• NEWS PORTAL

  • শনিবার, ০৪ মে ২০২৪

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

সুইফট লেনদেন বন্ধ

রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের বিলিয়ন ডলার বাণিজ্যে ধাক্কা

প্রকাশিত: ০০:২৩, ১৩ মার্চ ২০২২

আপডেট: ১৬:০২, ১৩ মার্চ ২০২২

ফন্ট সাইজ
রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের বিলিয়ন ডলার বাণিজ্যে ধাক্কা

ফাইল ছবি

রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যেকার চলমান যুদ্ধের কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র পশ্চিমা দেশগুলো আর্থিক লেনদেনের বার্তা আদান-প্রদানকারী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান সুইফট থেকে রাশিয়া ও বেলারুশের কয়েকটি ব্যাংকের লেনদেন বন্ধ করে দিয়েছে। এতে রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের চলমান প্রায় এক বিলিয়ন ডলারের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে বড় ধরনের বাধার মুখে পড়তে যাচ্ছে। 

জানা গেছে, বাংলাদেশে গমের চাহিদার সর্বোচ্চ ৭০ লাখ টনের মধ্যে ৩৫ লাখ টন আসছে রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে। এছাড়া তুলা, গম, ভুট্টা, সরিষা, মসুর ডাল আমদানি হচ্ছে এই দেশ দুটি থেকে। সুইফট লেনদেন  বন্ধ করায় রাশিয়া থেকে এসব আমদানি কার্যক্রম বন্ধের আশঙ্কা রয়েছে। নিত্যপণ্যের বাজারে চলমান উত্তাপ তার ওপর নতুন করে আমদানি সংকট দেখা দিলে দাম আরো বেড়ে যেতে পারে। তবে গত কিছুদিন ধরে উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে এমনিতেই রাশিয়া ও ইউক্রেনের থেকে  বাংলাদেশে পণ্য আমদানি কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। মূল্য বৃদ্ধি এবং পরিবহন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় উভয় দেশের ব্যবসায়ীরা এটি করতে বাধ্য হয়েছেন। বন্ধ রাখা হয়েছে পণ্যের এলসি ও শিপমেন্টও। এ অবস্থায় রাশিয়ার ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে সুইফট বন্ধ হওয়ায় বাংলাদেশের বাণিজ্যে চ্যালেঞ্জ তৈরি হতে পারে। একইসঙ্গে বড় আর্থিক ক্ষতির মুখেও পড়তে পারেন দেশের তৈরি পোশাকখাত সহ অন্যান্য আমদানিকারকরা। 

এদিকে শনিবার (১২ মার্চ) থেকে সুইফট রাশিয়া ও বেলারুশের সাথে লেনদেন বন্ধ করে দিয়েছে। এতে দুই দেশের ব্যাংকগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর সরাসরি আর কোনো লেনদেনের পথ আপাতত খোলা নেই।

তবে বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই বলে জানিয়েছেন ব্যাংকিং খাত সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, বাংলাদেশ থেকে রাশিয়ায় রফতানির ৮০ ভাগ আর্থিক লেনদেন হয় সিঙ্গাপুর ও হংকংয়ের ব্যাংকের মাধ্যমে। তবে সরকারি প্রকল্পের অবস্থা বিষয়ে জানতে আরও অপেক্ষা করতে হবে।

বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল। তিনি বাংলাভিশন ডিজিটালকে বলেন, রাশিয়া আমাদের পোশাক রফতানির জন্য একটি নতুন বড় বাজার। এখানে আমাদের তৈরি পোশাকের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। গেল বছরে আমরা প্রায় ৮০০ মিলিয়ন ডলার রফতানি করেছি। যা এবছর প্রায় ১ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে বলে আমরা আশা করেছিলাম। এমতাবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা যেহেতু রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ ও সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টারব্যাংক ফিনান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশনে (সুইফট) লেনদেন  বন্ধ করে দেওয়া সেখান থেকে অর্ডার নেওয়া ও শিপম্যান্টের অপেক্ষায় থাকা পণ্য ডেলিভারি বন্ধ রয়েছে। যাতে ব্যবসায়ীদের বড় ধরনের ক্ষতি সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য আমাদের পৃথক গেটওয়ে দ্রুত ব্যবহার করতে হবে। যাতে দুই দেশের ব্যবসায়ীরা তাদের লেনদেন চালিয়ে যেতে পারেন।  

বিষয়টি নিয়ে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো'র ভাইস চেয়ারম্যান এ.এইচ.এম. আহসান বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে আমাদের রফতানির পরিমাণ খুব একটা বেশি নয়। তবে আগামীদিনে আমাদের একটি বড় বাজার হতে যাচ্ছে রাশিয়া। তথ্য অনুযায়ী ২০২০-২০২১ অর্থবছরে বাংলাদেশে থেকে রাশিয়ায় রফতানির হয়েছে ৬৬ কোটি ৫৩ লাখ ডলারের পণ্য, যার মধ্যে তৈরি পোশাক সবচেয়ে বেশি। আমদানি হয়েছে ৪৬ কোটি ৬৭ লাখ ডলারের পণ্য, যার বেশির ভাগটাই খাদ্য পণ্য। সুইফট লেনদেন বন্ধ হলে এটি বাঁধাগ্রস্ত হবে।

সুইফট গেটওয়ে বন্ধ থাকায় বাংলাদেশ এখন কিভাবে রাশিয়ার সঙ্গে লেনদেন করতে পারে বিষয়টি জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বাংলাভিশন ডিজিটালকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে রাশিয়ার যেসব ব্যাংকের সঙ্গে সুইফট তাদের লেনদেন বন্ধ করে দিয়েছে সেগুলোর সঙ্গে আপাতত এলসি খোলা বন্ধ রাখা হয়েছে। 

পাশাপাশি বাংলাদেশে কর্মরত রাশিয়ান কর্মীদের বেতন কিভাবে দেওয়া হবে সে বিষয়টি জি টু জি বা সরকার টু সরকারের বিষয়। যদি অন্য কোন নির্দেশনা আসে বা অন্য কোন ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন করার জন্য আমাদেরকে অনুরোধ করে তখন আমরা সেই ব্যবস্থা নেব। এক্ষেত্রে আমরা যেমন চীন ও মিয়ানমারের পথ অনুসরণ করতে পারি। তবে বিষয়টি নিয়ে আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে রুশ সরকারের অনুমোদনের জন্য পাঠিয়েছি। যদি তারা অনুমোদন দেয় সে ক্ষেত্রে আমরা ওইসব গেটওয়ে ব্যবহার করবো। 

তবে আপাতত রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম ভিটিবি ব্যাংক, ব্যাংক অতক্রিতিয়ে, নোভিকম ব্যাংক, প্রমসিয়াজ ব্যাংক, ব্যাংক রোশিয়া, সভকম ব্যাংক এবং ভেনশেকনম ব্যাংক বা ভিইবি ব্যাংকের লেনদেন ও এলসি বন্ধ রয়েছে। তবে রাশিয়ার সব ব্যাংকগুলোকে কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়নি।

জানা গেছে, দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের অর্থ রাশিয়ার ১২টি ও বেলারুশের দুই ব্যাংকের মধ্যে এতোদিন অর্থ লেনদেন হয়ে আসছিলো। ব্যাংক ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ফরেন ইকোনমিক অ্যাফেয়ার্স (ভিইবি) নামে রাশিয়ার ব্যাংকটি কয়েকদিন আগে সুইফট সিস্টেম ব্যবহার করে আপাতত তাদের সঙ্গে লেনদেন করতে নিষেধ করে বাংলাদেশ ব্যাংককে একটি বার্তা পাঠায়। যে কারণে রাশিয়ার আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় চলমান রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ও বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ প্রকল্প বাস্তবায়নের কিছুটা ধীর গতির হতে পারে। প্রসঙ্গত, রূপপুর প্রকল্প ৯১ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে রাশিয়া। যা আগামী ২৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারিতে উৎপাদনে যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এছাড়াও বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট প্রকল্পের কাজও করছে রাশিয়ার একটি প্রতিষ্ঠান। 

বিভি/এইচএস

মন্তব্য করুন: