।ততক্ষণে ভুক্তভোগীরা বুঝে যান- তারা প্রতারণার শিকার।কিন্তু জামানত হিসেবে দেওয়া টাকাও আর ফেরত পান না। দুয়েকজন কপাল গুনে নানান চেষ্টায় হয়তো কিছু টাকা উদ্ধার করেন, তবে অধিকাংশই বাড়তি ঝামেলা এড়াতে অভিযোগ করেন না।

ভুক্তিভোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে বাংলাভিশনের টিম সরাসরি যাই বিএলার্ট নামের এই কোম্পানীর অফিসে।আমাদের উপস্থিতি টের পেয়েই কৌশলে বেরিয়ে যান প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান রেজাউল হক।তার স্ত্রী তথা প্রতিষ্ঠানটির এমডি আনোয়ারাও পালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন।কিন্তু ক্যামেরার সামনে পড়ে পালাতে পারেননি। পরে বেশ কিছুক্ষণ সাফাই গেয়ে নিজেদেরকে নির্দোষ দাবি করেন তিনি।

প্রতারনার সব অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে আমাদের সঙ্গে কথা বলছিলেন আনোয়ারা।এই অবস্থায় দুজন ভুক্তভোগী এসে নিজেদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ তুলে ধরেন। পরে তাদের টাকা ফেরত দেন।

অভিযোগ রয়েছে-চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে তরুণীদেরকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে অশ্লীল ভিডিও ধারণ করে তা দিয়ে ব্ল্যাকমেইলও করে তারা।যদিও সামাজিক মর্যাদাহানির ভয়ে ভুক্তভোগীরা কেউ মুখ খুলতে চায় না বলে দাবি প্রতারিতদের।

তবে এসব অপকর্ম চালিয়ে যেতে থানা পুলিশকেও টাকা দেন বলে অকপটে স্বীকার করেছেন এই নারী। যদিও তা অস্বীকার করেছে থানা পুলিশ।

এদিকে,আমাদের উপস্থিতি টের পেয়ে প্রথমে পালিয়ে যেতে চানপ্র তিষ্ঠানের কর্তারা।পরে কৌশলে আমাদেরকে এমডির রুমে অবরুদ্ধ রেখে চাঁদাবাজ সাজিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনাও করেন এই আনোয়ারা খানম আলো। যদিও ওই প্রতিষ্ঠানে ঢোকার আগেই আমরা উত্তরা বিভাগের উপ-কমিশনারকে অনুসন্ধানের বিষয়ে অবহিত করেছিলাম।


২০২১ সালের অক্টোবরে এবং ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে র‌্যাবের হাতে দুই দফা গ্রেফতার হয়েছিলেন রেজাউল-আনোয়ারা দম্পতি। কিন্তু জামিনে বেরিয়ে আবারও একই প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। আবারও ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন।

তবে এই ধরণের প্রতারণা থেকে রেহাই পেতে সবাইকে সচেতন হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন এই কর্মকর্তা। সেই সঙ্গে ভুক্তভোগীদেরকে থানায় অথবা র‌্যাবের কাছে অভিযোগ জানানোর পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

এই প্রতারক চক্রকে অচিরেই আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন ভুক্তভোগীরা।

বিভি/এজেড

মন্তব্য করুন: