• NEWS PORTAL

  • শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

ফ্লোরপ্রাইস উঠলেও পুরনো চেহারায় পুঁজিবাজার

প্রকাশিত: ১৯:৩২, ২১ জানুয়ারি ২০২৪

ফন্ট সাইজ
ফ্লোরপ্রাইস উঠলেও পুরনো চেহারায় পুঁজিবাজার

‘ফ্লোরপ্রাইস’ নামক বিধান প্রত্যাহার করা হলেও কাঙ্খিত ফলাফল আসেনি পুঁজিবাজারে। আগের মতোই লেনদেন ও সূচক দুটোই কমেছে। আজ লেনদেন শুরুর প্রথম ১০ মিনিটেই সূচকের পতন ঘটেছে ২৪০ পয়েন্ট। তখন সূচক দাঁড়িয়েছে ছিলো ৬ হাজার ১২৪ পয়েন্টে। আর দিনে শেষে সূচক ৯৬ পয়েন্ট কমে ৬২৪০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। 

এমন পরিস্থিতিতে ফ্লোরপ্রাইস প্রত্যাহারের কারণে যাতে বাজারে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে সেজন্য স্টক ডিলারদের ১ কোটি টাকা করে শেয়ার ক্রয়ের পরামর্শ দিয়েছেন পুঁজিবাজারের শীর্ষ ব্রোকারহাউজগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন সিইও ফোরাম।

সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস শুরুর আগে এক ভার্চুয়াল সভায় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সিইওরা। 

বৈঠক শেষে ইবিএল সিকিউরিটিজের সিইও ছায়েদুর রহমান বলেন,  আজকে ৩০ জন শীর্ষ ব্রোকার হাউজের সিইও যুক্ত ছিলেন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, আমরা সবাই ডিলার অ্যাকাউন্টে ১ থেকে ৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবো। ডিলার অ্যাকাউন্ট থেকে কোনো শেয়ার বিক্রি করব না। বিনিয়োগকারীদেরকে আমরা ইতিবাচকভাবে বোঝানোর চেষ্টা করবো। যে সকল শেয়ারের ক্রেতা থাকবে না সেখানে বিক্রির আদেশ বসানো হবে না। ট্রেডারদের এ বিষয়ে সতর্কতা আবলম্বন করতে বলা হবে। বৈঠকে উপস্থিত সবাই এক মত হয়েছেন যে, এই অবস্থায় পুঁজিবাজারকে গতিশীল করার জন্য সবার জায়গা থেকে সহযোগিতা করবেন।

তিনি আরও বলেন, পুঁজিবাজারের এ প্রেক্ষাপটে প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা নতুন করে বিনিয়োগে যাচ্ছে। ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে চাই, যাতে বাজার এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি পায়। তাই বাজার নিয়ে উদ্বেগের তেমন কিছু নেই। শুধু ফ্লোরপ্রাইস প্রত্যাহারের কারণে যাতে বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত না হন, বাজারে বিক্রির চাপ তৈরি না হয় সে দিকে সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে।

ফ্লোরপ্রাইস প্রত্যাহারের পর সাপোর্ট না দিলে বিনিয়োগকারীদের নিয়ে কর্মসূচি দেওয়ার হুশিয়ারি দিয়ে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক মামুন হোসেন শামীম এক ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়ে লেখেছেন, “দীর্ঘ দেড় বছর পর পুঁজিবাজারের ফ্লোর, তোলা হয়েছে। এরপরও ৯৬  ইনডেক্স মাইনাস হওয়া দুঃখজনক। যা স্পষ্ট পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের ব্যর্থতা। আমাদের কথা দিয়েছেন সাপোর্ট দিবেন। এখন প্রতারণা করলে, সমগ্র বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের সাথে নিয়ে কর্মসূচি দিব।”    

এবিষয়ে পেইজে দেওয়া নম্বরে কল করা হলে শুকুরুল্লাহ (৩০) নামে একজন বলেন, আমার বাড়ি নোয়াখালী জেলায়। আমি পেশায় একজন গরুর খামারি। শেয়ারবাজারে আমার কোনো শেয়ার নেই। এমনকি আমার পরিবারের কোনো সদস্যেরও শেয়ারবাজারে কোনো অ্যাকাউন্ট নেই। প্রতিবেদক তাঁর নাম্বার ব্যবহার করে এমন ফেসবুক পোস্টের বিষয়ে শুকুরুল্লাহকে জানালে তিনি এবিষয়ে থানা জিডি করতে যাবেন বলে জানান।    

এদিকে পুঁজিবাজার উন্নয়নে পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছে, পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী জাতীয় ঐক্য ফাউন্ডেশন। বিএসইসি ৫ দফা দাবি জানিয়েছে। রবিবার ২১ জানুয়ারি সংগঠনের সভাপতি মো. রুহুল আমিন এই দাবি জানান। 

পুঁজিবাজারের স্থায়ী স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের লক্ষ্যে বর্তমান প্রেক্ষাপট থেকে উত্তোরণে তারল্য প্রবাহ দ্রুত বাড়াতে হবে। এজন্য বিএসইসিকে কমপক্ষে ৫০ হাজার কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দের ব্যবস্থা করতে হবে।

পুঁজিবাজারের বর্তমান নাজুক অবস্থা থেকে দ্রুত উন্নয়নে বা স্বাভাবিকীকরণের জন্য এনআরবি ব্যাংক ও এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ লিমিটেডের আইপিও আগামী ৬ (ছয়) মাসের জন্য স্থগিত করতে হবে। 

কেননা, চলতি এক মাসের মধ্যেই তিনটি আইপিও‘র মাধ্যমে বিশাল অংকের টাকা বাজার থেকে বের করে নিলে বাজারে বড় ধরণের তারল্য সঙ্কট সৃষ্টি হবে। এর দায় বিএসইসিকেই নিতে হবে।

পুঁজিবাজারের ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের আরো ক্ষতিগ্রস্ত করার লক্ষ্যে বিএসইসি একটি বিশেষ মহলের চাপে ফ্লোর প্রাইস উঠানোর এই নীল নকশার (ষড়যন্ত্র) বাস্তবায়ন দ্রুত তরান্বিত করেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিনিয়োগকারীরা বড় অংকের আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত ও আত্মাহুতি করলে এটার সম্পূর্ণ দায়-দায়িত্ব বিএসইসির উপরই বর্তাবে।

বিনিয়োগকারীদের স্থায়ীভাবে সুরক্ষার জন্য ফোর্স সেল দ্রুত বন্ধ করণের ব্যবস্থা নিতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের বিও অ্যাকাউন্ট ওপেনিং থেকে অদ্যাবধি পর্যন্ত মার্জিন ঋণের বিপরীতে আরোপিত ও অনারোপিত ১০০ শতাংশ সূদ সম্পূর্ণ নি:শর্তভাবে মওকুফ করতে হবে।

বিএসইসি সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলেছিলেন যে, “এমন এক সময়ে ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নেয়া হবে- যখন কোন বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না।” কিন্তু অচিরেই দেখা গেল যে, বিএসইসি একটি বিশেষ স্বার্থান্বেশী মহলের প্ররোচনায় তার প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করে এক ধরণের অপরিপক্ক (হটকারিতা) সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। 

অথচ বিনিয়োগকারীদের পুঁজির নিরাপত্তার জন্যই বিএসইসি কর্তৃক ফ্লোরপ্রাইস আরোপ করা হয়েছিল। কাজেই, বাজারের বর্তমান নাজুক পরিস্থিতি থেকে দ্রুত উত্তোরণে লেনদেন কমপক্ষে ২ হাজার কোটি থেকে ৩ হাজার কোটিতে উন্নীত করতে হবে।

আজ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে মোট ৩৮৬টি কোম্পানির ১৬ কোটি ২৮ লাখ ৬ হাজার ৪৯৯টি শেয়ার ও মিউচ্যুয়ালফান্ডের লেনদেন হয়েছে। ডিএসইতে আজ মোট লেনদেনের পরিমাণ ৫৮৮ কোটি ৮৭ লাখ ৪ হাজার ২১৩ টাকা।

ডিএসই ব্রড ইনডেক্স (ডিএসইএক্স) আগের কার্যদিবসের চেয়ে সূচক পয়েন্ট ৯৬.৫০ কমে ৬২৪০.২৫ পয়েন্ট, ডিএস-৩০ মূল্য সূচক ৭.৪৮ পয়েন্ট বেড়ে ২১৩৭.১৯ পয়েন্ট এবং ডিএসইএস শরীয়াহ সূচক (ডিএসইএস) ১৪.১২ পয়েন্ট কমে ১৩৭৪.১৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। 

লেনদেনকৃত কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ৫৪টির, কমেছে ২৯৬টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৬টি কোম্পানির শেয়ার দর। লেনদেনের ভিত্তিতে (টাকায়) প্রধান ১০টি কোম্পানি হলো-বিডি থাই, অরিয়ন ইনফিউশন, দেশবন্ধু পলিমার, সী পার্ল রিসোর্ট, ব্র্যাক ব্যাংক, বিএসসি, লাফার্জ হোলসেল সিমেন্ট, বীকন ফার্মা, কর্ণফুলি ইন্সুঃ ও বেক্সিমকো ফার্মা।

দর বৃদ্ধির শীর্ষে প্রধান ১০টি কোম্পানি হলো- খান ব্রাদার্স পিপি, বিডি থাই, কোহিনুর কেমিক্যাল, কে অ্যান্ডকিউ, রূপালিলাইফইন্সুঃ, দেশবন্ধুপলিমার, খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং, দেশ জেনারেল ইন্সুঃ, সোনালি আঁশ ও প্রাইম ব্যাংক।

দর কমার শীর্ষে প্রধান ১০টি কোম্পানি হলো- ড্রাগন সোয়েটার, ফারইস্ট লাইফ ইন্সুঃ, লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্স, ন্যাশনাল লাইফ ইন্সুঃ, নূরানী ডাইং অ্যান্ড সোয়েটার, প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল, শেফার্ড ইন্ডাঃ, জাহিন টেক্স, নরদার্ন জুট ও তমিজ উদ্দিন টেক্সটাইল।

এদিকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স সমন্বয় করা হয়েছে। সমন্বিত সূচকে নতুন করে ১৬টি কোম্পানি যুক্ত হয়েছে। আর এই সূচক থেকে বাদ পড়েছে ৮৩টি কোম্পানি। সমন্বিত সূচকটি রোববার (২১ জানুয়ারি) থেকে কার্যকর হয়েছে। এবার ডিএসই ব্রড ইনডেক্স ডিএসইএক্সের তালিকা থেকে ছিটেকে গেছে ১৫টি ব্যাংক।

সমন্বয়ের পর ডিএসইএক্স সূচকে যুক্ত হওয়া কোম্পানিগুলো হলো-লিগ্যাছি ফুটও্যয়ার, ডেফোডিল কম্পিউটার্স, তশরিফা ইন্ডাষ্ট্রিজ, ইমাম বাটন, জাহিন স্পিনিং, ইউনাইটেড ইন্সুরেন্স, মেঘনা পেট ইন্ডাষ্ট্রিজ, রেনউইক যজেনশ্বর, জিলবাংলা সুগার, মেঘনা কনডেন্স মিল্ক, নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালস, মিডল্যান্ড ব্যাংক, লিবরা ইনফিউশন, ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ, ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্সুরেন্স এবং চার্টার্ড লাইফ ইন্সরেন্স কোম্পানি।

ডিএসই জানিয়েছে, প্রতি বছর একবার ডিএসএমইএক্স সূচক সমন্বয় করা হয়। আর বছরে দুবার ডিএস-৩০ সূচক ও একবার সমন্বয় করা হয় ডিএসইএক্স সূচক। এ সূচক থেকে ছিটকে পড়া ১৫টি ব্যাংকের প্রয়োজনীয় বাজার মূলধন রয়েছে। কিন্তু কোম্পানিগুলোর শেয়ার ফ্লোর প্রাইসে থাকার কারণে ডিএসইএক্স সূচক থাকার অন্যতম মানদণ্ড স্টক ট্রেডিং বা টার্নওভারের চাহিদা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে কোম্পানিগুলো।

ডিএসই আরও জানিয়েছে, তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ন্যুনতম ৭ কোটি এবং প্রয়োজনীয় টার্নওভার থাকলে একটি কোম্পানিকে বছর শেষে ডিএসইএক্স সূচকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সেই মানদণ্ড বিবেচনায় ১৬টি নতুন কোম্পানিকে ডিএসইএক্স সূচকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

গত ১৮ জানুয়ারি পুঁজিবারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ফ্লোরপ্রাইস প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়। দেশের পুঁজিবাজারের ইতিহাসে শেয়ারের দর পতন ঠেকাতে এর আগে দু’বার ফ্লোরপ্রাইস নামক বিধান জারি করেছিলো বিএসইসি। 
 

বিভি/এইচএস

মন্তব্য করুন: