• NEWS PORTAL

  • শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

খেলাপি ‍ঋণ বাড়লেও বেসরকারি ঋণ বিতরণের লক্ষ্য অর্জিত হয়নি কোনো মাস

প্রকাশিত: ১৮:২৭, ১০ জুলাই ২০২৩

ফন্ট সাইজ
খেলাপি ‍ঋণ বাড়লেও বেসরকারি ঋণ বিতরণের লক্ষ্য অর্জিত হয়নি কোনো মাস

দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়লেও ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের কোনো মাসেই বেসরকারি ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি ব্যাংক খাত। সদ্য বিদায়ী এই অর্থবছরে বেসরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ। কিন্তু এই খাতের প্রবৃদ্ধিতে লক্ষ্য করা যাচ্ছে ধারাবাহিক পতন।যদিও এই সময়ে কয়েকটি ব্যাংক বেনামী কোম্পানিতে বিপুল পরিমাণ ঋণ বিতরণ করেছে। এক্ষেত্রে এগিয়ে ছিলো শরীয়াহ্ ভিত্তিক কয়েকটি ব্যাংক। 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত মে মাসে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির হার ১১ দশমিক ১০ শতাংশে নেমেছে।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা, ডলার সংকট, মুদ্রা পাচার এবং আমদানি কমে যাওয়ায় দেশে উৎপাদন কমেছে। চলতি অর্থবছরে দেশে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে ৫০ শতাংশের বেশি, যা নতুন কর্মসংস্থান তৈরিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। এ ছাড়া সার্বিকভাবে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ পরিবেশ না থাকায় বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের মে মাসে ১৪ লাখ ৭০ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে বেসরকারি খাতে। ফলে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ঋণের প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ১০ শতাংশ। আগের মাস এপ্রিলে এই প্রবৃদ্ধি ছিল ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ।

সাধারণভাবে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি দুই অঙ্কের ঘরে থাকে। তবে ২০১৯ সালের নভেম্বরে প্রথমবারের মতো তা নেমে যায় ৯ দশমিক ৮৭ শতাংশে। করোনাভাইরাসের প্রভাব শুরুর পর ব্যাপক হারে কমে গিয়ে ২০২০ সালের মে মাসের শেষে প্রবৃদ্ধি নামে ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশে। তবে পরের মাস জুন থেকে তা অল্প অল্প করে বাড়তে থাকে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশ ব্যাংকের করা প্রাক্কলনের চেয়েও কম। চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ঘোষিত মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ। এর আগের অর্থবছর ২০২১-২০২২ এ প্রাক্কলন করেছিল ১৪ দশমিক ৮০ শতাংশ। যদিও প্রাক্কলিত হারের চেয়ে লক্ষ্যমাত্রার অর্জন ছিল অনেক কম।

বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের ব্যাংক খাতে তারল্য সংকট আর অন্য খাত থেকে ঋণ না পেয়ে সরকারের ব্যাংক খাতে ঝুঁকে পড়ার কারণেই বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি কমে যাচ্ছে। এতে দেশের উৎপাদন ও নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বড় ধরণের প্রভাব পড়ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে সরকার ব্যাংক খাত থেকে এক লাখ ২৪ হাজার ১২৩ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নেওয়া হয়েছে ৯৮ হাজার ৮২৬ কোটি টাকা।

ব্যাংকারদের মতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বাজারে টাকা ছাড়ার ফলে নোটের পরিমাণ বাড়ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ১ টাকা বাজারে ছাড়লে তা ৫ গুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে। মার্চে ভোক্তা মূল্য সূচক ৭ মাসের সর্বোচ্চ বেড়ে ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ হওয়ায় এপ্রিলে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশে নেমে আসে। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে যা ছিল ৬ দশমিক ১৭ শতাংশ। গত বছরের মে মাসে রিজার্ভ ছিল ৪২ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার। তা ২৮ শতাংশ কমে গত মাসে ৩০ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। ডলারের দর বৃদ্ধি, আমদানি-রপ্তানি, বাজারে পন্য সংকট, মূল্যস্ফিতি ও টাকার সরবরাহ সবই একটা অন্যটির সঙ্গে সম্পর্কিত।

প্রসঙ্গত, আসন্ন ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে বাজেটে সরকার ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নিতে চায় ১ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। ৬ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে প্রস্তাবিত বাজেটের প্রাথমিক আকার ধরা হচ্ছে প্রায় ৭ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৫ লাখ কোটি টাকা। ফলে ঘাটতি বাজেট দাঁড়াবে ২ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। সরকার এই ঘাটতি অর্থায়নের জোগান দেবে তিন জায়গা থেকে। 

এর মধ্যে বিদেশ থেকে আসবে ১ লাখ কোটি টাকা, ব্যাংক খাত থেকে নেবে ১ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা, আর সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে ২৪ হাজার কোটি টাকা নেওয়া হবে। অর্থবিভাগের তথ্য অনুযায়ী, আগামী অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি মেটাতে ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে চলতি অর্থবছরের লক্ষমাত্রার তুলনায় প্রায় ২৮ শতাংশ বেশি ঋণ নেবে সরকার।

এসব বিষয়ে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া মানে বাজারে টাকা ছাড়া, যা মুদ্রাস্ফীতি ও লেনদেন ভারসাম্যের (বিওপি) ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। অর্থায়ন কমে যায় বেসরকারি খাতে। ফলে কমে যেতে পারে নতুন কর্মসংস্থান। জনগণের হাতে অতিরিক্ত অর্থ থাকলে পণ্যের চাহিদা তৈরি হবে, যা দাম বৃদ্ধি করবে। বিপুল পরিমাণ অর্থ বাজারে ছাড়লে তা নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সাবেক এই কর্মকর্তা। অর্থের প্রচলন বেড়ে গেলে পণ্য ও পরিষেবার চাহিদা বেড়ে যায়, যার ফলে আমদানিও বাড়ে।

বিভি/এইচএস

মন্তব্য করুন: