• NEWS PORTAL

  • শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

বিজিএমইএ সভাপতি শঙ্কা নেই বললেও, ব্যবসায়ীরা সংকটে

প্রকাশিত: ২২:৫৫, ১২ নভেম্বর ২০২২

আপডেট: ১০:৪৩, ১৩ নভেম্বর ২০২২

ফন্ট সাইজ
বিজিএমইএ সভাপতি শঙ্কা নেই বললেও, ব্যবসায়ীরা সংকটে

চলমান ডলার, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও এলসি নিয়ে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতির সঙ্গে ব্যবসায়ীদের মতো মতপার্থক্য রয়েছে। মাত্র ১৩ দিন আগে বিজিএমইএ সভাপতি এই সেক্টরের শঙ্কার কথা বললেও শনিবার (১২ নভেম্বর) রাজধানীতে আয়োজিত আরেকটি সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, গ্যাস বিদ্যুত ও এলসি নিয়ে কোনো সংকট নেই। যদিও তার দাবির বিপরীত মেরুতে পোশাক খাতের অনেক ব্যবসায়ী।

শনিবার (১২ নভেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে ‘মেডইন বাংলাদেশ উইক’ উপলক্ষে বিজিএমইএ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেছেন, গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটের অজুহাতে দেশের ভেতরে ও বাইরে অনেকেই  ক্রেতাদের মধ্যে প্যানিক সৃষ্টি করছে। গ্যাস ও বিদ্যুতের নিয়ে আমাদের কোনো সংকট নেই। আমাদের অনেক ফ্যাক্টরিতে নিজস্ব সোলার ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে যে সংকটের কথা বলা হচ্ছে এটা শুধু আমাদেরই নয়, বৈশ্বিক সমস্যা। সরকারের সঙ্গে এটা নিয়ে আমরা নিয়মিত কথা বলছি। তবে এলসি নিয়ে আমাদের কোনো সমস্যা নেই।  

নাম প্রকাশ না করা শর্তে কয়েকজন গার্মেন্টস কারখানার মালিক জানান, বিজিএমইএ’র নেতারা আমাদের আশ্বস্ত করছেন সরকারের সঙ্গে আলাপ চলছে। কিন্তু কতোদিন এমন আলাপ চলবে? মাস শেষে শ্রমিকদের বেতন দিতে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। আমাদের দ্রুত বিদ্যুৎ-গ্যাস সংকটের সমাধান চাই। এখনো প্রতিদিন আট/নয় ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। আর গ্যাসের সমস্যাতো বহু পুরানো।  

তারা আরও জানান, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী বলেছেন গ্যাসের সিলিন্ডার ব্যবহার করতে। কিন্তু এখন অতিরিক্ত আরও ৮/৯ লাখ টাকা প্রয়োজন। এছাড়া আগামী মাসেই শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোর একটা বিষয় আছে। বর্তমান সংকট পরিস্থিতি আমাদের জন্য মরার ওপর খাড়ার ঘা। 

এদিকে বিজিএমইএ’র প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের এখনও শঙ্কার মধ্যে দিয়ে দিন যাচ্ছে। ডিসেম্বরে কি হয় তা বলা কঠিন। গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটের মধ্যে নতুন করে বৈশ্বিক কারণে অনেক বায়ার তাদের অর্ডার করা পোশাকের ২০ শতাংশের বেশি নিচ্ছেন না। আবার নতুন অর্ডার না থাকায় আমাদের উৎপাদনও কমে গেছে প্রায় ৩০ শতাংশ। এছাড়া ব্যাংকে ডলার সংকটের কারণে কমোডিটি আইটেম মেশিনারি আমদানির জন্য  এলসি খোলায় সমস্যা হচ্ছে। সবকিছু মিলিয়ে পোশাক শিল্প একটি শঙ্কার মধ্যে দিয়েছে যাচ্ছে। তবে তা দীর্ঘস্থায়ী হবে না। 

বৈশ্বিক মন্দা পরিস্থিতির মধ্যে কেন এমন আয়োজন সাংবাদিকরা জানতে চাইলে বিজিএমইএ’র সভাপতি বলেন, বৈশ্বিক এই পরিস্থিতির মধ্যে এমন আয়োজনের উদ্দেশ্য হচ্ছে অর্থনীতিকে আরও চাঙ্গা করা। এই বিজনেস উইকে ৭০০ বিদেশি অতিথি আসবেন। তারা এই দেশে ডলার ও ইউরো খরচ করবেন এতে আমাদের রেমিট্যান্স বাড়বে। পাশাপাশি নতুন রফতানি আদেশও পাওয়া যাবে। 

সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের উত্তরে ফারুক হাসান বলেন, আমাদের দেশের গণমাধ্যমে নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশ হয় বেশি। কিন্তু আমাদের অনেক পজেটিভ নিউজ আছে সেগুলোর খুব একটা ফলাউ করে প্রকাশ করা হয় না। এজন্য তিনি ব্যবসায়ীদেরও দোষারোপ করেন। এ সময় তিনি পোশাক শিল্পের ইতিবাচক নিউজগুলো গণমাধ্যমে বেশি করে প্রকাশের আহ্বান জানান। 

বিজিএমইএ’র সভাপতির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম জানিয়েছেন, দেশের পোশাক শিল্প দীর্ঘদিন ধরেই গ্যাস সংকটের মধ্যদিয়ে যাচ্ছে। নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গ্যাস সংকটের কারণে অনেক কারখানা ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। বন্ধের পথে রয়েছে অনেকগুলো কারখানা। তার সঙ্গে এখন যুক্ত হয়েছে বিদ্যুৎ সংকট। 

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক সার্কুলার জারি করেছে, ব্যাক টু ব্যাক এলসির দায় পরিশোধে একদিন দেরি হলেই এডি লাইসেন্স বা বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী শাখার বাতিলসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরপর ব্যাংকগুলো এলসি করা বন্ধ করে দিয়েছে। এর ফলে ক্রেতারা পেমেন্ট দিচ্ছে না। শিপমেন্ট নিচ্ছে না। আমরাও টাকা পাচ্ছি না এবং এলসির দায়ও পরিশোধ করতে পারছি না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এমন সিদ্ধান্তে আমাদের রফতানিও করতে পারছি না।

গত ৩০ অক্টোবর বিজিএমইএ প্রধান কার্যালয়ে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ উইক এবং ৩৭তম আইএএফ ওয়ার্ল্ড ফ্যাশন কনভেনশন’-এর মিট দ্য প্রেসে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান শিল্প কারখানাগুলোতে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকট এবং ইউরোপে চাহিদা কমায় আগামী দুই মাসে (নভেম্বর-ডিসেম্বর) পোশাক খাতে রফতানি ২০ শতাংশ কমার আশঙ্কার কথা জানান। 

ওই বৈঠকে তিনি বলেন, ২০২১ সালের আগস্ট থেকে চলতি বছরের ২০২২ আগস্ট পর্যন্ত পোশাক শিল্পে টানা প্রবৃদ্ধি হয়েছে। যার ফলে গত অর্থবছরে এ খাত থেকে রফতানি হয়েছে ৪২ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু গত দুই মাসে আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, ক্রয়াদেশ ধাপে ধাপে কমছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অস্থিরতা, মূল্যস্ফীতি এবং খুচরা বাজারে প্রভাবের কারণে যুক্তরাষ্ট্র এবং জার্মানিসহ প্রধান বাজারগুলোতে প্রবৃদ্ধি কমছে।’

বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘বিশ্ব জুড়ে জ্বালানি সংকট চলছে। স্থানীয় পর্যায়ে গ্যাস-বিদ্যুত সংকটের প্রভাব আমাদের পোশাক শিল্পেও পড়েছে। এতে করে শিল্পে ব্যয় বাড়ছে দুইভাবে। বিদ্যুতের অপ্রতুলতার কারণে কারখানাগুলোতে ডিজেল দিয়ে জেনারেটর চালানো হচ্ছে। বেশি সময় জেনারেটর চালানোর কারণে সেগুলো ঘন ঘন বিকল হচ্ছে। এতে শিল্পে উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে। শিল্পে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবরাহের দাবি তোলেন ফারুক হাসান। কিন্তু মাত্র ১৩ দিনের মাথায় তিনিই আমার বলছেন কোনো প্রকট সংকট নেই। 

তার এমন দ্বিমুখী আচরণে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অনেকে। তারা বলছেন, বিজিএমইএ সভাপতি একজন সাবেক আমলা। তিনি তাই আমলাদের মতোই কথাবার্তা বলছেন। সাধারণ ব্যবসায়ী ও কর্মীদের সঙ্গে তার যোগাযোগ নেই। থাকলে তিনি এভাবে অন্ধের মতো কথা বলতে পারতেন না।

বিভি/এমআর

মন্তব্য করুন: