• NEWS PORTAL

  • সোমবার, ০৬ মে ২০২৪

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

অধিকাংশ বিদ্যুৎ কোম্পানির মুনাফা কমেছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৯:১২, ১ নভেম্বর ২০২২

আপডেট: ১৯:৩১, ১ নভেম্বর ২০২২

ফন্ট সাইজ
অধিকাংশ বিদ্যুৎ কোম্পানির মুনাফা কমেছে

ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানিগুলোর সর্বশেষ সমাপ্ত ২০২১-২০২২ হিসাব বছর ব্যবসায়িকভাবে ভালো যায়নি। এ সময়ে অধিকাংশ কোম্পানির নিট মুনাফা পরিমাণে কমেছে। 

বেসরকারি বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর মধ্যে এই তালিকায় রয়েছে ৯টি কোম্পানি। তাদের সমাপ্ত ২০২১-২০২২ হিসাব বছরের আর্থিকপ্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এই তথ্য জানা গেছে। 

বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে- বারাকা পাওয়ার লিমিটেড, বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার লিমিটেড (বিপিপিএল), এনার্জিপ্যাক পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেড (ইপিজিএল), জিবিবি পাওয়ার লিমিটেড, খুলনা পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (কেপিসিএল), শাহজিবাজার পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (এসপিসিএল), সামিট পাওয়ার লিমিটেড ও ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ইউপিজিডিসিএল) নিট মুনাফা কমেছে। একমাত্র কোম্পানি হিসেবে এ সময়ে ডরিন পাওয়ার জেনারেশনস অ্যান্ড সিস্টেমস লিমিটেডের নিট মুনাফা বেড়েছে।

পুঁজিবাজারে বারাকা গ্রুপের তালিকাভুক্ত দুটি কোম্পানি বারাকা পাওয়ার লিমিটেড ও বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার লিমিটেড। এর মধ্যে বারাকা পাওয়ারের সাবসিডিয়ারি হচ্ছে বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার। সর্বশেষ সমাপ্ত ২০২১-২০২২ হিসাব বছরে বারাকা পাওয়ারের নিট মুনাফা হয়েছে ৫০ কোটি ১৪ লাখ টাকা। যেখানে আগের বছরে এ মুনাফা ছিল ৭৪ কোটি ৫৩ লাখ টাকায়। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির নিট মুনাফা কমেছে ৩২ দশমিক ৭৩ শতাংশ। নিট মুনাফা কমলেও কোম্পানিটি আগের হিসাব বছরের মতোই এবার ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনে সহযোগী কোম্পানির উল্লেখযোগ্য পরিমাণ লোকসান বাড়ায় কোম্পানিটির নিট মুনাফা কমেছে।

বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ারের নিট মুনাফা ২০২১-২০২২ হিসাব বছর শেষে ২১ কোটি ৫৩ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। যেখানে আগের হিসাব বছরে এ মুনাফা ছিল ৬১ কোটি ৯২ লাখ টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির নিট মুনাফা কমেছে ৬৫ দশমিক ২৩ শতাংশ। বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ লোকসান হওয়ার কারণে কোম্পানিটির নিট মুনাফা কমেছে। আগের হিসাব বছরে সাড়ে ১২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিলেও ২০২১-২০২২ হিসাব বছরে ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে কোম্পানিটি।

এবিষয়ে বারাকা পাওয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফাহিম আহমেদ চৌধুরী বলেন, বিদ্যুৎ বিক্রি থেকে সর্বশেষ সমাপ্ত হিসাব বছরে আমাদের আয় কিন্তু বেড়েছে। যদিও ডলারের বিনিময় মূল্যে অস্থিরতার কারণে এইচএফও আমদানিতে ডলারপ্রতি ১০-১৫ টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে। মূলত এ কারণেই আমাদের মুনাফা কমে গেছে।

এনার্জিপ্যাক পাওয়ার জেনারেশনের মূল ব্যবসা ট্রান্সফরমার তৈরি ও সাবস্টেশনের ইপিসি কন্ট্রাক্ট হলেও সাবসিডিয়ারি কোম্পানির মাধ্যমে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবসাও রয়েছে তাদের। সর্বশেষ সমাপ্ত ২০২১-২২ হিসাব বছরে কোম্পানিটির নিট মুনাফা হয়েছে ৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা। যেখানে আগের বছরে নিট মুনাফা ছিল ৩৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির নিট মুনাফা কমেছে ৮১ দশমিক ২৫ শতাংশ। বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেনজনিত লোকসানের কারণে কোম্পানিটির নিট মুনাফা কমেছে। কোম্পানিটি আগের বছরের মতো এবারো ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশের ঘোষণা দিয়েছে।

সর্বশেষ সমাপ্ত ২০২১-২২ হিসাব বছরে জিবিবি পাওয়ারের নিট মুনাফা কমেছে ৩২ দশমিক ৪৬ শতাংশ। আলোচ্য হিসাব বছরে কোম্পানিটির নিট মুনাফা হয়েছে ১০ কোটি ২৮ লাখ টাকা। যেখানে আগের হিসাব বছরে এ মুনাফা ছিল ১৫ কোটি ২২ লাখ টাকা। বিদ্যুৎকেন্দ্রে বড় ধরনের মেরামত কার্যক্রমের প্রভাবে কোম্পানিটির নিট মুনাফা কমেছে। আগের হিসাব বছরে সাড়ে ১১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিলেও সর্বশেষ সমাপ্ত ২০২১-২২ হিসাব বছরে মুনাফা কমার প্রভাবে কোম্পানিটি মাত্র ৩ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে।

কেপিসিএলের নিট মুনাফা ২০২১-২২ হিসাব বছর শেষে ১ কোটি ২৯ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। যেখানে আগের হিসাব বছরে কোম্পানিটির নিট মুনাফা ছিল ৩৪ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির নিট মুনাফা কমেছে ৯৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ। মূলত সর্বশেষ সমাপ্ত হিসাব বছরের নয় মাস মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় কোম্পানিটির খুলনা ও যশোরের বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ ছিল। পরবর্তী সময়ে এ বছরের মার্চে ‘নো ইলেকট্রিসিটি নো পেমেন্ট’ শর্তে  দুই বছরের জন্য কেন্দ্র দুটির মেয়াদ বাড়ায় সরকার। বছরের বড় সময় ধরে কেন্দ্র বন্ধ থাকার কারণে কোম্পানিটির নিট মুনাফায় ধস নেমেছে। আগের হিসাব বছরে সাড়ে ১২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিলেও এবার কোম্পানিটি ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশের ঘোষণা দিয়েছে।

সর্বশেষ সমাপ্ত ২০২১-২২ হিসাব বছরে শাহজিবাজার পাওয়ারের নিট মুনাফা কমেছে ৩১ দশমিক ৪৮ শতাংশ। আলোচ্য হিসাব বছরে কোম্পানিটির নিট মুনাফা হয়েছে ৭৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা। যেখানে আগের হিসাব বছরে এ মুনাফা ছিল ১১২ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। মুনাফা কমার কারণে কোম্পানিটির পর্ষদ ২০২১-২২ হিসাব বছরের জন্য ১৬ শতাংশ নগদের পাশাপাশি ৪ শতাংশ স্টক লভ্যাংশের সুপারিশ করেছে। যেখানে আগের বছরে কোম্পানিটি ২৮ শতাংশ নগদের পাশাপাশি ৪ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ দিয়েছিল।

মুনাফা কমার বিষয়ে জানতে চাইলে শাহজিবাজার পাওয়ারের কোম্পানি সচিব ইয়াসিন আহমেদ বলেন, সাবসিডিয়ারি ও সহযোগী কোম্পানির মুনাফা কমার প্রভাবে মূল কোম্পানির আর্থিক ফলাফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। প্রাকৃতিক গ্যাসের কনডেনসেট স্বল্পতার কারণে সাবসিডিয়ারি কোম্পানি পেট্রোম্যাক্স রিফাইনারিতে পুরো সক্ষমতায় উৎপাদন চালানো সম্ভব হয়নি। এছাড়া আমাদের ১৫০ মেগাওয়াট সক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য এ বছরের মার্চে প্রতি ডলার ৮৪-৮৭ টাকা দরে এইচএফও আমদানির বুকিং দেয়া হয়েছিল। এরপরে ডলারের বাজারে অস্থিরতা শুরু হয় এবং আমদানির মূল্য প্রতি ডলার ১১০ টাকা দরে পরিশোধ করতে হয়েছে। এতে আমাদের বড় ধরনের লোকসান হয়েছে, যার প্রভাবে মুনাফা কমেছে বিদ্যুৎ ব্যবসায়।

দেশের বেসরকারি খাতের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ উৎপাদক সামিট পাওয়ারের সর্বশেষ সমাপ্ত ২০২১-২২ হিসাব বছরে ৪১২ কোটি ৯০ লাখ টাকা নিট মুনাফা হয়েছে। এর  আগের বছরে যা ছিল ৫৬০ কোটি ৫২ লাখ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির নিট মুনাফা কমেছে ২৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ। এইচএফওর মূল্যবৃদ্ধি ও মুদ্রার অবমূল্যায়নের কারণে কোম্পানিটির নিট মুনাফা কমেছে। এ কারণে এর আগের বছরে বিনিয়োগকারীদের ৩৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিলেও এবার ২০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে কোম্পানিটি।

ইউনাইটেড পাওয়ারেরও নিট মুনাফা ২০২১-২২ হিসাব বছরে এর আগের বছরের তুলনায় ৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ কমেছে। আলোচ্য বছরে কোম্পানিটির নিট মুনাফা হয়েছে ৯৯৭ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। যেখানে আগের হিসাব বছরে এ মুনাফা ছিল ১ হাজার ৯০ কোটি ৯ লাখ টাকায়। আন্তর্জাতিক বাজারে এইচএফও দাম বাড়ার পাশাপাশি মুদ্রার অবমূল্যায়নের কারণে কোম্পানিটিকে বড় ধরনের লোকসান গুনতে হয়েছে। এতে আলোচ্য হিসাব বছরে কোম্পানিটির নিট মুনাফা কমে গেছে। মুনাফা কমলেও আগের হিসাব বছরের মতো এবারো বিনিয়োগকারীদের জন্য ১৭০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশের ঘোষণা দিয়েছে কোম্পানিটি।

তালিকাভুক্ত সব বিদ্যুৎকেন্দ্রের মুনাফা কমলেও সর্বশেষ সমাপ্ত হিসাব বছরে ডরিন পাওয়ারের নিট মুনাফা বেড়েছে। আলোচ্য হিসাব বছরে কোম্পাটির নিট মুনাফা হয়েছে ১৬৭ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। যেখানে আগের বছরে নিট মুনাফা ছিল ১১৭ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির নিট মুনাফা বেড়েছে ৪২ দশমিক ৬৫ শতাংশ। মূলত সাবসিডিয়ারি কোম্পানি থেকে মুনাফা বাড়ার পাশাপাশি নতুন করে আরেকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসায় এর মুনাফাও মূল কোম্পানির সঙ্গে যোগ হয়েছে। এ কারণে আলোচ্য হিসাব বছরে ডরিন পাওয়ারের মুনাফা বেড়েছে। মুনাফা বাড়লেও সর্বশেষ হিসাব বছরে বিনিয়োগকারীদের জন্য ১২ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে কোম্পানিটির পর্ষদ। যেখানে আগের হিসাব বছরে ১৩ শতাংশ নগদের পাশাপাশি ১২ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ দিয়েছিল। সাবসিডিয়ারি দুই বিদ্যুৎকেন্দ্রের বড় ধরনের মেরামত কার্যক্রমের জন্য স্টক লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে কোম্পানিটি।

বিভি/এইচএস

মন্তব্য করুন: