পুঁজিবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব বিবেচনাযোগ্য: পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী

অপ্রদর্শিত অর্থ (কালো টাকা) আসন্ন ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে অর্থনীতির মূল স্রোতে আনার জন্য পুঁজিবাজারের বিনিয়োগের প্রস্তাব বিবেচনাযোগ্য বলে মনে করেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম।
বুধবার (১৫ জুন) পুঁজিবাজারের প্রেক্ষিতে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেট শীর্ষক এক আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ) ও ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিষ্টস ফোরাম (সিএমজেএফ) যৌথভাবে এই আলোচনার আয়োজন করে। সিএমজেএফের সাধারণ সম্পাদক আবু আলীর সঞ্চালনায় রাজধানীর পুরানা পল্টনে সিএমজেএফ অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত এই আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন সিএমজেএফ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। এতে মূল প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন বিএমবিএর প্রেসিডেন্ট মোঃ ছায়েদুর রহমান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, সরকার পুঁজিবাজারের উন্নয়নে খুবই আন্তরিক। তিনি নিজেও চান, এই বাজার আরও ভাল চলুক, বড় কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে আসুক, এসব কোম্পানিতে জনগণের অংশীদারিত্ব বাড়ুক। পাশপাশি কালো টাকা বিনিয়োগের বিষয়টিকে সমর্থন করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এসব টাকা অর্থনীতির মূলধারার বাইরে থাকলে কোনো লাভ হয় না। বরং এগুলোকে অর্থনীতির মূলধারায় নিয়ে আসতে পারলে দেশের জন্য তা মঙ্গলজনক।
মূল প্রস্তাবনায় বিএমবিএর প্রেসিডেন্ট মোঃ ছায়েদুর রহমান ৫ শতাংশ কর দিয়ে শুধু পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের মাধ্যমে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ার সুপারিশ করেন। তিনি বলেন, এতে কালো টাকা অর্থনীতির মূল ধারায় যুক্ত হবে এবং পুঁজিবাজারকে আরও গতিশীল হতে সাহায্য করবে। কালো টাকা অর্থনীতির মূল ধারার বাইরে থাকলে তা নানা অপরাধমূলক কাজে ব্যবহারের আশংকা থেকে যায়।
তিনি বলেন, তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হারের ব্যবধান সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে কমপক্ষে ১০ শতাংশ নির্ধারণের দাবি জানান। দেশি-বিদেশি বড় ও লাভজনক কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে আগ্রহী হবে।
মোঃ ছায়েদুর রহমান বলেন, বড় উদ্যোক্তারা নানা কারণে পুঁজিবাজারে আসতে তেমন আগ্রহী নন। এজন্য প্রয়োজন ভাল আর্থিক প্রণোদনা। অতীতে তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহারে ১০ শতাংশ ব্যবধান ছিল। কিন্তু কয়েক বছর আগে তা কমিয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। আগামী অর্থবছরের ঘোষিত বাজেটে তালিকাভুক্ত কোম্পানির পাশাপাশি অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির কারহারও আড়াই শতাংশ কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। তাতে এই দুই ধরনের কোম্পানির কর হারের ব্যবধান সাড়ে ৭ শতাংশই থেকে যাচ্ছে। এটি ভাল কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে আসতে নিরুৎসাহিত করবে। কারণ একটি কোম্পানি তালিকাভুক্ত হলে অনেক কমপ্লায়েন্স পরিপালন করতে হয়, যার কারণে তাদের ব্যয় বেড়ে যায়। ফলে সাড়ে ৭ শতাংশ কর ছাড় আর আকর্ষণীয় মনে হয় না।
বিএমবিএ প্রেসিডেন্ট করহারের পাশাপাশি তালিকাভুক্ত এবং অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির ভ্যাটের (মূল্য সংযোজন কর) হারেও ব্যবধান রাখার প্রস্তাব করেন। তিনি তালিকাভুক্ত কোম্পানির ভ্যাটের হার ১০ শতাংশ নির্ধারণের দাবি জানান।
তিনি ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের ক্ষেত্রে লভ্যাংশ বিতরণের সময় কেটে রাখা আয়করকে (উৎসে কর) তার চূড়ান্ত কর দায় হিসেবে গণ্য করা, মার্চেন্ট ব্যাংকের কর হার সাড়ে ৩৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে সাড়ে ২৭ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেন।
গত ৯ জুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের জন্য জাতীয় সংসদে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন। এটি বাস্তবায়ন করতে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৭১ কোটি টাকা। ফলে ঘাটতি (অনুদানসহ) বাজেট হবে ২ লাখ ৪১ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা, আর অনুদান ব্যতীত ঘাটতির অঙ্ক দাঁড়াবে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা।
বিভি/এইচএস
মন্তব্য করুন: