• NEWS PORTAL

  • শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

মূলধন সংরক্ষণে ব্যর্থ ১৩ ব্যাংক

প্রকাশিত: ০০:১১, ৯ অক্টোবর ২০২৩

আপডেট: ০০:১৩, ৯ অক্টোবর ২০২৩

ফন্ট সাইজ
মূলধন সংরক্ষণে ব্যর্থ ১৩ ব্যাংক

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) যেসব শর্তে  বাংলাদেশকে ৪৭০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ দিয়েছে তার অন্যতম শর্ত ছিলো ব্যাংকিং সুশাসন। কিন্তু সরকারি বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে মানা হচ্ছে না সেই সব শর্ত। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি হালনাগাদ প্রতিবেদনে জানা গেছে, দেশের সরকারি-বেসরকারি খাতের ১৩টি ব্যাংকের ৩৩ হাজার ৬৬৫ কোটি টাকা মূলধন ঘাটতি রয়েছে। 

ব্যাংকখাত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, নিয়ম অনুযায়ী ঋণ মন্দ হলে নির্দিষ্ট হারে অনুপাতহারে নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণ (প্রভিশন) ও অতিরিক্ত মূলধন রাখতে হয়, যার বাধ্যবাধকতাও রয়েছে। কিন্তু ১৩টি ব্যাংক সেই অনুপাতে মূলধন সংরক্ষণ করতে পারেনি। 

ব্যাংকগুলো হলো- রাষ্ট্রমালিকানাধীন পাঁচটি সোনালী, জনতা, রূপালী, অগ্রণী এবং বেসিক ব্যাংক। বিশেষায়িত দুটি বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। বেসরকারি খাতের ছয়টি ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশ কমার্স, আইসিবি ইসলামিক, বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক, সিটিজেন ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক ও পদ্মা ব্যাংক। 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত পাঁচ ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ১০ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা, বিশেষায়িত দুটি ব্যাংকের ১৭ হাজার ৯২৭ কোটি টাকা, বেসরকারি খাতের ৬ ব্যাংকের ঘাটতি ৫ হাজার ১৮৮ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী যে ব্যাংকের খেলাপি বা মন্দ ঋণ যত বেশি, ওই ব্যাংককে ততবেশি মূলধন রাখতে হয়।

ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, মূলধন ঘাটতির চিত্রই বলে দিচ্ছে ব্যাংক খাত খারাপের দিকে যাচ্ছে, খেলাপি ঋণ বাড়ায় এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এই চিত্র পরিবর্তন করতে হলে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে চিহ্নিত করে একীভূত করতে হবে। পাশাপাশি সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকগুলোর জন্য পৃথক নীতিমালা করতে হবে। সরকারি ব্যাংকের নীতিমালা বাস্তবায়ন করবে সরকার আর বেসরকারি ব্যাংকের নীতিমালা বাস্তবায়ন করবে ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ।   

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৩ সালের জুন শেষে শেষে অগ্রণী ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ৩ হাজার ৭৬৮ কোটি টাকা, বেসিক ব্যাংকের ২ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা, জনতা ব্যাংকের ২ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা, রূপালী ব্যাংকের ২ হাজার ২৩০ কোটি টাকা এবং সোনালী ব্যাংকের ঘাটতি ১০ কোটি ৬১ লাখ। সরকারি খাতের বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ঘাটতি সবচেয়ে বেশি ১৫ হাজার ৫৪১ কোটি টাকা ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের (রাকাব) ঘাটতি ২ হাজার ৩৮৬ কোটি টাকা। এ ছাড়া বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ঘাটতি ১ হাজার ৩১৪ কোটি টাকা, বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংকের প্রায় ৮৮ কোটি টাকা, সিটিজেন ব্যাংকের ঘাটতি ৯৭ কোটি ১০ লাখ টাকা, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের ১ হাজার ৮১২ কোটি টাকা, ন্যাশনাল ব্যাংকের ১ হাজার ৩৭৯ কোটি টাকা। নানা অনিয়মের মধ্যে দিয়ে চলতে থাকা সাবেক ফারমার্স বা বর্তমানে পদ্মা ব্যাংকের ঘাটতি ৪৯৭ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের  মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক জানিয়েছেন, আইএমএফ দেয়া শর্তগুলোর বেশির ভাগই পুরণ করা হয়েছে। আমরা দুটি শর্ত পুরণ করতে পারিনি। উনারা বিষয়টি জানেন। তারা প্রতিনিয়তই আমাদের কার্যক্রম মনিটরিং করছে। 

এর আগে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশ ব্যাংকে বেশকিছু শর্ত দিয়েছে তার মধ্যে অন্যতম শর্ত হলো- বাজার ভিত্তিক সুদ হার নির্ধারণ, বিপিএম৬ অনুযায়ী রিজার্ভের প্রতিবেদন প্রকাশ, ডলারের বাজার ভিত্তিক বিনিময় হার নির্ধারণ এবং ব্যাংকগুলোর আর্থিক স্থিতিশীলতা পূরণ করা।

ব্যাসেল গাইডলাইন অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোর ঋণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদও বাড়ে। ঋণের মান অনুযায়ী ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ নির্ণয় করা হয়। ভালো ঋণের বিপরীতে ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ কম হিসাব করা হয়। আবার খারাপ বা খেলাপি ঋণের বিপরীতে ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের পরিমাণ বেড়ে যায়। এই ধরনের সম্পদকে কেন্দ্র করে কোনো ব্যাংক কি পরিমাণ মূলধন রাখবে তা নির্ণয় করা হয়। 

ব্যাসেল-৩ অনুযায়ী ঝুঁকি এড়াতে একটি ব্যাংকের সম্পদের ১০ শতাংশ মূলধন সংরক্ষণ করতে হয়। এর সঙ্গে আপদকালীন সুরক্ষা মূলধন (ক্যাপিটাল কনজারভেশন বাফার-সিসিবি) হিসেবে আরও আড়াই শতাংশ মূলধন রাখার বিধান করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বিভি/এইচএস

মন্তব্য করুন: